
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের একটি মসজিদের ফ্যান চুরির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় রসু খাঁ নামে এক ব্যক্তিকে। ঘটনাটি ২০০৯ সালের। সাধারণ চুরির মামলা হিসেবে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। বের হতে থাকে একে পর এক ‘লোমহর্ষক’ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা-তথ্য। যে মামলায় কোনো তথ্য না পেয়ে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল সেরকম ঘটনারও তথ্য পাওয়া যায় তার জবানবন্দিতে!
‘আত্মস্বীকৃত’ সিরিয়াল কিলার রসু খাঁ চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মদনা গ্রামের মুন খাঁ ওরফে আবু খাঁর ছেলে। মদনা গ্রামের ছিঁচকে চোর রসু থেকে কীভাবে একসময় সিরিয়াল কিলারে পরিণত হন সে তথ্য উঠে আসে তার বয়ানে।
রসু খাঁর বিরুদ্ধে চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ থানায় মোট ১০টি মামলা করা হয়। এর ভেতর নয়টি হত্যা এবং অপরটি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে।
জানা যায়, ২০০৮ সালে ১৮ অগাস্ট ফরিদগঞ্জের নানুপুর খালপাড়ে খুলনার দৌলতপুরের সজলা গ্রামের সাহিদা বেগমকে ধর্ষণের পর হত্যা করেন রসু খাঁ। পরে পুলিশ সাহিদার হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে। সে সময়ে চাঁদপুর মডেল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম অজ্ঞাতপরিচয় আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু তদন্তে কোনো তথ্য না পেয়ে একসময় মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সাহিদাকে হত্যার কথা স্বীকারের পর ২০১০ সালে মামলাটিও পুনরায় চালু করা হয়।
মূলত ২০০৯ সালের ২০ জুলাই টঙ্গীর নিরাশপাড়া মসজিদের ফ্যান চুরির একটি মামলায় রসু খাঁকে গ্রেপ্তার করে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ। এরপরই পুলিশের কাছে একের পর এক এসব হত্যা মামলার রহস্যজট খুলতে থাকে। শেষমেষ রসুর বিরুদ্ধে ১১ নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়।
জানা যায়, ভালোবাসায় ব্যর্থ হয়ে একসময় সিরিয়াল কিলারে পরিণত হয় রসু খাঁ। টার্গেট ছিল ১০১টি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর। রসু যাদের হত্যা করেছে তারা সবাই ছিল গার্মেন্টস কর্মী। আটকের আড়াই মাস আগে পারভীন নামে একজনকে হত্যা করে।
ওই হত্যা মামলায় রসু খাঁসহ তিনজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন, রসু খাঁর ভাগনে জহিরুল ইসলাম ও তার সহযোগী মো. ইউনুছ।
১০১ নারীকে খুন করে সিলেটের মাজারে গিয়ে সন্ন্যাসী হওয়ার ইচ্ছার কথাও পুলিশকে জানান রসু খাঁ। রসু হত্যার জন্য নারী গার্মেন্টসকর্মীদের বেছে নিতেন। ভালোবাসার অভিনয় করে নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েদের ঢাকার সাভার ও টঙ্গী এলাকা থেকে চাঁদপুরে নিয়ে যেতেন তিনি। সেখানে ধর্ষণের পর হত্যা করতেন তাদের। হত্যার শিকার এসব হতভাগ্য মেয়ের অধিকাংশেরই সঠিক নাম-ঠিকানা বা পরিচয় আজও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।