
তিন সপ্তাহ বাংলাদেশে কাটিয়ে আসলাম। কানাডায় ফিরেছি গত শনীবার। “বাংলাদেশে কাটিয়ে আসলাম”- কথাটা এজন্য বললাম যে, কানাডাতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছি গত তের বছর যাবত। প্রায় এক যুগের বেশী। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে গেছি মাত্র চারবার। থেকেছি সর্ব-সাকুল্যে তিনমাস।
গত একযুগে কানাডার সাথে নানা বিষয়ে সম্পৃক্ততা বেড়েছে, আর বাংলাদেশের সাথে কমেছে।
এক যুগের বেশী সময় অন্য একটি দেশে অবস্থান করায় সেদেশের কৃষ্টিকালচার, নিয়মকানুন, মানুষের মনোভাব আর আচার আচরন দ্বারা অনেকটাই প্রভাবিত হয়েছি। কিছু কিছু বিষয় আনলার্নড্ করেছি। কিছু কিছু নতুন বিষয় জেনেছি এবং শিখেছি।
নতুন কিছু শিখতে সমস্যা না হলেও যেটা আগে শিখেছিলাম তা ভুলতে (Unlearned) কষ্ট হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।
এখন যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা দেখলে খুব খারাপ লাগে, আগে অবশ্য তেমন মনে হতনা।
কেউ কথা দিয়ে কথা না রাখলে খুব খারাপ লাগে, কেউ কথা দিয়ে ঠিক সময়ে উপস্থিত না হলে মন খারাপ হয়, নিজেও কোথাও সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে না পারলে অস্থির লাগে।
কেউ মিথ্যা কথা বললে সহ্য হয়না, নিজেও মিথ্যা বলতে পারিনা। কখনো কোন কারনে বলে ফেললে খুব অস্বস্তিতে ভুগি।
মানসিকভাবে অসুস্থ্য মানুষদেরকে কেউ “পাগল”বললে কষ্ট পাই।
কাউকে ছোট বাচ্চাদের গায়ে হাত তুলতে দেখলে খুব খারাপ লাগে।
কেউ ভুল করে “সরি” না বললে বা দোষ করে তার দায়িত্ব নিতে অশ্বীকার করলে খারাপ লাগে।
কারো ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে না দেখলে অথবা নিজের দায়িত্ব পুরোপুরিভাবে পালন না করতে পারলে খারাপ লাগে। নিজে অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার চেষ্টা করি, সাথে সাথে আশা করি অন্যরাও আমার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। কিন্তুু তাতো সব সময় হয়না,তখন কষ্ট লাগে।
সৎভাবে জীবনযাপন করার চেষ্টা করি, সেটা হয়ত একশতভাগ সম্ভবপর হয়না। তবুও মানুষের অসদাচারন ও অসুদুপায় অনুশীলন দেখলে কষ্ট পাই। সাহায্যপ্রার্থী কোন মানুষকে যেকোনভাবে সাহায্য করতে পারলে ভালো অনুভব করি।
কেউ বোরকা হিজাব পড়লে যেমন খারাপ লাগেনা, তেমনি কেউ শুধু ব্রা বিকিনি পড়লেও খারাপ লাগেনা।
কেউ কপালে ফোটা দিলে বা না দিলেও খারাপ লাগেনা।
কেউ নামাজ রোজা পালন করলেও খারাপ লাগেনা, নামাজ রোজা পালন না করলেও খারাপ লাগেনা। কারন আমি মনে করি পোষাক আশাক পরিধান, ধর্মীয় আচারআচরন অনুশীলণ
যার যার নিজস্ব।
শরীফ থেকে কেউ শরিফা হলেও আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্থ নই, আবার কেউ শরীফা থেকে শরীফ হলে আমার কোন আপত্তি নেই। কে কীভাবে নিজের সেক্সচুয়াল পরিচয় দিবে সেটা তার ব্যাপার। মানুষের সেক্সুয়াল পরিচয়ের সাথে রাষ্ট্রের আইন কানুনের অনেক ব্যাপারস্যাপার থাকে। যেমন উত্তরাধিকার, চাকুরীবাকুরী, নাগরিক সুযোগসুবিধা । আমি মনে করি, সময় পরিবর্তনের সাথে মানুষের জানাবোঝা বাড়ছে, সেজন্য রাস্ট্রীয়আইনকানুনেরও পরিবর্তন জরুরী। সাথে পরিবর্তন জরুরী মানুষের মন, মনন, মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির।
যে মানুষেরা সময়ের সাথে সাথে নিজেদেরকে পরিবর্তন করতে পারে তারা অগ্রগামী।