8.1 C
Toronto
সোমবার, এপ্রিল ২১, ২০২৫

গাড়ি চুরিতে কানাডার নাম হয়ে গেছে

গাড়ি চুরিতে কানাডার নাম হয়ে গেছে - the Bengali Times
উবার এর ড্রাইভাররা ও এই উটকো ঝামেলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না তারা হয়তো গাড়িটা ছেড়ে কোনো প্যাকেজ বা খাবার ডেলিভারি দেবার জন্য একটু সময়ের জন্য গাড়ি ছেড়ে গেছে এসে দেখে গাড়ি আর নেই

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ভেবেছিলাম ভালোবাসার গদ্য লিখি। কিন্তু তার চেয়ে ও জরুরি জান বাঁচানো। শুনুন তাহলে কি হচ্ছে।

আগে সকালে জানালা খুলে লোকজন দেখতো সেদিনের ওয়েদার কি রকম , আর এখন জানালা খুলে দেখতে হয়, ড্রাইভওয়ে তে গাড়ি অক্ষত আছে কিনা। আমাদের কমিউনিটির অনেকেই তাদের নিজেদের গাড়ি চুরির কাহিনী সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন। তাই এ বিষয়টির সাথে অনেকেই রিলেট করতে পারবেন।

- Advertisement -

আপাতত মনে হতে পারে , ঠাট্টার বিষয় কিন্তু ঘটনাটা সত্যি। কানাডার বিচারমন্ত্রীর সরকারি গাড়ি তিনবার চুরি হয়েছিল। এই একই গাড়ি গত বছর চুরি হয়েছিল ডেভিড লামাটি যখন বিচার মন্ত্রী ছিলেন , আবার গত নভেম্বরে চুরি হয় যখন আরিফ ভিরানি দায়িত্ব নেন। তো ওদের গাড়িই নিরাপদ নয়, সেখানে আমি, আপনি আম জনতার আর আফসোস করে কি লাভ। এই একটা ঘটনা দিয়েই বোঝা যায় , কানাডায় অপরাধ প্রবণতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে আশার কথা যে নেই, তা নয়। ফেডারেল সরকার গত সপ্তাহে গাড়ি চুরি নিয়েই সম্মেলন আয়োজন করে। প্রতিবার দুর্যোগ হয়, সরকার আলোচনা বা সম্মেলনের আয়োজন করে। মাস কয়েক আগে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য একই কাজ করা হয়। আলোচনা শেষে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায় । ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো হিসেবে দেখিয়ে বলছে, প্রতি পাঁচ মিনিটে একটা গাড়ি চুরি হচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হয় , কানাডায় আছি না সোমালিয়া তে। অজুহাত হচ্ছে, যেসব শিপিং কনটেইনারে করে গাড়িগুলো পাচার করা হয়, তার জন্য নাকি পর্যাপ্ত স্ক্যানার নেই।

এসব দেখে শুনে দিনের বেলায় ও গাড়ি আর ড্রাইভ ওয়ে তে রাখার সাহস পাই না। অন্টারিওর প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ড এর কথা শুনলে মনে হয়, বিষয়টা আর সাধারণ চুরির পর্যায়ে নেই , সহজভাবে চুরি করতে না পারলে ছিনিয়ে নেবার ঘটনাও ঘটছে। ফোর্ড বলছে, ‘মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে। আমার বন্ধুরা এখন বেসবল ব্যাট সাথে নিয়ে ঘুমায় কারণ কেউ একজন দরোজায় ধাক্কা মেরে ঘরে ঢুকে মাথার উপর বন্দুক ধরে বলবে , চাবি দাও। ‘

সমাধান হিসেবে অনেক কথা বলা হচ্ছে কিন্তু যেই কথাটা সরকার স্বীকার করছে না , তা হলো , কানাডার ক্যাচ এন্ড রিলিজ সিস্টেম এর কথা অর্থাৎ দাগি আসামিরা অপরাধ করে আবার একই দিনে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। পিয়ের পলিয়েভ রসিয়ে রসিয়ে সাংবাদিকদের কাছে সেদিন এই গল্প বলছিলেন। বলছিলেন, ‘এই অপরাধীদের কোনো কৃতজ্ঞতাবোধ নেই। যে বিচারমন্ত্রীর সরকার তাদের পক্ষে আইন বানিয়ে রেখেছে, সেই বিচার মন্ত্রীকে ও তারা রেহাই দিচ্ছে না। তাদেরকে জেল থেকে উনি বের করে দিচ্ছেন আর তাদের কোনো সৌজন্যবোধই নেই। তারা বারবার তার গাড়িটা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এটা অবিশ্বাস্য। আমি ভেবেছিলাম, তারা বিচারমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে কিন্তু আদতে তা নয়।’

অপরাধীরা গাড়ি চুরি করে যদি সকালে ধরা পড়ে , তাহলে বিকেলের মধ্যে জামিন নিয়ে নেয় অথবা যদি হাউস এরেস্ট হয়, তাহলে লিভিং রুমে বসে নেটফ্লিক্স দেখে অথবা তাদের খুব পছন্দের ভিডিও গেম গ্রান্ড থেফট অটো খেলে । তবে সংঘবদ্ধ অপরাধ যে মাত্রায় বেড়ে গেছে , তাতে আতংকিত না হয়ে উপায় নেই। গাড়ি চুরিতে কানাডার নাম হয়ে গেছে ডোনার কান্ট্রি অর্থাৎ সংঘবদ্ধ অপরাধীদের সবচেয়ে বেশি গাড়ির যোগান হয় কানাডা থেকে।

উবার এর ড্রাইভাররা ও এই উটকো ঝামেলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তারা হয়তো গাড়িটা ছেড়ে কোনো প্যাকেজ বা খাবার ডেলিভারি দেবার জন্য একটু সময়ের জন্য গাড়ি ছেড়ে গেছে , এসে দেখে গাড়ি আর নেই।
তবে দীর্ঘ সতেরো বছর আগে কানাডায় আসার পর থেকে এই প্রথম এসব দুর্ধর্ষ চুরি ডাকাতির কথা শুনছি। নিজের অভিজ্ঞতা ও আছে, কখনো দিনের বেলায় গাড়ি গ্যারাজে ঢুকিয়ে রাখার কথা ভাবি নি। কিন্তু এখন ভাবছি শুধু নয়, গ্যারেজে ঢুকিয়ে রাখছি।

তাই পিয়ের যখন বলেন, ট্রুডোর আগে এসব ছিল না, ট্রুডোর যাবার পরে ও এসব থাকবে না। জলে ডুবলে যেমন খড় কুটো আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হয়, আমাদের এখন এই আশ্বাসে বিশ্বাস করা ছাড়া আর কি উপায়।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles