
দিন-তারিখ-সাল মনে নেই। ক্যামেলিয়া মোস্তফা তখন রাশিয়া দূতাবাস ছেড়ে জার্মানির দূতাবাসে ভিসা সেকশনে কাজ করেন। কবিবন্ধু গিয়ার্ড লুপকের আমন্ত্রণে ভিসার জন্য যাই। সেদিন ক্যামেলিয়া শুধু ভিসাই দেননি; হাসি মুখে চা আপ্যায়ন করেছিলেন।
সেই থেকে পরিচয়। তারপর আমরা বাংলাদেশ বেতারে নানান অনুষ্ঠানে এক সাথে কাজ করেছি। আমার স্ক্রিপ্ট, তাঁর উপস্থাপনা। আমার কবিতা, তাঁর আবৃত্তি। তিনি নিজেও কবিতা লিখতেন, তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থও আছে- ‘মীমাংসিত জনম’।
ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী। অত্যন্ত আধুনিক, স্মার্ট, রুচিশীল, প্রতিভাবান এবং মেধাবী ছিলেন ক্যামেলিয়া। অদ্ভূত অভিজাত্য ছিল তাঁর চেহারায়! কিন্তু শৈশব থেকে শেষ জীবন পর্যন্ত ‘দু’দন্ড’ শান্তি পান নি। শেষের দিকে এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলেন।
আমি কানাডায় আসার আগে শাহবাগের আজিজ মার্কেট মাঝেমধ্যে আসতেন। তাঁর বাবা শামসুদ্দীন আবুল কালামের সাথে আমার পত্র যোগাযোগ ছিলো জেনে একটা অন্য রকম আপন ভাবতেন। কিন্তু বাবা সাথে ছিলো প্রচন্ড অভিমান! অপর দিকে পালিত-কন্যা হিসেবে গোলাম মোস্তফার সাথেও দূরত্ব ছিলো। ক্যামেলিয়ার দুটো দাম্পত্য জীবনের কাহিনীও করুণ! এইসব রাগ-অভিমান নিয়েই প্রায় স্বজনহীন জীবন পাড় করে দিলেন।
ক্যামেলিয়া ছিলেন ক্যামেলিয়া ফুলের মতোই স্নিগ্ধ, সুন্দর। যেনো বাবা বইয়ের মতোই কাশবনের কন্যা। তবে তাঁকে মনে হতো ওমর আলীর কাব্যগ্রন্থ- এদেশে শ্যামল রঙ রমণীর নাম শুনেছি।
অভিনয়, আবৃত্তি, উপস্থাপনা বহুমুখী প্রতিভাধারী ক্যামেলিয়া চেয়েছিলেন আমি তাঁর আত্মজীবনীর অনুলিখন করি। কিন্তু তাঁর যাপিত জীবনে যে সব ভয়াবহ ঘটনা আছে, তা লিপিবদ্ধ করা কঠিন কাজ। (পরে কবি সৌমিত্র দেব লেখার কথা। জানি না, তা শেষ হয়েছিলো কি না)।
একটি/দুটি ঘটনা জানাই। তখন শমশের মবিন চৌধুরী পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। যে কোনো দূতাবাসে বলে দিলে তাঁর একটা চাকরি হবে, এই বিশ্বাসে আমার অফিস থেকে ফোন করলেন। ফোনটা রেখে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, লোকটা আমার বাবার বন্ধু। আমি তাঁর মেয়ের মতো। আর তিনি… ছি:
পরে এক কন্ঠশিল্পীর ভাইয়ের সাথে খাতির হলো মালয়েশিয়ায় নিয়ে ক্যামেলিয়াকে পিটিয়েছে!
এসব কি লেখা যায়?
ক্যামেলিয়ার জীবন ছিলো মহাদেব সাহার কবিতার মতো বেদনায় আচ্ছ্বন্ন এবং হেলাল হাফিজের কবিতার মতো ব্যর্থতায় ভরা। এই বেদনা-ব্যর্থতা থেকে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।
টরন্টো, কানাডা