
সাবেক স্ত্রী নিপা আক্তারকে খুব ভালোবাসে মো. শফিক। তার সঙ্গে আবারও সংসার করতে চায়। তবে নিপা তার মতো আবেগি নয়, বরং হিসেবি। লোভী বললেও হয়তো ভুল হবে না। সে শফিকের অপরাধ সম্পৃক্ততার কথা জানে। তাই শর্ত দেয়, ‘যদি একটা বড় দাঁও মারতে (চুরি করতে) পারো, তাইলে আইবা’। নিপার সঙ্গে থাকার জন্য চুরি করা কোনো বিষয়ই না শফিকের কাছে। তাই নগদ টাকা-গহনা যা পায়, এনে তুলে দেয় প্রিয় মানুষের হাতে। তারপরও গল্পের মধুর সমাপ্তি হয় না। কারণ মালপত্র হাতিয়ে নেওয়ার পর খোদ নিপাই সাবেক স্বামীকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। আর এমন ঘটনা শুধু একবার নয়, বেশ কয়েকবার ঘটেছে।
সম্প্রতি রাজধানীর লালবাগের একটি চুরির মামলার তদন্তে নেমে শফিক ও নিপাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ‘বিয়ের প্রলোভনে’ চুরি করানোর তথ্য।
ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মশিউর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার শফিক মাদকসেবী এবং বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনায় জড়িত। তার বিরুদ্ধে অন্তত আটটি মামলা আছে। সর্বশেষ লালবাগের আতশখানা লেনের ১৮/১ নম্বর বাসার দোতলার ফ্ল্যাট থেকে নগদ ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা ও ২ ভরি ১০ আনা ওজনের স্বর্ণালংকার চুরির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। উদ্ধার করা টাকা ও স্বর্ণালংকার আদালতের অনুমতি নিয়ে গতকাল সোমবার ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছেন ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তদন্ত সূত্র জানায়, প্রায় ১০ বছর আগে নিপার সঙ্গে শফিকের বিয়ে হয়। তাদের একটি ছেলে আছে। চার বছর আগে দু’জনের বিচ্ছেদ হয়। আসলে নিপাই সংসার করতে চায়নি। পরে সে আরেক যুবককে বিয়ে করে। শফিক অবশ্য তাকে ভুলতে পারেনি। তাই নিয়মিত যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছে। এমনকি প্রতিবার চুরি করেই সাবেক স্ত্রীকে ফোন করে বিষয়টি জানাত। এরপর সব মালপত্র তার হাতে তুলে দিত। নিপা প্রতিবারই তাকে আশ্বস্ত করত– তারা আবারও ঘর বাঁধবে। তবে আরও বেশি টাকা-গহনা চুরি করতে হবে। শফিক ক্লান্তিহীনভাবে সেই চেষ্টা চালিয়েছে। ফলে বিচ্ছেদের পর আরও দু’বার ‘মৌখিক বিয়ে’র (কোনো আনুষ্ঠানিকতা হয়নি) মাধ্যমে তারা কিছুদিন একসঙ্গে থেকেছে। এরপর আবারও বিচ্ছেদ। একইভাবে নিপার বর্তমান স্বামীর সঙ্গেও তার দু’বার বিচ্ছেদ হয়েছে। তৃতীয় দফায় আবারও তারা একসঙ্গে থাকছে।
ডিবি লালবাগ বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ দলের সহকারী কমিশনার ফজলুল হক বলেন, এবারের ঈদুল ফিতরের আগে নিপা নতুন টোপ ফেলে। শফিক যদি বড় রকমের চুরি করতে পারে, তাহলে তারা একসঙ্গে ঈদ করবে। আবারও সংসার করবে। তবে ঈদের আগে উপযুক্ত সুযোগ পায়নি শফিক। অবশেষে ১৫ এপ্রিল রাতে সে আতশখানা লেনে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রানার ফাঁকা বাসায় হানা দেয়। ওই সময় ব্যবসায়ী সপরিবারে কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দ্রুতই শফিককে শনাক্ত করা হয়। এরপর ৫ মে হাজারীবাগের স্যার শাহাজাহান মার্কেট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তার দেওয়া তথ্যে হাজারীবাগের বৌবাজার এলাকার বাসা থেকে নিপাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শফিক চুরির বিষয়টি স্বীকার করে এবং তার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। জেরার মুখে অন্তঃসত্ত্বা নিপাও দায় স্বীকার করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় চুরির সব স্বর্ণালংকার।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি লালবাগ বিভাগের এসআই শরীফুল ইসলাম জানান, নিপা তার সাবেক স্বামীকে চুরি করতে বললেও নিজে সবসময় নিরাপদে থাকার চেষ্টা করেছে।