আমার প্রথম কর্মস্থল ছিলো বুরুজবাগান হেলথ কমপ্লেক্স, শার্শা, যশোর।নিজের এলাকার কাছাকাছি হওয়াতে খুব সহজেই আশেপাশের এলাকার জনগণের সাথে পরিচিত হয়ে গেছি।প্রতিদিন বাড়ী থেকে ১০০ সিসি সিডিআই মটর সাইকেলে আসা যাওয়া করি।এই এলাকা উপজেলা থেকে ৩ মাইল দূরে তবে কাছে একটি বড় বাজার গড়ে উঠেছে অনেক আগেই তাছাড়া একটি রেল ষ্টেশনও আছে।প্রতিদিন অনেক রোগী আসে বিভিন্ন গ্রাম থেকে।এই রোগীদের বেশীর ভাগই নারী ও শিশু।
একদিন ডিউটি শেষে বাড়ী ফেরার পথে একজন মাঝ বয়সী ব্যক্তি পথ রোধ করে দাঁড়ালো।তার আবদার তার সাথে গ্রামে যেতে হবে তারই একজন রোগী দেখতে।তাকে মটর সাইকেলের পিছে বসিয়ে নিলাম।গ্রামে গিয়ে দেখলাম একজন বৃদ্ধ তার বাড়ীর আঙ্গিনায় শুয়ে আছেন এবং তাকে ঘিরে কিছু আত্বীয়-স্বজন বসে আছে।বৃদ্ধকে দেখে মনে হলো দূর্বলতাই তাকে শয্যাশায়ী করেছে। কিছু ঔষধ লিখে দিলাম ও হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য উপদেশ দিলাম।বৃদ্ধের নাম জানতে চাইলে বলা হলো-চেরাগ আলী। টঙ্গীর চেরাগ আলী মার্কেটের পরে এ নামটি ২য়বার শুনলাম সম্ভবত।
বেশ কিছু দিন হয়ে গেছে একদিন বিকালে আউটডোর চেম্বারে বসে আছি হঠাৎ কানে এলো নারী কন্ঠ—ওগো চেরাগ আলীর ডাক্তার কিডা(কে)গো?নামটা আমার পরিচিত মনে হলো তাই রুমের বাইরে এলাম তাকে ডাকলাম বসতে দিলাম এবং জানতে চাইলাম চেরাগ আলীর খবর। ঔষধ পত্র নিয়ে চেরাগ আলীর আত্বীয়া চলে গেল।
আমাদের বাড়ীর পাশে এডভোকেট জনাব আব্দুল আজিজ(চাচা)এর বাড়ী। তিনি আমার কাছে মাঝে মাঝে এনাটমি বিষয়ে জেনে নিতেন কারণ তিনি হোমিও পড়ছিলেন।চাচার ডাকে সাড়া দিয়ে তার সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখি চেরাগ আলী বসে আছে।এবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো আমার। চাচা তা দেখে বললেন—এই তুমি ওকে চেনো নাকি? হ্যাঁ না কিছু বললাম না শুধু বললাম–চেরাগ আলী।
চেরাগ আলীকে দেখে অনেক ভালো লাগলো কারণ সে এখন অনেক সুস্থ্য তাই চাচার কাছে এসেছে আইন বিষয়ের কোন কাজে।।আলোর নীচে যে অন্ধকার সেই অন্ধকারেই বাংলাদেশের এই চেরাগ আলীদের অবস্থান।এ রকম একজন চেরাগ আলীকে স্বাস্থ্য সেবা দিতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করি সব সময়।
সেন্ট যোশেফ হসপিটাল,
এষ্টেভান, সাসকাচুয়ান, কানাডা