5.2 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৩, ২০২৫

যুবকদের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেয়াই নেশা মমতাজের

যুবকদের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেয়াই নেশা মমতাজের

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মধ্যম মাহমুদাবাদ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ জাফর। পেশায় একজন চা দোকানি। একদিন তাকে নিজের একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়েছিলেন এক নারী। সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার লোগোযুক্ত ভিজিটিং কার্ডটিতে ঐ নারীর নাম লেখা ছিল- মমতাজ বেগম (ওয়ারিশিকা), পদবী- প্রাইম মিনিস্টার’স অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার।

- Advertisement -

কার্ডটি পেয়ে জাফর ধরেই নিয়েছিলেন- হয়তো এবার কপাল খুলে গেছে তার। কারণ সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা জাফরের ছেলেকে উক্ত গোয়েন্দা সংস্থায় ‘ওয়াচার কনস্টেবল’ পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন ঐ নারী।

এ নিয়ে দুজনের মধ্যে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী- মমতাজ নামের ঐ নারীকে ছয় লাখ টাকা দিতে হবে জাফরের। বিনিময়ে জাফরের ছেলেকে চাকরি দেবেন মমতাজ। ১০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্পে হাওলাতনামাও সম্পন্ন করেন তারা।

এরপর প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো চাকরি পাননি জাফরের ছেলে। পাননি সেই টাকা ফেরতও। তবে শুধু জাফর নয়, এভাবে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তিন বছরে অন্তত ৩০ জনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মমতাজ।

জানা গেছে, মমতাজের বাড়ি সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের শেখেরহাট এলাকায়। তার বাবার নাম এমদাদ হোসেন। ২০০৯ সালে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মধ্যম মাহমুদাবাদ এলাকার মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় মমতাজের। মুজিবুর রহমান স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

২০১২ চট্টগ্রাম কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করে একটি বেসরকারি এনজিওতে জুনিয়র অফিসার হিসেবে যোগ দেন মমতাজ। সেখানে কয়েক বছর চাকরি করার পর ২০২১ সাল থেকে সবাইকে জানাতে থাকেন- গোয়েন্দা সংস্থায় চাকরি হয়েছে তার। এরপর থেকে বেশিরভাগ সময় বাবার বাড়িতে থাকতেন তিনি।

গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের টার্গেট করে গোয়েন্দা সংস্থায় বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ফাঁদে ফেলতেন মমতাজ। এরপর হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা। নিজেকে কখনো প্রধানমন্ত্রীর অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার, কখনো অ্যাসিসটেন্ট ডিরেক্টর (এডি), কখনো গোয়েন্দা সংস্থার নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ও ক্রাইম ইনভেস্টিগেইট উপ-পরিচালক হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি।

তবে রক্ষা হয়নি প্রতারক মমতাজের। শেষ পর্যন্ত তিনি ধরা পড়েছেন র‍্যাবের জালে। এরপরই বেরিয়ে এসেছে তার এসব ভয়াবহ প্রতারণার তথ্য।

বুধবার সীতাকুণ্ডের প্রেমতলা কলেজ রোড এলাকা থেকে মমতাজকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে ৯৬০টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। একইদিন বাড়বকুণ্ড এলাকা থেকে মমতাজের স্বামী মুজিবুর রহমানকেও গ্রেফতার করে র‍্যাব।

অপর এক প্রতারণার বর্ণনায় র‍্যাব জানায়, এসএসসি পাসের পর চাকরির জন্য চেষ্টা করে আসছিলেন মঞ্জুর আলম নামের এক যুবক। ২০২১ সালে ভাগনীর বিয়েতে মমতাজ বেগমের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এ সময় মমতাজ নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার উপ-পরিচালক পরিচয় দেন। মঞ্জুর আলমকে ঐ গোয়েন্দা সংস্থায় ‘ফিল্ড অফিসার’ পদে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেন মমতাজ। এজন্য ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এরপর বিষয়টি মঞ্জুর অপর চাকরিপ্রত্যাশী তার বোন জামাই, মামা ও বন্ধুকে জানালে সবাই মিলে মমতাজের বাড়িতে যান। তখন মমতাজের স্বামী মুজিবুর সবাইকে চাকরি দিতে পারবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

উক্ত আশ্বাসে ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর মঞ্জুর আলম ১২ লাখ ৫০ হাজার, তার মামা একরাম হোসেন সাত লাখ ৫০ হাজার, তার বন্ধু নয়ন দুই লাখ ২৫ হাজার এবং তার বোন জামাই ১২ লাখ টাকাসহ মোট ৩৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা মমতাজকে দেন। উক্ত টাকার সিকিউরিটি হিসেবে তাদের ষ্ট্যাম্পে লিখিত অঙ্গীকারনামা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৪ লাখ ২৫ হাজার টাকার পাঁচটি চেক দেন মমতাজ। কিন্তু দীর্ঘ আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও চাকরি দিতে ব্যর্থ হন তিনি।

পরবর্তীতে চাকরিপ্রত্যাশী ভুক্তভোগীরা খোঁজ নিয়ে মমতাজের গোয়েন্দা সংস্থার ভুয়া পরিচয় ব্যবহার ও প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর তারা প্রদত্ত টাকা ফেরত চাইলে মমতাজ ও তার স্বামী তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করেন।

র‍্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মোহাম্মদ শরীফ-উল-আলম বলেন, ভুক্তভোগী ও চাকরি প্রত্যাশীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত প্রতারক চক্রকে ধরতে নজরদারি ও ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে র‍্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ডের প্রেমতলা কলেজ রোড এলাকায় বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মমতাজ বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যে শয়নকক্ষের খাটের নিচ থেকে পলিব্যাগে থাকা ৯৬০টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে প্রতারণায় ব্যবহৃত নানা কাগজপত্রও উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে একইদিন রাতে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মাহমুদাবাদ দীঘিরপাড় এলাকার বাড়ি থেকে মমতাজের স্বামী মুজিবুর রহমানকেও গ্রেফতার করা হয়।

র‍্যাব কর্মকর্তা শরীফ-উল-আলম আরো বলেন, গ্রেফতারের পর স্ত্রীর ভুয়া পরিচয়ে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্নজনের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন মুজিবুর। এছাড়া মমতাজ দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেও জানান তিনি। পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে দুজনকে সীতাকুণ্ড থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

সূত্র : বিডি২৪লাইভ

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles