ভদ্রলোক পাঁচ ছয়ঘন্টা কাজ করলেন আমাদের বাসার সামনে এবং পেছনের ইয়ার্ডে। আমার স্ত্রী এবং কন্যা তাকে যথাসাধ্য হেল্প করলেন, সমানতালে কাজটাও এগিয়ে নিলেন। কাজ করার সময় ভদ্রলোক দুঃখ প্রকাশ করে বললেন তিনি বিশ লক্ষ টাকা খরচ করে কানাডায় এসেছেন। যদি আগে জানতেন এখানকার অবস্হা এমন তাহলে কখনোই আসতেন না। বাংলাদেশে তার কৃষি কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে, এই টাকা দিয়ে তিনি কৃষি ফার্ম করে ভালমত থাকতে পারতেন!
যাহোক কাজ শেষ হলে আমার স্ত্রী তার কাজের প্রশংসা করলেন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কত দিতে হবে। আমি বললাম, অন্টারিও গভর্নমেন্টের বর্তমান আইন অনুযায়ী মিনিমাম পে ১৬.৫৫ ডলার প্রতি ঘন্টা। সাড়ে পাঁচ ঘন্টা নেট কাজ করেছেন তিনি। ধরো ছয় ঘন্টা। তাহলে তিনি পাবেন একশত ডলার। সাথে কিছু বখশিশ দিয়ে দাও। আমার কন্যা আগেই বখশিশ দিয়ে রেখেছিল, এবার আরো কিছু যোগ করে মোট একশত চল্লিশ ডলার তাকে পে করা হলো। আশা করি তিনি খুশী হয়েছেন।
তবে কথাগুলি কেন এখানে লিখলাম তার কারণ আমি চাই আমরা যারা একদিন দুদিনের জন্যে কাউকে ডেকে এনে হেল্প নেই, আমাদের উচিত তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে অথবা ক্যাশে দিচ্ছি বলে ঘন্টায় দশ ডলার বারো ডলার না দেয়া বা মিনিমাম পে’র নীচে না দেয়া। তা তিনি যে দেশের লোকই হোক না কেন।
অপর আর একটা কথা না বললেই নয় সেটা হলো বাংলাদেশ এবং কানাডার কিছু অসৎ আদম ব্যবসায়ীদের প্রলোভনে পরে বিশ বাইশ লক্ষ টাকা খরচ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কানাডা বা অন্য কোন দেশে আসবেন না। এই টাকা দিয়ে দেশেই একটা কিছু ভালমত করতে পারবেন এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
আর যদি বিদেশে আসতেই হয়, কিছু বেসিক বিষয়ে ট্রেনিং নিয়ে তারপর আসুন যেমন বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির কাজ, প্লাম্বিং এর কাজ, বেসিক কম্পিউটারের কাজ ইত্যাদি। এসব বিষয়ে গণসচেতনতা গড়তে খুব শীঘ্রই আমরা কিছু উদ্যোগ নিতে সক্ষম হবো বলে আশা করি। যারা অলরেডি এই দেশে এসে গেছেন, তাদেরকে সাহায্য করা আমাদের দায়িত্ব। কিছু কাজ আছে যেগুলোর যথাযথ প্রসিডিউর ফলো করলে আর ওয়ার্ক পারমিট থাকলে আপনি কাজ পাবেন ইনশাআল্লাহ। হতাশ হবার কিছু নেই।
এখানে আসার পর থেকে একটা কথা শুনছি, কেউ যদি ডিশ ওয়াশিং এর কাজও খুঁজেন, তাকে জিজ্ঞেস করা হয় তার কানাডিয়ান অভিজ্ঞতা আছে কিনা!
সেই দিক থেকে বলবো, Masala King রেষ্টুরেন্টের Maksuda Khatun আপা চমৎকার কাজ করছেন। তাঁর মত রেস্টুরেন্টে যদি দু সপ্তাহ বা মাস খানেকের একটা জব করে আপনার অভিজ্ঞতা নিতে পারেন তখন আপনি এই দেশে অবাঙালী রেষ্টুরেন্টগুলোতেও বুক ফুলিয়ে বলতে পারবেন, ইয়েস আপনার কানাডিয়ান অভিজ্ঞতা আছে।
নিউইয়র্কে দেখেছি, প্রচুর বাংলাদেশী কনস্ট্রাকশন ফার্ম আছে যেখানে অধিকাংশই বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করেন। কানাডায় যারা বিল্ডার হিসেবে নাম লিখিয়েছেন আমার বিশ্বাস তারাও বাংলাদেশী শ্রমিক হায়ার করছেন।
মোট কথা নুতনদের সাহায্য না করলে তাদের কেউ যদি ইটন সেন্টারের সামনে হোমলেস হিসেবে মানুষের কাছে হাত পাতা শুরু করেন তাহলে বাংলাদেশী হিসেবে সকলেরই বদনাম হবে। আসুন সকলে সকলের সাধ্য অনুযায়ী একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে আসি, ইনশাআল্লাহ কানাডায় একদিন বাংলাদেশী সকলেই আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো।