১। আজ আমার মনটাতে আবার বিষণ্ণতা এসে ভীর করেছে। বেশ কিছুদিন ভালো ছিলাম। নিজেকে নানা ভাবে ব্যস্ত রেখেছি। সে ব্যস্ততার মাঝে মনের আনন্দ টুকু বের করে আনার চেষ্টা করেছি। সে চেষ্টাতে আমি সার্থকতা অর্জন করতে পারছি বলে বেশ পুলকিত ছিলাম। খুব আনন্দ পাচ্ছিলাম ভেবে যাক বিষণ্ণতা আমার কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে।
নাহ সে আবার আকস্মিক ভাবে ফিরে এসেছে । কেনো এসেছে ভেবে পাচ্ছি না। আমার জীবনেতো এমন কিছু ঘটে নি যে বিষণ্ণটা লাফাতে লাফাতে আমার কোলে এসে ঝাঁপিয়ে পড়বে । বিনা কারনে আনন্দ না আসলেও বিষণ্ণতা বিনা আমন্ত্রনে বেহায়ার মতো এসে জেকে বসে। এটাও এক ধরনের অসুস্থতা যা কিনা বাইরে থেকে না দেখা গেলেও মানুষের আনন্দটুকু কুড়ে কুড়ে খেয়ে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠে ।
২।
যখন খুব মন দিয়ে লিখতে শুরু করেছিলাম তখন মনে হয়েছিলো আমার কিছু লিখা উচিৎ । মন থেকে একটা তাগিদ অনুভব করতাম লিখার জন্য। কতো লেখা লিখেছি, হাজারো ব্যস্ততাও আমার লেখা বন্ধ করতে পারেনি। কোন একটা ঘটনার পরিপেক্ষিতে নারীদের সমর্থনে লিখতে গিয়ে আমি সত্যিকার অর্থেই মন দিয়ে নারীদের নিয়ে লিখতে শুরু করলাম। বহুদিন নারী অধিকার, নারী নির্যাতন , নারীদের চাওয়া পাওয়া নিয়ে বহু লিখা লেখে ফেললাম। আমার মনে হতো আমার প্রথম এবং শেষ পরিচয় আমি একজন নারী । তারপর কিছু সময় পর আর ভালো লাগলো না একই বিষয়ে এতো লেখা লিখতে। যে প্রেয়না নিয়ে তথাকথিত নারীবাদী লেখা লিখতে শুরু করেছিলাম আবার সেটা কিছু অপ্রিয় ঘটনাতে বন্ধ করে দিলাম।
তারপর মন গেলো রাজনীতির দিকে। রাজনীতি নিয়ে বহু লিখা লিখে ফেললাম। আমি তখন বিশাল রকম ব্যস্ত হয়ে গেলাম রাজনীতি নিয়ে। আমার স্বামীও রাজনৈতিক কলাম লিখেন বিভিন্ন পত্রিকাতে। লিখতে লিখতে এক সময় আমার মনে হোল স্বামী স্ত্রী একই মাঠে একটা বল নিয়ে ছুটাছুটি করার কোন মানে হয় না। বন্ধ করে দিলাম রাজনৈতিক লেখা। এখন যা লিখতে মন চায় তাই লিখি। যে ভাবনা আমাকে তাড়িত করে সেটাই আমার লেখার বিষয় বস্তু হয়ে দাঁড়ায় ।
মাঝে মাঝে বড় বেশী বিষণ্ণতা আমার চারপাশটাকে চেপে ধরে। সে লাফিয়ে বেড়ায় টুনটুনি পাখির মতো হৃদয়ের এডালে সেডালে। তখন আমার সব লেখাই বন্ধ হয়ে যায় । খুব সামান্য কারনেই মাঝে মাঝে মনের ভেতর বিষণ্ণতা এসে বাসা বাঁধে । তখন আমি বুঝতে পারি আমার মনের শক্তি কতোটুকু । কোন রকম দুঃখ কষ্ট কিছুই যেনো সইতে পারি না। চরম একটা বেদনা বোধ আমাকে নির্জীব করে ফেলে। বেদনাকে বার বার বলি বেদনা তুই কাঁদিস না। কিন্তু বেদনা আমার কথা শোনে না। সে শুধু কেঁদেই চলে ।
মনে হয় যদি মানুসিক ভাবে শক্তিশালী কঠিন মনের একজন মানুষ হতে পারতাম। যে কোন কঠিন পরিস্থতি মোকাবেলার করার শক্তি অর্জন করতে পারতাম ,তাহলে জীবনটা হয়তো অনেক সহজ হতো । সামান্য বিষয় নিয়ে ভেঙ্গে পড়াটা মোটেও প্রশংসার ব্যাপার নয় বরং তার উল্টোটাই প্রশংসনীয় । কিন্তু আমি কখনোই এই প্রশংসার জায়গাটাতে পৌঁছাতে পারলাম না। এটাই মনে হয় আমার জীবনের সব চাইতে দুর্বল জায়গা।
টরোন্ট , ক্যানাডা ।