23.7 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, জুলাই ৪, ২০২৪

মাওয়াই দ্বীপ – তিন

মাওয়াই দ্বীপ - তিন
আমি সূর্যের তাপে অস্থির হয়ে সৈকত ছেড়ে ওপরের দিকে উঠে এলাম ছায়া সুনিবিড় জায়গাটি

আমি সূর্যের তাপে অস্থির হয়ে সৈকত ছেড়ে ওপরের দিকে উঠে এলাম। ছায়া সুনিবিড় জায়গাটি । বিশাল গাছগুলো ছায়া বিলিয়ে যাচ্ছে উদারভাবে। কিছু মানুষ নিচে বেঞ্চে বসে প্রকৃতি উপভোগ করছে। কেউ খাওয়া দাওয়া করছে আর কেউ কেউ চাদর বিছিয়ে আরাম করে গাছের নিচে শুয়ে আছে। আমিও একটি বড় গাছের ছায়ায় হেলান দিয়ে বসলাম । একটি শালিক উড়ে এসে ঠিক আমাদের পাশটিতে দাঁড়ালো । তারপর দুটি , তিনটি অবশেষে এক ঝাঁক শালিক জড়ো হোল একই জায়গায়। মনে মনে ভেবে নিলাম আজ বোধয় শালিকদের কোন জরুরি সভা আছে।

ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেলো। এক শালিকে দুঃখ , দুই শালিকে আনন্দ, তিন শালিকে চিঠি , চার শালিকে অতিথি। এই কথাগুলো মনে প্রানে বিশ্বাস ও করতাম। এক শালিক দেখলে মন খারাপের শেষ ছিলো না , মনে হতো না জানি কি দুঃখ অপেক্ষা করছে। তেমনি দুই শালিক দেখলে আনন্দে লাফিয়ে উঠতাম। চিঠি দেয়ার কেউ ছিলো না তবু মনে হতো আজ যখন তিন শালিক দেখেছি চিঠি একটা আসবেই। যদিও কোন দিনও একটা চিঠিও আসেনি। আজ এক ঝাঁক শালিক আমার আশে পাশে ঘুরা ঘুরি করছে আজ আমি কি ভাববো জানি না। এতো কাছ থেকে শালিক পাখি আমি কখনো দেখিনি তাও আবার এতো গুলো এক সাথে। হঠাৎ করে মনে হোল মানুষ কেনো বলে হরিন চোখ ? কেনো বলে না শালিক চোখ । আজ যেনো শালিকের চোখ আবিস্কার করলাম নতুন ভাবে। শালিকের চোখের চারপাশে যে এত সুন্দর করে শৈল্পিক ভাবে হালকা হলুদ রঙে আঁকা তা তো কখনো খেয়াল করে দেখিনি। শালিকের হলুদ পা নিয়ে কতো কবিতা, কিন্তু শালিকের চোখ নিয়ে কেউ কিছু লিখলো না ভেবে পেলাম না। হয়তো লিখেছে আমি পড়িনি । আমি ভেবে নিলাম আমি কোনো দিন লিখব, শালিকের চোখের চারপাশে আঁকা টানা চোখের মতো চোখের কথা।

- Advertisement -

বিমান বন্দরে নেমেই যে গাড়ীটি ভারা করে নিয়েছিলাম। সে গাড়ী নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি দ্বীপের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। আমি এখানে এসে নানা ভাবে মুগ্ধ হচ্ছি , কখনো সমুদ্রের ঢেউ দেখে,কখনো মুগ্ধ হচ্ছি জড়াজড়ি করে হেলে পড়া নারিকেল গাছের সারি দেখে। কখনো মুগ্ধ হচ্ছি বিশাল গাছগুলো দেখে, যে গাছগুলো অনেকটা জায়গা জুড়ে ছায়া বিলিয়ে যাচ্ছে । দিনের সমুদ্র দেখে মুগ্ধ হয়েছি একভাবে। সূর্যের আলো পানিতে পড়ে নীল পানির মাঝে রুপালি রঙের ঝিলিমিলি খেলা। সমুদ্রের ঢেউ ঝলাৎ ঝলাৎ করে তীরে এসে হুমড়ি খাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে কোনো এক তরুণীর উচ্ছল হাসি। রাতের সমুদ্র দেখে বিষণ্ণ হয়েছি, বড় ক্লান্ত মনে হয়েছে তাকে। নীল পানিতে কালো রঙের ছোপ । দেখে মনে হয় সারাদিন কাজের পরে কোনো এক ক্লান্ত রমণী ।

প্রকৃতি উজার করে বিলিয়ে দিয়েছে তার সৌন্দয্য দ্বীপটিতে । কৃত্রিমতার ছোঁয়া নেই কোথাও । সে জন্য এই দ্বীপটিকে ইংরেজিতে বলা হয় “ un tuched iland”. এক এলাকা থেকে আরেক এলাকাতে ঘুরে বেড়াচ্ছি । যখন যেখানে যাই এটাই মনে হয় শ্রেষ্ঠ । কাকে আমি প্রথম স্থান দেবো ভেবে পাই না। দেখে মনে হচ্ছে যেনো স্বর্গ নেমে এসেছে পৃথিবীতে ।

আমি এমন একটা মানুষ কোথাও গিয়ে কেনা কাটা না করতে পারলে আমার প্রান ভরে না। মনে হয় ভ্রমণটা আমার অসম্পূর্ণ থেকে গেলো । আমার স্বামী কথাটা খুব ভালো করেই জানেন। “ক্যায়াই “ যে ছোট শহরটি যেখানে আমাদের হোটেল সেখান থেকে আধা ঘণ্টা দূরে আরেকটি শহর ‘লাহাইনা’ সেদিকে রওয়ানা হলাম। শহরটি দেখবো আর আমার বিশেষ আকর্ষণ হাওয়াইর স্থানীয় ট্রেডিশনাল কিছু জিনিস কিনবো ।

আমাদের ভাড়া করা ছোট গাড়ীটি ছুটে চলেছে আমাদের গন্তব্যে । দু’ পাশে আখের বাগান। বাতাসে ঢেউ খেলে যাচ্ছে আঁখের পাতায়। অসাধারন সুন্দর একটি দৃশ্য । আমি আর আমার স্বামী এক সঙ্গে গেয়ে উঠলাম ‘ ধানের ক্ষেতে ঢেউ খেলানো এমন কোথাও নাইরে’। যদিও এগুলো ছিলো আখ ক্ষেত । মনে মনে ভেবে নিলাম গানের রচয়িতা যদি এপথ দিয়ে যেতেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই লিখতেন ‘ আখের ক্ষেতে ঢেউ খেলানো এমন কোথাও নাইরে’। আখ ক্ষেত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছে বিশাল কিছু গাছ এবং পাম গাছের সারি। প্রবল বাতাস গাছগুলোর উল্টো দিক থেকে আসাতে বাতাস খেলে গেছে গাছের পাতার উল্টোদিকে । উল্টো দিকের বাতাস পাম গাছের পাতাগুলকে এমন ভাবে দোলা দিচ্ছে মনে হচ্ছে যেনো ,সমুদ্রের শীতল বাতাস- সাগর পারে দাঁড়িয়ে থাকা কোনো রমণীর এলো কেশ উড়িয়ে নিয়ে চলেছে।

আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যে। গাড়ী সাগরের পাশে পার্ক করে নেমে পড়লাম । আমাদের চোখের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো এক বিস্ময় । বিশাল এক বট গাছ বিপুল পরিমান জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার বংশ ধরদের নিয়ে। মুল বট গাছটির শাখা প্রশাখা যেখানেই মাটিকে স্পর্শ করেছে সেখানেই জেগে উঠেছে আরেকটি গাছ। এভাবে মোটামুটি বিশটি বট গাছ মুল গাছটি ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছিলো যেনো রূপকথার গল্পের ঠাকুরমার ঝুলির ঠাকুর মা ঝুলি ভর্তি করে তার ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনীদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ এক অসাধারন দৃশ্য । আমাদের লাহিনাতে ভ্রমন আর হাওয়াইনদের হাতে তৈরি কিছু জিনিস কেনাকাটা করে আবার একই পথে অপরুপ দৃশ্য অবলোকন করতে করতে ফিরে এলাম।

ম্যাল্টন, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles