-0 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

এক‌টি সাধারন কথ‌পোকথন

এক‌টি সাধারন কথ‌পোকথন
এক‌টি সাধারন কথ‌পোকথন

-দুঃখকষ্ট কপালে ছিল তাই ভোগ কর‌ছি। কী আর করা?

– দে‌খুন, কপাল ব‌লে কিছু নেই। দুঃখকষ্ট য‌দি কিছু ভোগ ক‌রেই থা‌কেন, সেটা আপনার কর্মফল। অথবা আপনা নেয়া সিদ্ধা‌ন্তের ফল। “ইউ আর সাফা‌রিং ফর দ্য চ‌য়েশস্ ইউ হ্যাভ মেড।”

- Advertisement -

আপ‌নি চাকুরী অথবা ব্যবসা-বাণিজ্য না ক‌রে শুধু ক‌বিতা লি‌খে বেড়াচ্ছেন। আপনার ক‌বিতার বই তো কেউ প‌ড়েনা। তাই আপনার ক‌বিতার বই তো বিক্রীও হয়না। আপনার সংসার চল‌বে কেমনে? ক‌বি হওয়াটা ছিল আপনার সিদ্ধান্ত। আপনার সিদ্ধা‌ন্তের কার‌নে আজ আপনার এই আর্থিক দুর্দশা। কিন্তুু ম‌নে মনে তো আপ‌নি খু‌শি। সুখী। কারন ক‌বিতা লেখায় আপনার মন প‌রিপুষ্ট হ‌চ্ছে। প‌কেট হয়ত হ‌চ্ছেনা। আবার আবার আপনি যখন পাঠ‌কের উপ‌যোগী ক‌রে ক‌বিতা লেখা শুরু করবেন, তখন আপনার ক‌বিতার বই লক্ষ লক্ষ ক‌পি বি‌ক্রি হ‌বে। আপনার অ‌নেক অ‌নেক টাকা হ‌বে। আপ‌নি আর্থিকভা‌বে সচ্ছল হবেন। কাজেই কী ধর‌নের ক‌বিতা লিখ‌ছেন, তা‌তো আপনার সিদ্ধান্ত। আপ‌নি আপনার ভা‌লো লাগার জন্য ক‌বিতা লিখ‌ছেন না‌কি পাঠক‌রে ভা‌লো লাগার জন্য ? য‌দি দু‌টোই এক বিন্দু‌তে মি‌লে যায় তাহ‌লে তো সোনায় সোহাগা। এটাও আপার সিদ্ধা‌ন্তের ব‌্যাপার।

– আরে আমি যে গরীব ঘ‌রে/দে‌শে জন্মাইছি সেটাও কী আমার সিদ্ধান্ত ছিল? এটা আমার কপাল না? এখা‌নে কী আমার হাত আছে?

– দেখেন, মানুষ গরীব হ‌য়ে জন্মায়, এটাতে তার কোন কা‌রো হা‌তে নাই।বিষয়টা সত্য। ত‌বে কেউ য‌দি গরীব থে‌কেই মারা যায় সেখা‌নে দু‌টো কথা থা‌কেই। কারন মানুষ তার জীবন‌কে বদলা‌তে পা‌রে। মানু‌ষের ম‌ধ্যে অ‌নেক সম্ভবনা থা‌কে। প্রত্যেকটা মানুষ সম্ভবনা নি‌য়ে জন্মায়। জন্মটা গরীব ঘ‌রে হোক আর ধনীঘ‌রে হোক। মানুষ সম্ভবনা‌কে ব্যবহার ক‌রে জীব‌নের আর্থিক অবস্থা ও অবস্থান বদলা‌তে পা‌রে। সে রকম বহু উদাহরন আছে। অ‌নে‌কে গরীব ঘ‌রে জন্ম নি‌য়ে প‌রে অ‌নেক সম্পদশালী হ‌য়ে‌ছেন। অ‌নেক গরীব‌দেশ নি‌জেদের চেষ্টায় ধনী হ‌য়ে‌ছে। যেমন চীন,সিঙ্গা‌পোর, মা‌লে‌শিয়া। প‌শ্চিমা‌দের মত এঁরা অ‌ন্যের সম্পদ লুট ক‌রে ধনী হয়‌নি। ‌নি‌জের চেষ্টায় এঁরা আর্থিকভা‌বে ক্ষমতাশালী হ‌য়েছে।

আর বর্তমা‌নের তথাক‌থিত ধনী প‌রিবার বা ধনী দে‌শে জন্ম নি‌লেই যে সে সুখী ও সমৃদ্ধশালী হ‌বে বা হ‌য়ে‌ছে সে ধারনা ভুল। দ‌রিদ্র প‌রিবা‌র ও দ‌রিদ্র দেশগু‌লো‌তে যেমন নানা ধর‌নের সমস্যা থা‌কে, আবার ধনী দেশ ও ধনী প‌রিবারগু‌লো‌তে নানা ধর‌নের সমস্যা থা‌কে। এখা‌নে শুধু সমস্যার ধরন আলাদা। ধনীদে‌শে বা পরিবা‌রে জন্ম নি‌লেই যে সে মানুষগু‌লো সুখী, কথাটা ঠিক না। ধনী দেশলোতে অ‌তি‌রিক্ত ভোগবা‌দিতার কার‌নে সাধারন মানুষ বি‌শেষ ক‌রে যুব সমাজ সি‌রিয়াস সব মান‌সিক রোগ ও নানারকম আস‌ক্তি‌তে ভুগ‌ছে। ধনী দেশগু‌লো‌তে সুইসা‌ইডের হার অত্যান্ত বেশী।

আপনার সম্পদ, যশ, প্রতিপ‌ত্তি যত বেশী হ‌বে, আপনার মান‌সিক চাপও তত বাড়‌বে। ‌সেই চাপ কমা‌তে আপ‌নি নানারকম অসামা‌জিক কার্যকলা‌পের শরনাপন্ন হ‌চ্ছেন। ধনী ও শ‌ক্তিশালী হ‌লে আপনার আরাম হয়ত বাড়‌বে সা‌থে দুঃখও বাড়‌বে। কষ্টও বাড়‌বে।

গরীব হ‌লে ভা‌লো খাবার, ভা‌লো ঘরবা‌ড়ি, ভা‌লো চি‌কিৎসা পে‌তে কষ্ট হয়। আবার শরীরে রোগবালাই লে‌গেই থা‌কে। তা‌তেও দুঃখ বা‌ড়ে, বা‌ড়ে কষ্ট। তাহ‌লে আপ‌নি নি‌বেন কোনটা?

চ‌য়েশ ইজ ইয়োরস্।

মোদ্দা কথা হচ্ছে, দুঃখকষ্ট, সুখশা‌ন্তি ম‌নের ব্যাপার-স্যাপার। অ‌নেক সম্প‌দ থাকা বা না থাকার সা‌থে এটার খুব বে‌শি সম্পর্ক নেই। ত‌বে নিজের সম্প‌র্কে ভা‌লো জ্ঞান থাক‌লে সুখী হওয়া সম্ভব। দুঃখকষ্টও লাঘব করা সম্ভব। কারন এগু‌লো তো অনুভব করার বিষয়। অন্যের কথায় নয়, নি‌জে নি‌জে‌কে জানুন, নিজের শরীর‌কে জানুন, মন‌কে জানুন, সে মোতা‌বেক সিদ্ধান্ত নিন। দুঃখকষ্ট দূ‌রে থা‌কবে। কপা‌লের ওপর নির্ভরশীলতা কম‌বে।

টরন্টো, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles