9.7 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

একটি পলাতক তারা ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পারে পৃথিবীকে —কিভাবে?

একটি পলাতক তারা ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পারে পৃথিবীকে —কিভাবে? - the Bengali Times
সংগৃহীত ছবি

এক শ কোটি বছরের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা অত্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। সেটা এতটাই যে, আবাসাযোগ্য হয়ে যেতে পারে পৃথিবী। এর হাত থেকে বাঁচাতে পারে একটা পলাতক নক্ষত্র।

এখন থেকে এক শ বছর কোটি বছর পরে, সূর্যের আকার অনেক বেড়ে যাবে, বাড়বে উজ্জ্বলতাও।

- Advertisement -

তার প্রভাব পড়বে পৃথিবীতেও। পৃথিবীর তাপমাত্রা তখন বেড়ে যাবে হু হু করে। এতে পৃথিবী বাসযোগ্যতা হারাবে। কারণ, তখন অতি উৎতপ্তার কারণে পৃথিবীর সব পানি শুকিয়ে যেতে পারে।

অর্থাৎ পানিহীন হয়ে উঠতে পারে পৃথিবী। তাই, তখন পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে জীবকুল। এ অবস্থা থেকে পৃথিবীকে বাঁচানোর একটাই উপায়—সূর্য থেকে দূরে সরে যাওয়া।
সেটা কি সম্ভব?

এমনিতে সম্ভব নয়।

পৃথিবীর একটা রৈখিক বেগ আছে। এ কারণে পৃথিবী মহাশূন্যে ছুটে যেতে চায়। কিন্তু সূর্যের মহাকর্ষীয় টান সেটাতে বাঁধ সাধে। তাই চাইলেও পৃথিবী সোজা ছুটে মহাশূন্যে হারিয়ে যেতে পারে না। কারণ মহাকর্ষ বল আর রৈখিক গতিশক্তিজিনত বলের মধ্যে ভারসাম্য রয়েছে।

এই ভারসাম্যের কারণেই পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘূরতে থাকে।
তাহলে এক শ কোটি বছর পর সেই ভয়ানক উষ্ণতা থেকে পৃথিবী বাঁচবে কীভাবে?

বিজ্ঞানীরা একটা উপায় দেখছেন। পৃথিবীকে কক্ষপথচূত্য করে আরেকটু দূরের কক্ষপথে স্থাপন করতে হবে। তবেই সূর্যের সেই বাড়তি উত্তাপ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

কিন্তু পৃথিবীকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটি কে করবে?

উত্তর হচ্ছে, আরেকটি নক্ষত্র বা তারা।

এক আকাশে দুটি সূর্যের মতো হয়ে গেল না ব্যাপারটা?

হ্যাঁ, হলো। কিন্তু সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। মহাকাশে অনেক দলছুট বা পলাতক নক্ষত্র আছে। সেগুলো হয়তো অনন্ত মহাবিশ্বে ছুটে বেড়াচ্ছে। সেগুলোর কোনো একটা যদি কাছাকাছি চলে আসে, তাহলে সৌরজগতে একটা মহাকর্ষীয় ধাক্কা হয়তো সেটা দিতে পারবে। এ ধরনের নক্ষত্র এসে সৌরজগতে ঘাঁটি গাড়বে না, পালিয়ে যাবে। তার আগে নাড়িয়ে দিয়ে যাবে সৌরজগতকে।

সেই মহাকর্ষীয় টানে গ্রহগুলো কক্ষপথ থেকে বিচ্যূত হতে পারে। এমনকী পৃথিবীর ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে একই ঘটনা। পৃথিবী বর্তমানে যে কক্ষপথে ঘুরছে, সেখান থেকে সরে গিয়ে হয়তো আরকটু দূরের কক্ষপথে জায়গা করে নেবে। বর্তমানে সূর্য থেকে যে তাপমাত্রা আমরা পাই, সে সময় হয়তো সরে যাওয়ার কারণেই এখনকার মতোই স্থিতিশীল তাপমাত্রা থাকবে পৃথিবীতে।

শুধু পৃথিবী কক্ষপথচ্যূত নয়, এ ধরনের ঘটনায় পৃথিবী হয়তো সূর্যের আকর্ষণ বল ছিন্ন করে মহাকাশে ছুটে চলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা শক্তিসংকটে পড়ব। কারণ পৃথিবীতে সকল শক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উৎস হলো সূর্য।

কিন্তু পৃথিবী যদি সত্যিই আরেকটু দূরে, আরামদায়ক কোনো কক্ষপথে সরে যেতে পারে, তাহলে বাসযোগ্য পৃথিবী টিকে যেতে পারে আরও কয়েক শ কোটি বছর। যদিও এটা ঘটার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবু বিজ্ঞানীরা একটা সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখেছেন। এ নিয়ে করেছেন গবেষণা। আর সেই গবেষণার ফলাফল সাবমিট করেছেন রয়্যাল অ্যাস্টোনমিক্যাল সোসাইটির ‘মানথলি নোটিস’ জার্নালে। সেটা প্রকাশের জন্য মনোনীতও হয়েছে।
এই গবেষণা দলের প্রধান ফ্রান্সের বোর্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ শন রেমন্ড বলেছেন, ‘কয়েক শ কোটি বছর আগে এমন ঘটনা মহাবিশ্বে ঘটেছিল। সেটাও ১০ হাজার অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট দূরে।’ এখানে বলে রাখা জরুরি, ১ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট হলো ১৫ কোটি কিলোমিটার, যা পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের সমান।

গবেষকের ব্যাপারটি যাচাই করার জন্য গবেষক দলটি নক্ষত্র ও গ্রহদের গতিবিধিও প্রকাশ পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন। তারা লক্ষ করেছেন কখনো দলছুট নক্ষত্রগুলি গ্রহদের ১ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট দূরত্বেও চলে আসে।

আর নিবিড় গবেষণার জন্য তাঁরা কম্পিউটারে এ ধরনের সিমুলেশনও করেছেন। তাই একটি দুটি নয়, এ ধরনের প্রায় ১২ হাজার সিমুলেশন তাঁরা পরিচালনা করেছেন। এসব সিমুলেশনে তাঁরা দেখেছেন দূরবর্তী একটা কক্ষপথে যদি ওই সময় পৃথিবীকে সরিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে পৃথিবীতে হয়তো প্রাণধারণ সম্ভব হবে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles