
এ এক আজব বিয়ে! ছাদনাতলার বদলে বর ও কনের চারহাত এক হলো শ্মশানে। সেখানেই হলো মালা বদল। সদ্য মাতৃহারা মেয়ে পল্লবী মুখোপাধ্যায় তার মায়ের ইচ্ছাপূরণের জন্যই এমন কাজ করেছেন। ভারতের পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার রটন্তীকালী মন্দির সংলগ্ন শ্মশানে মায়ের মৃতদেহের সামনেই প্রেমিকের গলায় মালা পরিয়েছেন তিনি। মালাবদল পর্ব শেষ হতেই প্রেমিকার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন প্রেমিক জয়দীপ অধিকারী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, পল্লবীর বাড়ি গুসকরা শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ পল্লীতে। পল্লবীর বাবা ভবানী মুখোপাধ্যায় পেশায় ব্যবসায়ী। তার ওষুধের দোকান রয়েছে। মা নিলীমাদেবী ও বাবা ভবানীবাবুর একমাত্র সন্তান পল্লবী। স্নাতক উত্তীর্ণ পল্লবী কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। তাই তাকে কলকাতাতেই থাকতে হতো। জয়দীপের সঙ্গে কয়েক বছর আগে থেকেই পল্লবীর ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুজনের পরিবারই বিষয়টি জানতো। পল্লবী ও জয়দীপ বিয়ে করবেন বলেও ঠিক ছিল। তবে পল্লবী বিয়ে নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চাইছিলেন না। তবে নিলীমাদেবী চাইতেন তার মেয়ে তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিক।
পরিবার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বুধবার পল্লবীর মা নিলীমাদেবী বাড়িতে একাই ছিলেন। কিন্তু কোনো কারণে তিনি আত্মহত্যা করেন। তার স্বামী ভবানী মুখোপাধ্যায় বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে মৃত অবস্থায় দেখে পুলিশে খবর দেন। ময়নাতদন্তের পর ওই রাতেই নিলীমাদেবীর দেহ গুসকরা শহরে রটন্তীকালী শ্মশানে দাহ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
নিলীমাদেবী চেয়েছিলেন তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে দ্রুত হোক। এই ইচ্ছা হামেশাই প্রকাশ করতেন তিনি। তাই মায়ের সেই ইচ্ছা পূরণ না করে মায়ের দেহ সৎকার করার বিষয়টি পল্লবী মন থেকে মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই বুধবার রাতে শ্মশানে মায়ের দেহ সৎকার করার আগে মেয়ে পল্লবী তার মায়ের মৃতদেহের সামনেই প্রেমিক জয়দীপের গলায় মালা পরিয়ে দেন। জয়দীপ তার প্রেমিকার সিঁথিতে পরিয়ে দেন সিঁদুর।
জয়দীপের বাবা মলয়বাবু বলেন, বিয়েটা অন্যরকমভাবে হলো বলে অনেকে অবাক হচ্ছেন। তবে মায়ের ইচ্ছা পূরণের জন্যে মেয়ে পল্লবী যে দৃষ্টান্ত তৈরি করল তা মায়ের প্রতি সন্তানের ভক্তিরই প্রকাশ। কিছুদিন পর ছেলের বিয়ে উপলক্ষ্যে একটা অনুষ্ঠান কববেন বলে মলয়বাবু জানান।