12.9 C
Toronto
মঙ্গলবার, মার্চ ১৮, ২০২৫

লিকুর পরিচয়ে প্রতারণা, এমপি হতে চাওয়া নারীর ৬২ লাখ লুটে নেন তিনি

লিকুর পরিচয়ে প্রতারণা, এমপি হতে চাওয়া নারীর ৬২ লাখ লুটে নেন তিনি - the Bengali Times

সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হতে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব (সচিব-২) গাজী হাফিজুর রহমান লিকু পরিচয় দেওয়া একজনের কাছে ৬২ লাখ টাকা খুইয়েছেন এক নারী। পরে এমপি হতে না পেরে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে অভিযোগ করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে। অভিযান চালিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কথিত একান্ত সচিব-২-এর ভুয়া পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিকে আটক করেছে ডিবি। তার নাম ইয়াসির আরাফাত।

- Advertisement -

রবিবার তাকে আটকের পর সোমবার সাংবাদিকদের এসব তথ্য ডিবি পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ।

ডিবি বলছে, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু পরিচয়ে চাকরির তদবিরকারী প্রতারক চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই ঘটনায় মো. আনিস নামে আরও একজন সোমবার (৩ মার্চ) ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। এসময় দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার ইয়াসির আরাফাত ও মো. আনিস প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও সরকারি অন্যান্য নিয়োগকারীর কর্তৃপক্ষকে ফোন করে তার মনোনীত ব্যক্তিদের চাকরির তদবির করতেন। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে ফোন করে ফ্রি চিকিৎসা কিংবা টাকা কমানো ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের রোগী দেখার সিরিয়াল দিয়ে দিতেন। অভিনব সব প্রতারণার মাধ্যমে তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

সূত্র বলছে, সম্প্রতি একটি জেলার সরকারি কলেজের এক সহকারী অধ্যাপক স্থানীয় রাজনীতি সূত্রে মহিলা কোটায় সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। এ ব্যাপারে তদবির করে মহিলা এমপি বানিয়ে দেওয়ার কথা বলে লিকুর পরিচয়ে তার কাছ থেকে ৬২ লাখ টাকা লুটে নেয় ওই প্রতারক চক্র।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আগেও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত এপিএস-২ হাফিজুর রহমান লিকুর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় মনোনয়ন বাণিজ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, কন্ট্রাক্টারি, চাকরি দেয়া, সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি দেয়ার নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পেয়ে আমরা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছি। আবার নতুন করে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত এপিএস-২ পরিচয়ে প্রতারণা করা ভুয়া এ লিকুকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। আরাফাত মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে।

ভুক্তভোগী এক মনোনয়নপ্রত্যাশীর অভিযোগ তুলে ধরে ডিবিপ্রধান বলেন, আঞ্জুমান আরা বেগম একটি সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। তিনি স্থানীয় রাজনীতি করেন। তার শখ তিনি মহিলা কোটায় এমপি হবেন। সেজন্য তিনি আনিস নামে একজন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এসময় আনিস বলেন, “আপা আপনার সঙ্গে কি লিকুর কোনো যোগাযোগ বা ম্যাসেজ আসে নাই? হ্যাঁ ম্যাসেজ তো আসছে। তাতে লেখা ছিল-দ্রুতই নিয়োগ দেয়া শেষ হয়ে যাবে। দ্রুত ৬২ লাখ টাকা পাঠান। প্রথমে ১২ লাখ টাকা দিতে হবে উন্নয়ন ফান্ডে। বাকি টাকা দিতে হবে অ্যাকাউন্টে।”

হারুন জানান, আনিস ওই শিক্ষিকাকে তখন বলেন, ভাই (ভুয়া লিকু) তো টাকা দিতে বলেছে, টাকা দেন। সুমন ও আনিস নামে দুজন নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে মোট ৬২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর আজ পর্যন্ত ওই নম্বর খোলা পাওয়া যায়নি।

হারুন বলেন, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ পরিচয়ে প্রতারণা করা ভুয়া লিকুও বিভিন্ন লোকজনকে টেলিফোন করেন। বলেন, আমি লিকু বলছি, তাকে চাকরিটা দিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বা কোনো প্রতিষ্ঠানে। এভাবে কিন্তু লিকুর পরিচয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিও হয়ে গেছে একজনের। সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ব্যক্তিকে টেলিফোন করে তদবির করেছেন। লিকুর নাম ব্যবহার করে বিভিন্নজনের কাজ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি।

গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরাফাত স্বীকার করেছেন যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু পরিচয় দিয়ে এই প্রতারণার কাজটি করে আসছিলেন। তাদের তথ্য মতে, আরও কিছু ভুয়া লিকু রয়েছে। যারা দাপ্তরিক তদবির করেন।

৬২ লাখ টাকা দিয়ে নারী সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে চান। এই ভুক্তভোগী আসলে এমপি হয়ে কী করতেন? আপনারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন কি-না? জানতে চাইলে হারুন বলেন, যেভাবে ম্যাসেজটা আসছে, সেটা তো বিশ্বাস করার মতোই ছিল। তাছাড়া আনিস ও সুমনের ম্যাসেজের কারণে তিনি তা ভেরিফাই করার সুযোগই পাননি।

হারুন বলেন, এর আগেও লিকুর নাম ব্যবহার করে একটা জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এক কোটি টাকা দিয়েছেন দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার কথা বলে। আমরা সেই প্রতারককেও গ্রেপ্তার করেছি। এভাবে অসংখ্য প্রতারক গাজী লিকু নাম ধারণ করে প্রতারক গ্রেপ্তার করছেন।

একদিনের মধ্যে ৬২ লাখ টাকা তিনি কোথায় পেলেন? জানতে চাইলে হারুন বলেন, সেটা তো তার ব্যাপার। ভাই ছেলে মেয়ে আত্মীয়-স্বজন তো আছেই। নানাভাবেই তো এ টাকা ম্যানেজ করতে পারে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তদবিরের ক্ষেত্রে চাকরি হওয়ার আগেই টাকা নিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছেন তার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছি।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles