
১। কানাডায় চাকুরী বাজার এখন খুব জটিল ও হতাশাজনক। অনেক চাকুরীর পদ খালি আছে, কিন্তুু যথাযথ দক্ষতা সম্পন্ন লোক নাই। আবার অনেক লোক আছে, কিন্তুু চাকুরী নাই। মানে জব ও লোকবলের মধ্যে সিরিয়াস মিছম্যাচ।
২। টরন্টো পিয়ারসন এয়াপোর্টে গত বৃহস্প্রতিবার একটা জব ফেয়ার হয়ে গেল। বিশটা কোম্পানিতে ৭শ পদের বিপরীতে মেলায় লোক জড়ো হয়েছিল ২ হাজার। চাকুরীপ্রার্থীদের বিশাল এ জমায়েতই বলে দেয় লোকজনের চাকুরী নেই। বিশাল এয়ারপোর্টের ঐ জব ফেয়ারে আসলে কয়জনের চাকুরী হল তার কোন তথ্য জানা যায়নি। জানা সম্ভবও না।
৩। গতকাল কথা হচ্ছিল উত্তর আমেরিকার অন্যতম বড় রিক্রুটিং এজেন্সি -ম্যানপাওয়ারের একজন ব্যবস্থাপক জনাব আশরাফ উদ্দিন ভাইয়ের সাথে। তার কাছে অনেক দিন ধরে আমাদের কমিউনিটির চাকুরী প্রার্থীদের রেজুমে পাঠাই চাকুরী দেয়ার জন্য। উনি আপ্রান চেষ্টা করে আমাদের বাঙালী কমিউিন্রি চাকুরী প্রার্থীদের চাকুরী দিতে। উনি দেনও। এ পর্যন্ত টরন্টোর কয়েকশ বাঙালীকে জব দিয়েছেন। একথা আগেও বলেছি। ইদানিং টরন্টোতে রেফিউজি ক্লেইমেন্ট চাকুরী প্রার্থী বেশীবেশী আমার সাথে যোগাযোগ করছেন। যাদের বেশীরভাগের ইংরেজীতে যোগাযোগ দক্ষতা কম অথবা নাইই। ইংরেজী কম জানা কাউকে আশরাফ ভাইয়ের কাছে পাঠালে উনি চাকুরী দিতে চান না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে “সরি” বলে দেন।
উনি বন্ধু মানুষ। খুবই ভালো লোক। ওনার সাথে অনেক সময় ফান করে অনেক কথাই বলি। যেমন
আমি বলি, আরে ভাই, ফ্যাক্টরির জব করতে আবার ইংরেজী জানা লাগে নাকি? গায়ে গতরে খাটতে পারলেই তো হল।”
ওনার উত্তরটা খুব মোলায়েম ও ভদ্রচিত। ভাই, গায়ে গতরে খাটতে হয় ঠিক আছে। অন্যদের সাথে যোগাযোগও তো করতে হয়। কাজ করার সময় সুপারভাইজারের নির্দেশনাটাতো বুঝতে হবে। সুপারভাইজর নির্দেশ তো আর বাংলায় দেয়না। ইংরেজীতে দেয়।
তিনি আরো বলেন, একজন কর্মীর মিনিমাম কমিউনিকেশন স্কিল না থাকলে তো ফ্যাক্টরির মধ্যে কোন দুর্ঘটনার ঘটে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কর্মী ও ব্যবস্থাপনা– উভয়ের জন্যই বিপদ।
আর ট্রেনিং দিতে গেলেও তো ভাষাটা বুঝতে হবে।
সে জন্য কাউকে রেফার করলে যাদের যোগাযোগ দক্ষতা ভালো তাদেরকে পাঠালে ভালো হয়।”
আশরাফ ভাইয়ের কথার সাথে আমি একমত। ওনাদের তো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কোন চ্যারিটির নয়। যে কর্মী দিয়ে প্রোডাকশন বাড়ার পরিবর্তে বিপদ হবে তাকে তো তারা জবে নিবেনা।
৪। আজকে ফোর্বস জার্নালের অনলাইন ভার্সনে একটি প্রবন্ধ পড়ছিলাম। প্রবন্ধের নাম এরকম:
আপনার কোন পাচটি সফট্ স্কিল থাকলে আপনি চাকুরী অথবা ব্যবসায় সফলতা লাভ করতে পারবেন সহজে।
তার মধ্যে এক নম্বরে আছে যোগাযোগের দক্ষতা। “গ্রামারলী”র এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, আমেরিকায় কর্মীদের যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বছরে ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়। অথচ এ দক্ষতা স্কুল কলেজ থেকে শিখে আসার কথা ছিল।
দ্বিতীয় অবস্থানে আছে “সময় ব্যবস্থাপনা”। কোন কাজটা কোন সময়ে করা উচিৎ তা আমরা অনেকেই বুঝিনা। অথবা সময়ের কোন গুরুত্বই দিইনা। আমরা জানি এখনো সারা পৃথিবীতে কাজের রেগুলার সময় সকাল নটা থেকে বিকেল ৫টা। অনেকে ২০ শতাংশ কাজ শেষ করে সময়ে ৮০ শতাংশ সময়ের মধ্যে। আবার কেউ কেউ ৮০ শতাংশ কাজ শেষ করে ২০ শতাংশ সময়ের মধ্যে । একেই বলে টাইম ম্যানেজম্যান্ট।
তৃতীয়ত বিষয় হল সমস্যা সমাধানের দক্ষতা। কর্মী যদি সমস্যা সমাধান নিজে নিজে করতে পারে তাহলে তার কদর বেশী। যারা সমস্যা সমাধান করতে আরেকজনের শরণাপন্ন হয় তাহলে তার গুরুত্ব কমে যায়।
স্কুল কলেজে সমস্যা সমাধানের প্রাকটিস তেমন একটা করানো হয়না। শুধু মুখস্থ বিদ্যা রপ্ত করানো হয়। শুধু জ্ঞানী হলেই সমস্যা সমাধান করা যায়না। জ্ঞানের অনুশীলন লাগে।
চতুর্থত হল সাংগঠনিক বা গুছিয়ে রাখার দক্ষতা। সব কিছু সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতে পারলে কর্মীর উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। অনেকে কাজ এলোমেলো করে রাখে অথবা এলোমোলো করে ফেলে। তাদের উন্নতির সম্ভবনা কম। জবে বা ব্যবসায় টিকে থাকার সম্ভবনাও কম। অগোছালো লোককে কে পছন্দ করে?
পঞ্চম বা সর্বশেষটা হল, গ্রোথ মাইন্ড সেট। নতুন কিছু জানা বা বোঝার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব থাকা। নতুন নতুন বিষয়াদি যারা জানতে চায় বা বুঝতে চায় তারা সফল হয়। সেই সাথে ইমোশোনাল ইনটিলিজেন্স থাকা। বাধা বিপত্তি এলে বা চাপে পড়লে টলে না যাওয়া। ভেঙ্গে না পরা। মানসিক দৃঢ়তা থাকা খুব জরুরী। যে যত বেশী মানসিকভাবে দৃঢ়তা দেখাতে পারে সে তত বেশি সফল।
কী দিয়ে শুরু করেছিলাম, আর কোথায় গিয়ে শেষ করছি। শেষে বলতে চাই, আমরা যারা জব খুজছি অথবা ব্যবসা করার চেষ্টা করছি,তাদের যোগাযোগ, সময় ব্যবস্থাপনা, গুছিয়ে রাখা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি আবেগীয় বুদ্ধিমতাও বাড়াতে হবে। তাহলেই কেবল চাকুরী বা ব্যবসায় আমরা সফল হতে পারবো। যে কোন চাকুরীর ইন্টাভিউয়ের সময় উপরের ঐ পাচটি দক্ষতা একজন চাকুরী প্রার্থীর মধ্যে আছে কীনা তা যাচাই করা হয়।
এখন বলুন, আপনি কী চাকুরী খুজছেন? তাহলে নিজেকে মিলিয়ে দেখুন। আপনার ঐ দক্ষতাগুলো আছে কীনা? না থাকলে অর্জন করা চেষ্টা করুন। শেখা বা জানার কোন বয়স নেই। শুধু অন্যকে দোষারোপ করে নিজের দুর্বলতা বেশীক্ষন ঢেকে রাখা যায়না।