
ধর্ম নিয়ে আমার বেসিক আন্ডারষ্টান্ডিং হলো, আমার ধর্ম অবশ্যই সত্য বলে আমি বিশ্বাস করি। সেজন্যেই আমি আমার ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, প্রার্থনাতে আন্তরিক মনোনিবেশ করতে পারি। আমার ধারনা মতে আপনিও মানে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী যারা তাঁরাও তাদের ধর্মকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন এবং সে অনুযায়ী প্রার্থনাতে মনোনিবেশ করেন বা করতে পারেন। আরো একটি বিষয় হলো সকলেই যার যার ধর্ম বিশ্বাসকে অন্যের মাঝে ছড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন, এগুলোর কোনটাই আমি সাংঘর্ষিক মনে করি না। আমি যদি আমার বা আপনি যদি আপনার ধর্মটাকে সত্য বলে মনে না করেন বা বিশ্বাস করতে না পারেন তাহলে আপনি সেই ধর্ম পালন করবেন কিভাবে? আপনার যদি আল্লাহ বা ভগবানে বিশ্বাস না থাকে তাহলে আপনি দুহাত তুলে বা করজোরে কার কাছে কী প্রার্থনা করবেন?
মূলত এই বেসিক কথাটা সবাই জানেন। তবুও কিছু লোকের লেখা পড়লে মনে হবে ইসলাম ধর্মটাই হলো সব নষ্টের মুল। তারা নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখা দিবেন, পদার্থ বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, রসায়ন, ভুগোল, ইতিহাসের রেফারেন্স টানবেন, কঠিন কঠিন শব্দের প্রয়োগ করে লেখাটাকে যথাসম্ভব দুর্বোধ্য করে তুলবেন, যত দুর্বোধ্য তত গুরুত্বপূর্ণ (!), এসব করে পাঠক যখন নাতিদীর্ঘ লেখাটা ওয়াও ওয়াও করতে করতে শেষ অংশে পৌঁছাবেন তখন দেখবেন সুক্ষ ও পরিকল্পিতভাবে ইসলাম ধর্মটাকে পঁচানোর জন্যেই এই নিরর্থক প্রচেষ্টা। পুরো লেখার সারমর্ম পবিত্র কোরান শরীফ হলো যত অশান্তির মুল ফলে কোরান যারা ফলো করেন তাদের ধর্ম অশান্তি ছাড়া আর কি ছড়াতে পারে!
এখানে মুশকিল হলো আপনি কি-ও করতে পারবেন না। আপনার ধর্ম বিশ্বাস, আপনার পোষাক, আপনার খাবার নিয়ে কটাক্ষ করা হবে, কিন্তু আপনি কিছুই বলতে পারবেন না। কিছু সংখ্যক অল্প শিক্ষিত ওয়াজকারী মৌলবীগণ ব্যাতীত কোন জ্ঞানী মুসলিমদের আমি দেখিনি তারা অন্য ধর্মকে পঁচানোর খেলায় নেমেছেন। আমাদের একটি সুরায় পরিস্কার বলা হয়েছে, লাকুম দ্বীনিকুম ওয়ালিয়া দ্বীন। যার যার ধর্ম তার তার তার কাছে। মুসলিমরা এখনো ডিফেন্সিভ খেলা খেলছেন। অর্থাৎ মুলত আত্মরক্ষা করে চলেছেন। এখন পর্যন্ত যতটুকু দেখছি সবই প্রতিপক্ষের আক্রমন থেকে নিজ ধর্ম ও গোত্রকে রক্ষা করার জাষ্ট চেষ্টা তারা করে যাচ্ছেন।
দুঃখজনক হলো, সলিমুল্লাহ খান সহ যারা সত্যিকার সেক্যুলার, সমাজের সকল ধরনের একপেশে ভাবনার, একপেশে প্রচারণার বিরুদ্ধে সকল প্রকার যুক্তি দিয়ে, রেফারেন্স দিয়ে দীর্ঘকালের প্রচলিত থিওরী, বক্তব্য ও ধারনাকে ভুল প্রমাণ করে দিচ্ছেন সেটা কখনো মাদ্রাসার সাথে তুলনা করে, আরব জাতির পুরনো ইতিহাস টেনে, তখনই তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়ে গেছে এ কারণে যে সলিমুল্লাহ খানকে যুক্তি দিয়ে ভুল প্রমাণ করাতো সম্ভব নয়, কাজেই তাকে মৌলবাদী তকমা দিতে হবে এবং জাকির নায়েকের সাথে তুলনা করতে হবে। কারণ তিনি সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছেন। তিনি শুধু বাংলা একাডেমীর অনর্থক বানান রীতি নিয়ে সমালোচনা করেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, পড়াশুনার মান বা গবেষণা নিয়ে কথা বলেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না তিনি বুদ্ধিজীবীদের ভুমিকা নিয়েও কথা বলছেন হাতে কলমে প্রমাণ দিয়ে। দুঃসাহস বটে!
যে মুহুর্তে ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতের সকল ঐতিহ্য ভেঙে, লাথি মেরে শুধুমাত্র ভোটে জেতার জন্যে একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীকে তাদের ধর্ম পরিচয়ের কারণে পদে পদে নিগৃহীত করা হচ্ছে, যে মুহুর্তে ইতিহাসের জঘন্যতম সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বাস্তবায়ন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার সেই মুহুর্তে সলিমুল্লাহ খানদেরকে মুসলিম মৌলবাদী তকমা না দিতে পারলে থলের বিড়াল বের হয়ে যাবার সুমহ সম্ভাবনা রয়েছে বৈকি! ভারতের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী নগ্নভাবে মৌলবাদী হাতিয়ারগুলোর সবগুলো ব্যবহার করে যখন বছরের পর বছর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখছেন তখন তাদের মুখে সেসব নিয়ে টু শব্দটি করতে দেখি নি।
মূল কথা হলো আপনি যদি মানুষ মানবতার কথাই বলবেন তখন নিরপেক্ষভাবেই বলবেন তা সে মুসলিম, হিন্দু বা বিজেপি কংগ্রেস বা বিএনপি আওয়ামী লীগ যাই হোক না কেন! অন্যথায় চেষ্টা করে যান, তবে মনে রাখবেন যে নৌকায় বসে আছেন সে নৌকা ডুবে গেলে আপনিও রেহাই পাবেন না।
স্কারবোরো, কানাডা