0.3 C
Toronto
মঙ্গলবার, মার্চ ১৮, ২০২৫

ছাত্রলীগ নেতার শ্যালক পরিচয়ে প্রেম-প্রতারণা

ছাত্রলীগ নেতার শ্যালক পরিচয়ে প্রেম-প্রতারণা
গ্রেপ্তার আসাদুজ্জামান পলাশ

ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতার শ্যালক পরিচয়ে এবং আরেক নেতার ছত্রছায়ায় সংগঠনের কর্মী আসাদুজ্জামান পলাশ গড়ে তুলেছেন প্রতারণার জাল। ওই পরিচয় দিয়েই সখ্য হয়েছে একাধিক তরুণীর সঙ্গে। তাদের বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জড়িয়েছেন শারীরিক সম্পর্কেও। তার ওপর বিশ্বাস অটুট রাখতে প্রেমিকাদের নামে খোলা ব্যাংক হিসাবে রাখতেন প্রতারণার সব অর্থ। তবে অর্থের নিয়ন্ত্রণ থাকত পলাশের নিজের হাতেই। এতে তার প্রেমিকারা জানেন না কোথা থেকে আসছে এসব অর্থ। এ ছাড়া তার প্রকৃত নাম-ঠিকানাও জানে না তারা। গত ১০ মার্চ এ প্রতারককে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) আরিফুল হোসেইন তুহিন বলেন, ‘মিনহাজ চৌধুরী মিনহাজ’ নামে ফেসবুকে ভুয়া আইডি ব্যবহার করতেন আসাদুজ্জামান পলাশ। সেই আইডি থেকে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীর শ্যালক পরিচয় দিয়ে সদ্য অনার্স-মাস্টার্স শেষ করা তরুণীদের টার্গেট করে চাকরি দেওয়ার নামে কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিতেন এসএসসি পাস এ প্রতারক। তার কাছ থেকে ১২টি ফেসবুক আইডি উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি মেয়েদের নামে ভুয়া আইডি। এসব আইডি থেকে সে নিজেই মিনহাজের মাধ্যমে তার কথিত ভগ্নিপতি রব্বানীর তদবিরে চাকরি পেয়েছে বলে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে পোস্ট করতেন। এসব পোস্টে কেউ কমেন্ট করলে তাকে ওই আইডি থেকে মিনহাজের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হতো। পরে ভুক্তভোগী তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে চাকরি দেওয়ার নাম করে কৌশলে অর্থ হাতিয়ে ফোন বন্ধ করে দিতেন।

- Advertisement -

এমন সব অভিযোগে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর এক তরুণী ঢাকার মতিঝিল থানায় প্রতারণার শিকার হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তার ১১ দিন পর ১৪ সেপ্টেম্বর একই থানায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক এক শিক্ষার্থীকে চাকরি পাওয়ার জন্য অর্থ দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে একটি মামলা করেন। দুটি অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সিটিটিসি ইউনিট।

পরে গত ১০ মার্চ প্রতারককে মুন্সীগঞ্জ শ্রীনগর কেউরচিরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। ওই দিন আদালত তার বিরুদ্ধে এক দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। পুলিশি রিমান্ড শেষে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন পলাশ। তিনি হবিগঞ্জের মাধবপুরের মানিকপুর (শাহজীবাজার) এলাকার ফুল মিয়ার ছেলে।

মামলার এক তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ছাত্রলীগের পরিচয়ধারী পলাশের রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই। তিনি বিভিন্ন সময় নেতাদের সঙ্গে মিছিল-মিটিংয়ে যেতেন। তবে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রব্বানীর শ্যালক পরিচয় দিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতারণা করে। গত তিন বছর ধরে পলাশ বিভিন্ন ব্যাংক, বিমান সংস্থা ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভুক্তভোগীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে তদবির বাণিজ্য করে আসছিলেন। এই সময়ে তিনি অর্ধশত ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অন্তত ৫০ লাখ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন।

পলাশের এক প্রেমিকা ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গত নভেম্বরে তার সঙ্গে পরিচয়। এর মধ্যেই ওই তরুণীর নামে খোলা ব্যাংক হিসাব নম্বরে কয়েকবার মোটা অঙ্কের টাকা আসে। কিন্তু সেই টাকার উৎস সম্পর্কে জানেন না উল্লেখ করে তিনি সমকালকে বলেন, ব্যাংকের স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করত মিনহাজ (পলাশ)। টাকা আসার পরই সে তুলে নিত। সর্বশেষ ওই হিসাব নম্বরে আসে ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া গত ১০ মার্চের পর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। ফোন ও মেসেজ করেও কোনো সন্ধান পাইনি।

পলাশের সঙ্গে প্রতারণার শিকার আরও দুই তরুণীর ফেসবুকে পরিচয় হয়। এর মধ্যে একজন মিনহাজের (পলাশ) মাধ্যমে নার্সিংয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য তাকে ৫০ হাজার টাকা দেন। পরে ভর্তি করতে পারেনি, টাকাও ফেরত দেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রতারক মিনহাজের সঙ্গে পূবালী ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার পদে চাকরি পেতে দুই লাখ টাকা চুক্তি করেন। পরে ৮০ হাজার টাকা অগ্রিম দেন। বাকি টাকা চাকরিতে যোগদানের পর দেওয়ার কথা। কিন্তু ওই টাকা নিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন এ প্রতারক। পরে বিষয়টি তিনি গোলাম রব্বানীকে জানালে ভুক্তভোগী বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

এসি আরিফুল হোসেইন তুহিন আরও বলেন, দীর্ঘ ছয় মাস তাকে ধরার জন্য অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু গ্রেপ্তার পলাশ সাধারণত এক জায়গায় বেশি দিন থাকেন না। ঢাকা, রংপুর, নড়াইল ও টাঙ্গাইলে তার চারজন প্রেমিকা রয়েছে। প্রতারণা করার পর এসব স্থানে গিয়ে তিনি আত্মগোপন করতেন। ঢাকায় থাকতেন মহানগরের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দ্বীন আহমেদ নাহিদের ছত্রছায়ায়। তার বাড়িও হবিগঞ্জে। এ ছাড়া রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার নাম এসেছে। তাদের বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles