
রাজধানীতে ‘উইমেন্স ওয়ার্ল্ড’ বিউটি পার্লারের ধানমন্ডি শাখার সেবাকক্ষে ছয় মাস আগে গোপন ক্যামেরা বসায় কর্তৃপক্ষ। ওই শাখায় প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ নারী সেবা নিতে যেতেন। সেই হিসাবে এখন পর্যন্ত অন্তত তিন হাজার নারীর অজ্ঞাতে তাদের ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর পার্লারটি থেকে ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার (ডিভিআর) জব্দ করেছে পুলিশ। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেখানে বিপুলসংখ্যক নারীর স্পর্শকাতর ভিডিও পাওয়া গেছে।
এদিকে ঘটনার পর ধানমন্ডি শাখা বন্ধ থাকলেও চালু রয়েছে রাজধানীতে প্রতিষ্ঠানটির অন্য ছয়টি শাখা। গোপনে ভিডিও ধারণের অভিযোগে মামলায় প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর পার্লারের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসলিমা চৌধুরী কণা আলম এবং তাঁর মেয়ে পরিচালক ফারনাজ আলমকে খুঁজছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই শাখায় সাধারণত প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন সেবা নিতে গেলেও বন্ধের দিনগুলোতে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যেত। দিনে ১৫ জনের হিসাবে ছয় মাসে অন্তত ২ হাজার ৭০০ নারীর স্পর্শকাতর ভিডিও ধারণ করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির এমন কর্মকাণ্ড সামনে আসার পর বিভিন্ন মহলে চলছে সমালোচনাও। সেবাগ্রহীতা নারীরা বলছেন, পার্লারে গোপনে ভিডিও ধারণের বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। এরই মধ্যে এসব ভিডিওর অপব্যবহার হয়েছে কিনা, দ্রুত খতিয়ে দেখা উচিত। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার জড়িতদের। পাশাপাশি এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নজরদারি ও জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।
বিউটি পার্লার মালিকদের সংগঠন সার্ভিস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএসওএবি) সহসাধারণ সম্পাদক আলেয়া শারমিন কচি
বলেন, উইমেন্স ওয়ার্ল্ড আমাদের সংগঠনের সদস্য নয়। তবে এটুকু বলা যায়, যেখানে একজন নারী পোশাক পরিবর্তন করবেন, ম্যাসাজ বা রূপচর্চার সেবা দেওয়া হবে, সেখানে ক্যামেরা লাগানোর সুযোগ নেই। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য এ খাত মাঝেমধ্যেই হোঁচট খাচ্ছে।
এদিকে ভুক্তভোগী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী অধ্যাপকের অভিযোগের ভিত্তিতে গত বুধবার মামলা হলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এ বিষয়ে পুলিশের ধানমন্ডি জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আবু তালেব বলেন, পুলিশ যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করছে। পলাতক দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ভিডিও ফুটেজের অপব্যবহার হয়েছে কিনা, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিউটি পার্লারটিতে সেবা নিতে গিয়ে গোপন ক্যামেরা নজরে আসে জবির ওই অধ্যাপকের। তাঁর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করে। সেই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক তসলিম আরিফ ইলিয়াস, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এমদাদুল হাসান ও ব্যবস্থাপক (তথ্যপ্রযুক্তি) এইচ এম জুয়েল খন্দকারকে মঙ্গলবার রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়।