5.2 C
Toronto
রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫

মতিউরের সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁস, নিজের সম্পদ নিয়ে মুখ খুললেন আরজিনা

মতিউরের সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁস, নিজের সম্পদ নিয়ে মুখ খুললেন আরজিনা - the Bengali Times
অভিযুক্ত মতিউর রহমান ও আরজিনা খাতুন ছবি সংগৃহীত

ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মতিউর রহমানের সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে এনবিআরের মূসক মনিটরিং, পরিসংখ্যান ও সমন্বয় বিভাগের দ্বিতীয় সচিব আরজিনা খাতুন।

আরজিনার বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুদকে দেওয়া এক অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এতে বলা হয়, ঢাকা ও রাজবাড়ীতে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন আরজিনা।

- Advertisement -

এ বিষয়ে কথা বলেছেন আরজিনা খাতুন ও পরিবারের সদস্যরা। আজ শনিবার সকালে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের তালুকপাড়া গ্রামের বাড়িতে কথা হয় আরজিনা খাতুনের বাবা আহম্মদ আলীর সঙ্গেও।

আরজিনা খাতুন বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়েছি। টাকার জন্য স্বামী আমার শরীরে আগুন পর্যন্ত ধরিয়ে দিয়েছে। অসহ্য হয়ে তাকে ডিভোর্স দিয়েছি। আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। এরপর থেকেই সে আমার বিরুদ্ধে দুদকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছে। আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আমি সম্মান জানিয়ে বলতে চাই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত হোক। আমি তার সঠিক জবাব দেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার যে ৫০০ ভরি স্বর্ণের কথা বলা হয়েছে, তা সঠিক নয়। কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। আমার ঢাকার ফ্লাটটি ঋণ করে ক্রয় করেছি। এটাই আমার সম্পদ। আমার ২ ভাই চাকরি করে। তারা ও বাবার আয়ে যা কিছু করেছে। আমার বেতনের টাকা স্বামী হাতিয়ে নিয়েছে। এখন আমার ও পরিবারের ক্ষতি করছে।’

আরজিনার বাবা আহম্মদ আলী বলেন, ‘আমি লেখাপড়া জানি না। পেঁয়াজের ব্যবসা ও চাষাবাদ করে এক মেয়ে আরজিনা খাতুন ও দুই ছেলে মতিন ও মেহেরকে অনেক কষ্টে লেখাপড়া শিখিয়েছি। দুই ছেলে সেনাবাহিনীতে চাকরি করে। বাড়িতে একটি বিল্ডিং করি ২০১১ সালে আমার আয় দিয়ে। পরে ছেলে দুজন চাকরি পাওয়ার পর পাশাপাশি দ্বিতল ভবন করা হয়েছে। যা কিছু করেছি, সবই আমার ও ছেলেদের আয়ে করা। নারুয়া বাজারে প্রায় ১ শতাংশ জমি কিনে টিনের ঘর করে ভাড়া দিয়েছি। বালিয়াকান্দি ৬ শতাংশ জমি ও মাঠে সামান্য কয়েকপাখি জমি ক্রয় করেছি। এ সবই দুই ছেলের সেনাবাহিনী থেকে মিশনে যাওয়ার টাকা ও আমার আয়ের টাকায়। আমি এখনোও ব্যবসা করি। আমার ব্যবসা থেকে এখনো মাসে আয় ৬০ হাজার টাকা। এখনো আমার ঘরে ৩ লাখ টাকার পেঁয়াজ ও ২ লাখ টাকার রসুন রয়েছে।’

আরজিনার বাবা আরও বলেন, ‘মতিউর রহমানের সাথে তার (আরজিনার) অফিসের কারণে পরিচয়। তবে আমরা পরিবারের কাউকে চিনি না। এখন অনেক কিছুই শুনছি। দুদকে অভিযোগ দিয়েছে, তা যাচাই করে যদি মেয়ে অপরাধী হয়, তার বিচার দাবি কররি। মূলত জামাইয়ের সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পর এহেন অভিযোগ করছে।’

আরজিনার চাচা লোকমান হোসেন বলেন, ‘আরজিনা খাতুনের ১৭ বছর ধরে বিয়ে হয়েছে। আমরা কোনো দিন ওই বাসায় যেতে পারিনি। প্রতিদিনই নির্যাতন করত। অনেক সময় মেরে অজ্ঞান করে রাখত, আমরা সেখানে গিয়ে চিকিৎসা করেয়েছি। নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে তাকে ডিভোর্স দিয়েছেন। আর আরজিনার যে সম্পদের পাহাড়ের কথা বলা হয়েছে, তা সঠিক নয়।’

আরজিনার চাচাতো বোন তমা খাতুন বলেন, ‘আমি ৩ বছর আরজিনা আপুর বাসায় থেকেছি। তার কোনো নিজস্ব গাড়ি নেই। তার ছেলেমেয়েদের রিকশায় স্কুলে নিয়ে গিয়েছি। সে যে গাড়িটি ব্যবহার করে, তা সরকারি গাড়ি। আর যখন ফ্লাট কিনেন তখন স্বামী-স্ত্রী মিলেই ঋণ নিয়ে ফ্লাট কেনেন। তার ফ্লাট ছাড়া কোনো সম্পদ নেই।’

স্থানীয়রা জানান, একসময় কষ্ট করে সংসার পরিচালনার পাশাপাশি ১ মেয়ে ও ২ ছেলেকে মানুষ করেছেন। তিনজনই সরকারি চাকরি করায় কিছু সম্পদ করেছেন। তবে আরজিনা একটি প্রাইভেটকার নিয়ে বাড়িতে আসত মাঝে মাঝে।

এ বিষয়ে জানতে আরজিনা খাতুনের সাবেক স্বামী আবু হেনা মো. রউফ উল আযমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, দুর্নীতি দমন কমিশনে ফেয়ার অ্যান্ড সন্স কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে মো. ইসতিয়াক আহমেদ রেজা নামের জনৈক এক ব্যক্তি আরজিনা খাতুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে বলা হয়, আমদানি পণ্য খালাসের নামে একশ্রেণির ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের থেকে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা। অনেক সময় পণ্য খালাসের কাজ না হলেও ফেরত দিতেন না ঘুষের টাকা। এভাবে দুর্নীতির টাকায় তিনি গড়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। একইসঙ্গে তিনি স্বর্ণ চোরাকারবারীদের সঙ্গে যোগসাজসে হাতিয়েছেন প্রায় ৬ কোটি টাকার স্বর্ণ। ক্রয়মূল্য গোপন করে ঢাকার মিরপুরে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে দ্বিতীয় সচিব আরজিনা খাতুন। ফ্ল্যাটটি কিনেছেন ২ কোটি টাকায়। কিন্তু কেনার চুক্তিনামায় উল্লেখ করেছেন ১ কোটি ২১ লাখ টাকা। এ ছাড়া ফ্ল্যাট কেনার পর সেখানে ইনটেরিয়র ডিজাইনের পেছনে খরচ করেছেন ২৭ লাখ টাকা, ফ্ল্যাটের ইলেক্ট্রনিক্স ও ফার্নিচারের পেছনে ব্যয় করেছেন ৩৫ লাখ টাকা। তবে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলেও তা ফ্লাট কেনার এক বছর পর।

দুদকে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, কাস্টমসের চাকরির আগে আরজিনা খাতুনের বাড়ি ছিল ২০ ফিটের একটি টিনের ঘর। ওই টিনের ঘরের একটি অংশ পাটিশন দেওয়া ছিল। সম্প্রতি তার গ্রামের বাড়িতে ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন আলিশান বাড়ি। ফার্নিচার ও ইলেক্ট্রনিক্স খাতে ব্যয় করা হয়েছে আরও অন্তত ৩৫ লাখ টাকা। আরজিনা কোটি টাকা ব্যয়ে তার আপন দুই ছোট ভাইয়ের নামে ৪০ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। বর্তমানে সেখান থেকে ৩০ বিঘা জমি বন্ধক রাখা হয়েছে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles