
কানাডার টরন্টোতে জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে স্টুডেন্টদের সামার ব্রেক শুরু হয়েছে। জুলাই-আগস্ট এই দুই মাস ছুটি থাকবে। নতুন বছর শুরু হবে সেপ্টেম্বরে।
কানাডায় সামারের ছুটিতে দৃশ্য পাল্টে যায়। অর্থাৎ সামারে স্টুডেন্টরা ঘরে বসে থাকে না। সাধারণত গ্রেড টেন থেকে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত স্টুডেন্টরা ফুল টাইম বা পার্ট টাইম পেইড জব করে। কেউ কেউ ভলেন্টিয়ারিংও করতে পারে। তবে বেশিরভাগ চাকরি করে ও বেতন পায়। স্টুডেন্টদের বেতন মিনিমাম ওয়েজ থেকে এক ডলার কম দেওয়া হয়। যেমন অন্টারিওর মিনিমাম ওয়েজ $17.20 cad. স্টুডেন্টদের দেওয়া হয় $16.20.
আমি যেখানে চাকরি করি সেখানে একজন ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট কাজ করছে infact আমারই সঙ্গে। সে সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টা কাজ করছে। বেতন ঐ যে বললাম এক ডলার কম মিনিমাম ওয়েজ থেকে। এটা তার সামার জব। সে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সামার জব খুঁজেছিল। আমার ডেকেয়ারে সে ইন্টারভিউ দেয় ও তাকে হায়ার করা হয়। তার বেতন সরকার দেবেন। কোম্পানি পে করছে না। মেয়েটা একজন বাঙালি। সে বাবামায়ের সঙ্গে ইমিগ্রান্ট হয়ে এসেছে যখন থ্রি’তে পড়ে তখন। যাই হোক সে জানাল, সামার জব ছাড়াও সে আরেকটা জব করে পার্ট টাইম। সারা বছরই করে যখন সয়য় পায়। তার নিজের খরচ সে নিজেই ম্যানেজ করে চাকরি করে। কানাডায় এমনই হয়।
আর যারা চাকরি করবে না মানে ছোট ক্লাসের স্টুডেন্ট তারা কী করবে? কিন্ডারগার্টেন থেকে গ্রেড নাইন পর্যন্ত স্টুডেন্টরাও ঘরে বসে থাকে না। তাদের জন্য রয়েছে সামার ক্যাম্প।
এসব সামার ক্যাম্পে কী হয়?
বিভিন্ন সামার ক্যাম্পে বিভিন্ন activities করানো হয়। বিভিন্ন আর্টওয়ার্ক, খেলাধুলা ইত্যাদি থাকে। যার যে ক্যাম্পে যেতে ইচ্ছে হয় সে সেখানে যায়।
আমার বাচ্চারা এই সামারে কী করছে?
আমার ছেলে ও এক মেয়ে সামারে ফুল টাইম মাদ্রাসায় যাচ্ছে। এটাও সামার ক্যাম্প। তাদের ক্লাস শুরু হয় সকাল দশটায় ও শেষ হয় যোহরের নামাজ শেষ করে অর্থাৎ বেলা দুইটায়। মাদ্রাসায় যাচ্ছে তারা সপ্তাহে পাঁচ দিন। ভর্তি ফি লেগেছে দুই জনের $400 cad. মাদ্রাসায় কোরআনসহ বিভিন্ন হাদিস, অজু করার নিয়ম ও নৈতিকতা শেখানো হয়।
মাদ্রাসা শেষ করার পরপরই বড়ো মেয়ে ও ছেলে চলে যায় Proton Learning Centre এ। বেলা চারটা থেকে সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত। সপ্তাহে তিন দিন। ছেলের জন্য টিউশন ফি দিতে হয়েছে দুই মাসের জন্য $600 cad. সেখানে সে প্রাকটিস করবে অংক, ইংলিশ ও সায়েন্স। বড়ো মেয়েও তাই।
তারপর ছেলে ও মেজ মেয়ের রয়েছে সপ্তাহে একদিন সুইমিং ক্লাস। এক ঘণ্টা করে।
ছেলের সপ্তাহে এক দিন রয়েছে গিটার ক্লাস। এগুলো extra কারিকুলাম হিসেবে কাজে লাগে।
সব শেষে আমার husband ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে সাইকেল চালাতে চলে যান। মেজ মেয়ে মহিমা সে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সাইকেল চালাতে পারে একাধারে। আমিমাও সাপোর্ট হুইলে করে অনেক দূর যেতে পারে।
আমার husband এই টোটাল প্রোগ্রাম পরিচালনা করছেন। মানে তিনি প্রত্যেকটা ক্লাসে দিয়ে আসেন ও নিয়ে আসেন। শুধু মাদ্রাসাতে তারা হেঁটে চলে যায়। আনেন আমার husband. সবাই একসঙ্গে যোহরের নামাজ পড়ে বাড়ি আসেন।
তারপর বাকি নামাজও মসজিদে গিয়ে আদায় করে আসেন।
আমার husband এসব পরিচালনা করার জন্য হাফ বেলা কাজ বন্ধ রেখেছেন সামারের জন্য। মানে তিনি শুধু সকাল থেকে বেলা একটা পর্যন্ত কাজ করছেন।
তিনি বলেছেন “টাকা-পয়সা ইনকাম করা যাবে। কিন্তু এদেরকে এভাবে সময় না দিলে সেটা আর ফিরে পাওয়া যাবে না। তিনি বলেছেন, অনেকেই ঘুরাঘুরিতে সময় দিচ্ছে, কিন্তু আমি তাদের পুরো লার্নিং এ ব্যস্ত রাখছি। অনেক খরচ হচ্ছে, নিজে কাজ কমিয়ে দিয়েছি তাতে কোনো আফসোস নেই। ঘুরাঘুরি হবে উইকেন্ডে।”
আর আমি সবাইকে সেবা-যত্ন করে সময় পাচ্ছি না। ফুল টাইম কাজ করে বাড়িতেও ফুল টাইম কাজ। তারপরে বাগান একটা আলাদা আমেজ সৃষ্টি করেছে। এসব নিয়েই জীবন।
আল্লাহ আপনাদের সুস্থ রাখুন।
টরন্টো, কানাডা