23.7 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, জুলাই ৪, ২০২৪

অনলাইনে যৌন ব্যবসায় নামতে বাধ্য হয়েছে শতাধিক তরুণী

অনলাইনে যৌন ব্যবসায় নামতে বাধ্য হয়েছে শতাধিক তরুণী
প্রতীকী ছবি

মেডিকেলে পড়ুয়া দুই খালাতো ভাই মেহেদী হাসান ও শেখ জাহিদ বিন সুজনের ফাঁদে পড়ে অনলাইনে যৌন ব্যবসায় নামতে বাধ্য হয়েছে শতাধিক তরুণী। ভুয়া ফেসবুক আইডি ও পেজ খুলে ফ্রিল্যান্সিং কাজ, লোভনীয় চাকরি, মডেল বানানো, মেধা অন্বেষণের নামে অল্প বয়সী তরুণীদের প্রথমে আকর্ষণ করত তারা।

কেউ তাদের ফাঁদে পা দিলেই মডেল করার কথা বলে তুলে রাখা হতো আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও। এক পর্যায়ে সেসব ছবি ও ভিডিও দিয়ে শুরু হতো ব্ল্যাকমেইল। অনলাইনে যৌন ব্যবসায় না নামলে দেওয়া হতো ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি। একসময় বাধ্য হয়ে মেহেদী ও জাহিদের যৌনদাসীতে পরিণত হতো তারা।

- Advertisement -

গত কয়েক দিনে ঢাকা, চাঁদপুর, যশোর ও সাতক্ষীরা থেকে এই চক্রের হোতা মেহেদী, জাহিদসহ তাদের ছয় সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন সময় তরুণীদের স্পর্শকাতর ১০ লাখ ছবি ও ২০ হাজার ভিডিও ধারণ করে সংরক্ষণ করেছে মেহেদী ও জাহিদের চক্র। এসব ছবি ও ভিডিও তারা ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন মানুষের কাছে বিক্রি করত। এর মাধ্যমে চক্রটি গত আট বছরে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া তাদের ভিডিও কলের গ্রুপে পেইড সদস্য তিন লাখ। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

গ্রেপ্তাররা হলো চক্রের হোতা গাজীপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান ও তার খালাতো ভাই ঢাকা ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী শেখ জাহিদ বিন সুজন, তাদের সহযোগী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান কাকন, তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ দীপ্ত, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাদাত আল মুইজ, বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়না ইসলাম, সৈয়দ হাসিবুর রহমান ও সুস্মিতা আক্তার পপি।

গত বুধবার এ বিষয়ে রাজধানীর মালিবাগের সিআইডি সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে সিআইডিপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, চক্রটি ভুয়া নামে ফেসবুক আইডি ও পেজ খুলে ফ্রিল্যান্সিং কাজ, লোভনীয় চাকরি, মডেল বানানো, মেধা অন্বেষণের নামে অল্প বয়সী তরুণীদের নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করত। সেখানে যারা ভালো করত এবং দেখতে সুন্দর, তাদের নির্বাচন করে কাজের সুযোগ দেওয়ার নামে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকত। সে সময় বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে সুযোগ দেওয়ার কথা বলে তুলে রাখা হতো তরুণীদের আপত্তিকর ছবি। কাজে আগ্রহী তরুণীদের চাহিদা মতো টাকাও দেওয়া হতো। এর পর ধীরে ধীরে এই তরুণীদের বাধ্য করা হতো অসামাজিক কাজ করতে। কেউ আপত্তি করলে তার অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখানো হতো। দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে শত শত তরুণীকে ফাঁদে ফেলে আধুনিক যৌনদাসী বানিয়েছে চক্রটি।

সিআইডিপ্রধান আরও জানান, গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে পর্নোগ্রাফি তৈরি ও ব্ল্যাকমেইলের কাজে ব্যবহৃত ১২টি মোবাইল ফোন, ২০টি সিমকার্ড, একটি ল্যাপটপ, ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও চেক বই জব্দ করা হয়েছে। তাদের অর্থ লেনদেনের বিষয়টি চমকে যাওয়ার মতো। তদন্তের পর তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হতে পারে।

মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, দুই খালাতো ভাই মেহেদী ও জাহিদ চক্রটি গড়ে তোলে। তারা অল্প বয়সী তরুণীদের ফাঁদে ফেলে যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি অ্যাডাল্ট কনটেন্ট তৈরি ও টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করত। গত আট বছরে তারা অশ্লীল ছবি ও ভিডিও বিদেশে বিক্রি করে শতকোটি টাকা হাতিয়েছে। যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা এবং ঢাকায় কিনেছে বিপুল পরিমাণ জমি। করেছে আলিশান বাড়ি ও গাড়ি। তাদের আত্মীয়স্বজনের ব্যাংক হিসাব নম্বরে বিপুল অর্থ জমিয়ে রাখার তথ্যও মিলেছে। অর্থ লেনদেনের জন্য তারা ব্যবহার করত এমএফএস বা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস। এ ছাড়া ক্রিপ্টো কারেন্সিতেও তাদের হাজার হাজার ডলার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে ঢাকার পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে পুলিশ।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles