
বর্তমানে কানাডায় নতুনদের জন্য টিকে থাকা এক কথায় একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তার প্রধান কারণ হলো, কাজ খুঁজে না পাওয়া। তবে কাজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, কানাডায় টিকে থাকা যাচ্ছে না এই মুখস্থ কথাটা তাবিজ বানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে বেড়ালে আপনি কখনোই কানাডায় টিকে থাকতে পারবেন না।
কানাডায় যারা আগে এসেছেন, মোটামুটি যে কোনো একটা কাজে নিয়োজিত আছেন আমি তাদের অবশ্যই সৌভাগ্যবান বলব। কাজটা আপনি কী করছেন সেটা বড়ো ব্যাপার না। আপনি একটা কাজ করছেন এটাই ব্যাপার।
কানাডায় টিকে থাকার মূল মন্ত্র হলো কঠিনচিত্তে পরিশ্রমী হওয়া। আমরা কাজ করার চেয়ে স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। অলসতায় গা ভাসিয়ে ঘুরে বেড়াতে দারুণ লাগে। সোজাসুজি উপায়ে সকল ধরণের সুবিধা পেতে মুখিয়ে থাকি। Tie-toe of expectation but doing nothing to be hardworking.
কানাডায় বয়সের কোঠা পঁয়ষট্টিতে পৌঁছালে অবসর নেওয়া যায় কাজ থেকে। তবে সেটা বাধ্যতামূলক নয়। কেউ ইচ্ছে করলে আরো অনেক বছর কাজ চালিয়ে যেতে পারে। আমরা তো বয়স পঞ্চাশে পৌঁছালেই গণনা শুরু করি পঁয়ষট্টি কবে হবে! অবসরে যাব। তাও তো যারা কাজে আছে তারা ভাবে। বাকিরা তো জাস্ট অলসতায় বিলাসিতা খুঁজে নেয়। কাজে কর্মে থাকে না। আর অন্য দেশিরা পঁয়ষট্টি পেরিয়ে পঁচাত্তর গড়ায় তাও কাজ করতে থাকে। আমি কয়েকটা উদাহরণ দিচ্ছি। কিন্তু আপনারা তো আবার বলবেন, আপনি কেন কয়েকটা উদাহরণ দিয়ে সমগ্র কানাডাকে বোঝাচ্ছেন?
ভাই-ব্রাদার, শোনেন, একজনের উদাহরণ দিয়ে যদি আপনাদের একজনকেও উৎসাহিত করা যায় তাতে অনেক কিছু।
কানাডায় কাজ করে, কষ্ট করে জীবনে অনেক দূরে যাওয়া সম্ভব। আগে যতটা কষ্ট করতে হতো এখন তারচেয়ে অনেক বেশিই করতে হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আমার husband এর একজন অন্য দেশি মুসলিম কলিগ আছে। তার নাম হলো ইব্রাহিম। ইব্রাহিমের বাবা-মা দীর্ঘ দিন আগে ভারতের গুজরাট থেকে আফ্রিকায় চলে আসেন। পরে ইব্রাহিম ও তার ভাই কানাডায় চলে আসেন। তারা ইমিগ্রান্ট। ইব্রাহিম কাজ করছেন অটোমোটিভ টেকনিশিয়ান হিসেবে। আর তার ভাই একজন ডাক্তার। অন্টারিওর Mississauga শহরে তিনি ডাক্তারি পেশায় নিযুক্ত আছেন।
আমি ইব্রাহিমকে দিয়ে উদাহরণটা দিতে চাচ্ছি। ইব্রাহিমের বর্তমান বয়স কতো অনুমান করতে পারবেন? তিনি নিজে মুখে তার বয়সের কথা আমার husband কে বলেছেন গতকাল। পাকা চুয়াত্তর বছর। তার বউয়ের বয়স পঁচাত্তর বছর। এক বছরের বড়ো বরের চেয়ে।
ইব্রাহিম এখনো পর্যন্ত ফুল টাইম কাজ করে যাচ্ছেন এবং সেটা হালকা কোনো কাজ না। অটোমোটিভের কী কাজ হতে পারে তা তো আপনাদের জানা। শক্তি-এনার্জি দরকার খুব।
আর ইব্রাহিমের বউও এখনো পার্ট টাইম কাজ করেন।
এখন তো আপনারা বলবেন, কী দরকার কানাডায় যাওয়ার? এত বয়সেও কাজ করতে হচ্ছে?
এখানেই তো কবি নীরব থাকছে। ইব্রাহিম আমার husband কে বলেছেন, জানো রশীদ, আমার বয়সের অনেকেই মা*রা গেছে। আমি এখনো শারীরিকভাবে ভালো আছি শুধুমাত্র কাজ করছি বলে।
কাজ করলে আর্থিকভাবে নয় শুধু, শারীরিকভাবেও যথেষ্ট ভালো থাকা যায়।
আমার ম্যানেজার যিনি তার নাম হলো মিশেল। তারও বয়স চুয়াত্তর বছর। পাকা চুয়াত্তর। তিনি এখনো পর্যন্ত ফুল টাইম কাজ করে যাচ্ছেন। অসম্ভব stress নিয়ে কাজ করেন। তিনি কখনোই ছুটি নিতে পারেন না এমন অবস্থা। আরেকজন কলিগ তার বয়সও তিহাত্তর বছর। তিনি যে স্পিডে কাজ করতে পারেন আমার সে পর্যায়ে পৌঁছাতে আজীবনও লাগতে পারে।
চেষ্টা করুন কাজ পাবেন। দেরি হবে হয়তো। প্রচণ্ড পরিশ্রমী হবেন। সাফল্যের হাত ধরতে পারবেন।
টরন্টো, কানাডা।