
রাজধানীর ধানমন্ডির নিজ বাসা থেকে মডেল ও অভিনেত্রী তানজিম তাসনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। যিনি তাসনিয়া রহমান নামে পরিচিত ছিলেন। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকালে ধানমন্ডির ৯/১ নম্বর রোডের ৩১ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
অভিনয়ে নতুন মুখ ছিলেন তাসনিয়া। মডেলিংয়ে সময় দিলেও ‘আয়নাবাজি’র পরিচালক অমিতাভ রেজার ‘মুন্সিগিরি’ সিরিজে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি পান তিনি। এরপর কাজ করেন চলচ্চিত্রেও।
তবে, অভিনয়ের বাইরে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন এ মডেল। বিশেষ করে গত বছর তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলেন কয়েকজন ব্যবসায়ী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক। যাদের মধ্যে ছিলেন এফবিসিসিআই-এর সাবেক এক পরিচালকও।
তাসনিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, বিত্তশালী পুরুষদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে তাদের ফাঁসিয়ে মামলা করতেন তিনি। এছাড়া ব্ল্যাকমেইল করে অনেকের কাছ থেকে টাকা আদায় করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন।
গত বছর দেশের আলোচিত এক মডেল-উপস্থাপিকার সঙ্গে নিজের কথোপকথন ফাঁস করেছিলেন তাসনিয়া। সেখান থেকে জানা যায়, ওই উপস্থাপিকা তার স্বামীর সঙ্গে তাসনিয়ার পরকীয়ার অভিযোগ তোলেন। যেটা নিয়ে দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। উপস্থাপিকার সঙ্গে তর্কে জড়ালেও ওই কথোপকথনে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেননি তাসনিয়া। ওই উপস্থাপিকাকে বাংলাদেশে এলে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন তিনি।
গত বছরের এপ্রিলে তাসনিয়ার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক জসীম আহমেদ। এ পরিচালকের আইনজীবী আল মামুন রাসেল তখন বলেছিলেন, ‘জসীম আহমেদের সাথে তাসনিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এ সম্পর্কের অপব্যবহার করেন তাসনিয়া। তার নামে মিথ্যা মামলা করেন তিনি। এছাড়া কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় জসীম উদ্দিনের নামে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করেন যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ২৯ ধারায় অপরাধ।’
ওই সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট শাহেদুল আজম বলেন, ‘এ মডেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। বড় বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও ধনী ব্যক্তিদের টার্গেট করে তিনি ব্লাকমেইলের চেষ্টা করেন। সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে সাধারণত ভিকটিমরা মুখ খোলেন না।’
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের পিটিশন মামলা নং- ৩০৫/২০২০ এর তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডি পুলিশ আবিষ্কার করে যে, তাসনিয়া রহমান একজন পেশাদার ব্ল্যাকমেইলার। যার কাজ হলো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় করা। সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অফিসার আল মাহমুদ হোসেনের করা একটি তদন্ত প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়।
সাইবার ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তানজিম তাসনিয়া নিজেকে একজন মডেল পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জনের সাথে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে তাদের সুনাম ও খ্যাতি বিনষ্ট করে বড় অঙ্কের অর্থ আদায়ের জন্য সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করেন। তাসনিয়া কর্তৃক দায়ের করা কোনো মামলার সত্যতা না পাওয়ার কথা জানিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গত বছরের (২০২৩ সাল) ১৩ এপ্রিল বিকেলে ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তাসনিয়া। এ সময় তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগগুলো মিথ্যা দাবি করেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সক্রিয় ছিলেন তাসনিয়া। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে তাকে অনুসরণ করতেন প্রায় দুই লাখ মানুষ। শুক্রবার নিজ বাসা থেকে এ মডেলের মরদেহ উদ্ধারের পর তার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, তাসনিয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি মডেলিং করতেন তিনি। তার মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ধানমন্ডি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জান্নাতুল ফেরদৌসী।
তিনি বলেন, নিজের ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন তানজিম তাসনিয়া। তাদের আরেকটি ফ্ল্যাটে পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকতেন। ভোরে তারই এক বন্ধুর মাধ্যমে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে গিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তাসনিয়াকে। পরিবারের সদস্যরা তাকে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।