
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সেলফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে কুইবেক। ছুটি শেষে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরলে এই নিয়ম কার্যকর হবে। এর মধ্য দিয়ে অন্টারিওর পর দ্বিতীয় প্রদেশ হিসেবে কুইবেক নিয়মটি চালু করছে।
শ্রেণিকক্ষে অমনোযোগিতা কমিয়ে আনতে ৩১ ডিসেম্বর থেকে নিয়মটি কার্যকর হবে। প্রদেশের সরকারি এলিমেন্টারি ও সেকেন্ডারি স্কুলের ক্ষেত্রে এই নিয়েম প্রযোজ্য হবে। তবে শিখনের উদ্দেশে শিক্ষার্থীরা যাতে সেলফোন ব্যবহারের অনুমতি পায় শিক্ষকদের সেই নমনীয়তা দেওয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বার্নার্ড ড্রেইনভিল গত আগস্টে এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার আগেই কুইবেকের অনেক স্কুল শ্রেণিকক্ষে সেলফোনের ব্যবহার সীমিত করে এনেছে। তবে শিশুদের নিয়ে কাজ করা কেউ কেউ বলছেন, শিশুদের স্বার্থেই যতটা সম্ভব নিয়মটি কঠোর করা প্রয়োজন।
ড্রেইনভিলের ঘোষণার আগেই কুইবেকের ওয়ারউকের একজন হাইস্কুল শিক্ষক এটিয়েনে বার্গারন স্কুলের যেকোনো স্থানেই শিক্ষার্থীদের সেলফোন ব্যবহারে সরকারের কাছে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পিটিশন করেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমাদের আরও অনেক দূর পর্যন্ত যেতে হবে। আমি চাই স্কুলে সব ধরনের ব্যক্তিগত ডিভাইসের ওপর নিষেধাজ্ঞা। সেটা করিডোর, পাবলিক স্পেস, লাইব্রেরি এবং সবখানে।
বার্গারন বলেন, তিনি প্রযুক্তিবিরোধী নন। তিনি স্কুলের ক্রিয়েটিভ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা করেন এবং শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিং, সংগীত ও ভিডিও গেম ডিজাইনিং পড়িয়ে থাকেন। কিন্তু তার পাঠ থাকে মানসিক বিকাশের জন্য ডিজিটাল টুলের ব্যবহার নিয়ে। অনলাইনে উদ্দেশ্যহীনভাবে সার্ফিং নয়।
তিনি বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে তরুণরা যখন সেলফোনে থাকে তখন তারা হয় টিকটকে থাকে অথবা গেম খেলে। আমি নিশ্চিত এইসব ডিভাইসের সামনে তরুণদের ছেড়ে দেওয়া কুইবেকের স্কুলগুলোর লক্ষ্য নয়। আক্ষরিক অর্থেই এটা তাদেরকে অসামাজিক করে তোলে।
কুইবেকের শিক্ষা বিভাগ বলেছে, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব স্কুলের শ্রেণিকক্ষে সেলফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ সংক্রান্ত নীতি থাকতে হবে। যারা এই নিয়ম পরিপালন করবে না সেইসব শিক্ষার্থীদের জরিমানা করা সংশ্লিষ্ট স্কুল বোর্ডের নিজস্ব ব্যাপার।
সেন্টার ডি সার্ভিসেস স্কলেয়ার ডি মন্ট্রিয়ল এবং ইংলিশ মন্ট্রিয়ল স্কুল বোর্ডের মতো প্রদেশের কিছু বোর্ড অনুমোদিত শিক্ষার বাইরে শ্রেণিকক্ষে কিছু সময়ের জন্য সেলফোনের ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
গত জুলাইয়ে ইনেস্কোর এক প্রতিবেদনের পর থেকে শ্রেণিকক্ষে সেলফোন ব্যবহারের বিষয়টি সামনে এসেছে। শ্রেণিকক্ষে সেলফোনের ব্যবহার শিখনের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে অনুপ্রাণিত করেছে বলে জানিয়েছেন ড্রেইনভিল।
বিষয়টি নিয়ে কিছু দেশ কুইবেক ও অন্টারিওর চেয়েও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ফ্রান্স ২০১৮ সালে ১৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য স্কুল প্রাঙ্গণে সেলফোন নিষিদ্ধ করেছে। চীন স্কুলশিক্ষার্থীদের সেলফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ২০২১ সালে। প্রধান শিক্ষক যাতে স্কুলে সেলফোন নিষিদ্ধ করতে পারেন সে লক্ষ্যে নির্দেশিকা তৈরির ব্যাপারে গত অক্টোবরে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের সরকার। ইটালি এবং পর্তুগালও সেলফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে একই পথে রয়েছে।