12.3 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

কানাডায় দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় ঠান্ডাই আমাদের সাথী

কানাডায় দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় ঠান্ডাই আমাদের সাথী - the Bengali Times

মেকানিক ছেলেটি কাছে এসে বিনয়ের সাথে বললো রাতে যেখানে ৫০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে সেখানে টায়ারের বাতাস কিভাবে থাকবে বাতাস জমে বেরনোর পথ খুঁজে

বাংলাদেশে খুব শীত পড়ছে দুটি জেলাতে তাপমাত্র ৫ সেলসিয়াসের নীচে এখন। প্রতিদিনের সংবাদ পত্রে চোখ রাখি। ক দিন আগেও আমার এই শহরে রাতের তাপমাত্রা ছিলো -৫০ সেলসিয়াস। গাড়ীর চারটে চাকার মধ্যে যে কোন একটির হাওয়া এই অবস্থায় ধীরে ধীরে চলে যায়। সে দিন সকালে দেখি টায়ার শূন্য। সাথে থাকা মেশিন দিয়ে ১০ মিনিট ধরে বাতাস দিলাম টায়ারে।
বিকালে অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ী নিয়ে গেলাম মেকানিকের দোকানে উদ্দেশ্য লিক এর বিষয়। মেকানিক ছেলেটি কাছে এসে বিনয়ের সাথে বললো রাতে যেখানে -৫০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে সেখানে টায়ারের বাতাস কিভাবে থাকবে? বাতাস জমে বেরনোর পথ খুঁজে। বললো

-আমি চারটে চাকাতে বাতাস ঢুকিয়ে দিচ্ছি। সারাদিন কাজ করার ফলে ক্লান্ত ছেলেটিকে দেখে মায়া হলো মন্ত্রমুগ্ধের মতো মাথা নেড়ে সায় দিলাম তার কথায় । একটু নেড়ে চেড়ে দিলো। সমস্যা আর নেই তবে সেই চাকাটি সন্দেহের দোলায় আছে আগের মতোই।

- Advertisement -

কোন এক জানুয়ারীতে আমি নীলফামারীতে ছিলাম দু দিন। রাতের তাপমাত্রা সেখানে প্রচন্ড নেমে যায়। লেপ কাথা বরফের মতো ঠান্ডা মনে হয় অথচ এখানে মাইনাস ৫০ সেলসিয়াসে তেমনটি মনে হয়না। বাংলাদেশে ৯ মাস বলতে গেলে গরম আর ৩ মাস কোথাও কোথাও ২ মাস শীত। ঘরবাড়ী গুলি গৃষ্মপ্রধান অন্চলের আবেশে তৈরী ফলে শীতের সময় প্রচুর বাতাস ঢোকে সেখানে ঘরে।

আমি যখন এখানে চাকরীতে আসি ২০১৫ সালে তখন মাইনাস ৫০ সেলসিয়াস তাপমাত্রার সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ। আমার অফিস সুপারভাইজার আমাকে তখন বলতো-

-লেয়ার বাই লেয়ার কাপড় পরবি ঠান্ডা কম লাগবে। কমপক্ষে ৫টি লেয়ার পরে অফিস যেতাম। প্যান্ট থাকতো দুটি আর একটি ইনার। রীতি মতো যুদ্ধ যাত্রা। অনেকে আমাকে দেখে হাসতো। বলতাম নতুন তাই। এর পর একটি Snow pant কিনে নিলাম। প্যান্টের উপর সেটি পরি তবে মাইনাস ৩০ এর নীচের তাপমাত্রায়। বাকী সময় একটি ইনার আর প্যান্টে চলে যায় অবশ্য পথ চলার সময় গাড়ীও যথেষ্ট প্রতিরোধ করে ঠান্ডা ।

কানাডায় দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় ঠান্ডাই আমাদের সাথী কারন এটি নর্থ আমেরিকার দেশ এবং মেরু অন্চলের কাছে। আমি যে এলাকায় থাকি তার নিকট দিয়েই চলে গেছে আর্কটিক সার্কেল তাই কখনও কখনও এই সব এলাকায় ২৪ ঘন্টাই আধার আবার ২৪ ঘন্টাই সূর্য। অনেকেই আমার লেখা পড়ে মন্তব্য করেন এখানে থাকি কেন কিংবা কম ঠান্ডার এলাকায় চলে যাই না কেন।
এদেশে এসে দুটো ডিগ্রী নেয়ার পর যখন কোথাও উপযুক্ত চাকরী মিলছিলো না তখন একজন শিক্ষক পরামর্শ দিলেন-উত্তরে যাও, চাকুরী পাবে। সেই চেষ্টা শুরু করার পরও উত্তরে সহসা চাকুরী মেলেনি। ২০১৫ তে হঠাৎ একজন কলম্বিয়ান সহপাঠি তার ডিপার্টমেন্টের জন্য পচ্ছন্দের প্রাথী খুঁজছিলো। তার কথা ছিলো

-আমি কাজ শিখিয়ে দেব তবে ৩ মাসের চুক্তি।
৩ মাসেই আমার চলবে, মনে মনে সেদিন বলেছিলাম ৩ দিন হলেও চলবে। ইন্টারভিউ, ব্যাকগ্রাউন্ড চেকিং সবই হলো। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই ১০ বছরের আবাস টরন্টো ছেড়ে চলে এলাম। কত তিন মাস যে এর মধ্যে পার হয়ে গেল। কয়েক বছর পর ১৩ বছর পার হবে এই মাইনাস ৫০ সেলসিয়াসের দেশে।
গরমে থাকুন সবাই। শুভাকামনা।

ষ্ট্যানটোন টেরিটোরিয়াল হাসপাতাল,
ইয়েলোনাইফ, কানাডা।

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles