
কিশোরগঞ্জ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান রঞ্জনের বক্তব্য ঘিরে জেলার স্থানীয় নেতাদের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এক নির্বাচনী সভায় দেওয়া বক্তব্যে আখতারুজ্জামান একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাওয়ার স্লোগান দিয়েছেন।
আখতারুজ্জামান বিএনপির কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক সভাপতি। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত বছর তিনি দল থেকে বহিষ্কৃত হন।
কিশোরগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির হয়ে তিনি দুই মেয়াদের সংসদ সদস্য (এমপি)। তবে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এ পর্যন্ত পাঁচবার বহিষ্কৃত হয়েছেন। এবার বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও আখতারুজ্জামান স্বতন্ত্রপ্রার্থী (ট্রাক) হয়েছেন।
নির্বাচনী সভায় খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে আখতারুজ্জামান স্লোগান দেন গত সোমবার সন্ধ্যায়।
পাকুন্দিয়া উপজেলা সদরের ঈদগাহ মাঠে সভা শেষে এক পর্যায়ে তিনি স্লোগান দেন, ‘মুক্তি চাই, মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই।’ এ সময় তাঁর অনুসারীরাও কণ্ঠ মেলান।
আখতারুজ্জামানের এই স্লোগান নিয়ে উপস্থিত স্থানীয়দের মাঝে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়।
তবে অনেকে বলছেন, ‘এটি তাঁর (আখতারুজ্জামান) স্বভাবগত ও সচেতন স্ট্যান্ডবাজি।’ এ বিষয়ে জানতে গতকাল মঙ্গলবার রাতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আখতারুজ্জামান বলেন, তিনি আর মন্তব্য করতে চান না।
পাকুন্দিয়া সদরের বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘রঞ্জন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দল থেকে সুবিধা পেতে এ ধরণের স্লোগান দিয়েছেন। এটি নতুন কিছু নয়, প্রচার-প্রচারণায় তিনি নিয়মিত এসব করে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষও আর এগুলোকে গুরত্ব দেয় না।
হাসাহাসি করে উড়িয়ে দেয়।’
সোমবারের নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্যে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আস্থা রেখে আমি প্রার্থী হয়েছি। এখানে নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে হবে। যদি কারসাজি হয়, তবে ঘরে ঘরে আগুন লাগবে।’
আখতারুজ্জামান আরো বলেছেন, ‘এ আসনে যদি ভাল নির্বাচন হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববাসীর কাছে বলতে পারবেন, বাংলাদেশে অন্তত কটিয়াদী-পাকুন্দিয়াতে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে।’
বহিষ্কৃত এ নেতার বক্তব্যের বিষয়ে জেলা বিএনপির সহসভাপতি জালাল উদ্দিন বলেন, ‘এসব কথা শুনলে হাসি পায়। এগুলো নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতেও রুচিতে বাঁধে। মানুষ সুবিধা পেতে কতটুকু নিচে নামতে পারে বা আদর্শ জলাঞ্জলি দিতে পারে এর দৃষ্টান্ত আখতারুজ্জামান। তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই বলে, যতই স্লোগান দিক না কেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা তাঁকে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবে না।’
জালাল উদ্দিন আরো বলেন, ‘বিএনপি ভোট বর্জন করেছে। আখতারুজ্জামান দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে গেছেন। তাঁর স্ট্যান্ডবাজি বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।’
আসনটিতে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করেছেন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দ। আখতারুজ্জামানের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্রপ্রার্থী একদিকে দুর্নীতির আভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছেন, অন্যদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশও গড়তে চাইছেন। এগুলো এক ধরণের বিকৃত ও সস্তা কথাবার্তা। অর্থহীন কথাবার্তায় ভোটারদের প্রভাবিত করা যায় না।’
এ আসনের এমপি ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। তিনি মনোনয়ন না পেলেও সমর্থন দিয়েছেন আখতারুজ্জামানকে। এখানে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন সাবেক এমপি ও পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সোহরাব উদ্দিন। তাঁর প্রতীক ঈগল। আসনটিতে বিভিন্ন দলের আরো চার প্রার্থী আছেন।