5.2 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৩, ২০২৫

গৃহ কুটুম

গৃহ কুটুম
গৃহ কুটুম

অলস বিকেলে ঝিমানো বাদ দিয়ে, হঠাৎ ‘ধ্যাত্তেরী’ বলে বাইরের ঘরের বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বেইজমেন্ট থেকে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার নিয়ে এসে এন্ট্রেন্স দরজার পাশের পাপোশ, লিভিং রুমের কার্পেট পরিষ্কার করতে লেগে গেলাম। যদিও গিন্নি প্রায়ই এগুলো ক্লিন করে। আমি ইদানিং বেশ অলস হয়ে যাচ্ছি; বাসার কাজ কমিয়ে দিয়েছি। হয়তো বয়স হবার কারণেই অফিস থেকে ফিরে এসে ক্লান্ত হয়ে ঘুম দেই।

কাজের ফাঁকে চিৎকার দিয়ে হাঁক ছাড়লাম- বিত্ত-দখিনা, তোদের ঘর ক্লিন কর, শিগগির!

- Advertisement -

দখিনা সিঁড়ির উপর থেকে কৌতূহলী চোখে উঁকি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আব্বু কেউ আসতেছে?

– আসতেও পারে। ঘর পরিষ্কার করে রাখ

– কতক্ষন থাকবে?

– এই বোকা, গেস্ট আসবে; যথক্ষন খুশি থাকবে। এভাবে কেউ জিজ্ঞেস করে?

এবার বিত্ত বের হয়ে আসলো- আব্বু আমি একটু পরে ঘর ক্লিন করি?

– ওকে। বেশি লেট করিস না।

এবার গিন্নি নেমে আসতে আসতে বলল, কে আসবে চান্দু?

– তেমন কেউ না..

– তেমন কেউ না মানে? এইটা কোন ধরনের উত্তর!

– না মানে, কেউ তো আসতেও পারে?

– এত ঢং-হেঁয়ালি করো কেন? বলে ফেললে এমন কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে?

– বলতেছি, তার আগে মেহমানদের জন্য কিছু ভেজে ফেলতে পারবা?

– কাবাব বানানো আছে, স্প্রিংরোল আছে। বাঙালি না কানাডিয়ান?

– দুই ধরণেরই

– কয়জন?

– তিনজন

– ওকে। সাথে লাচ্ছা সেমাই করি?

– গুড! তবে কানাডিয়ানদের ফ্রোজেন পিজাটা বেক করে দাও। আমি তরমুজ কাটতেছি। আর কিছু না

– তোমার বান্ধবি নাকি গো চাঁদু?

– হ্যা.. বান্ধবীর মতোই..

– ভালো ভালো! আগে বলোনি তো, যে তোমার বান্ধবী আছে!

– ভাবছিলাম একবারেই দেখাবো। এই বয়সে যদি একটা বান্ধবীই না থাকে..

আমি আবার উচ্চঃস্বরে উপরে মুখ তুলে বাচ্চাদের বললাম- তোরা ঘর পরিষ্কার করে গোসলে ঢোক। কয়দিন গোসল করিস না? মেহমানদের সামনে ভুতের মতো চেহারা দেখালে ওরা কী বলবে? আগে দখিনা ঢুকবি, পরে বিত্ত।

গিন্নিও দ্রুত খাবারগুলো ভেজে, রান্নাঘর পরিষ্কার করে, মেঝে ঝাড়ু দিয়ে এসে বলল, তোমার বান্ধবীরা কত দূর গো?

– এইতো, মিনিট পনেরো লাগবে।

আহা, ব্যাচারা মিথ্যা হাসিমুখ করার চেষ্টা করছে।

গৃহ কুটুম

দখিনা তার স্বভাবমতো গোসলে ঢুকে টেইলর সুইফটের গান বাজিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিলো। গানের তালে তালে মুখ মিলাতে থাকলো। গিন্নি সারা বাড়ি থেকে ময়লা জামাকাপড় খুঁজে, সব ঝুড়িতে নিয়ে লন্ড্রী করতে দিয়ে আসলো। প্রায় সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেছে।

আমি সাড়ে সাতটার দিকে মুগ্ধ হয়ে সারা বাড়ি চক্কর দিয়ে আসলাম। তারপর রান্নাঘরে ঢুকে চায়ের পানি চুলায় দিয়ে ডাকলাম, সবাই নিচে আসো।

তোমার বান্ধবী ঢুকছে বাসায়?- গিন্নি জিজ্ঞেশ করলো

– প্রায় এসে গেছে

– আমি নামাজটা পরে নামি?

– ওকে, তাড়াহুড়ায় কিছু নাই।

গিন্নি নেমে আসার আগেই গেস্টদের পরিবেশন করার খাবার সাজিয়ে, ঠান্ডা আইস টি’র ক্যান চারটা চার কোনায় সাজিয়ে ডাক দিলাম, কই তোমরা?

ওরা ফিটফাট হয়ে নিচে নেমে আসতেই বললাম, সবাই ডাইনিং এ বসো।

আমরা চারজন ডাইনিং টেবিলে বসতেই সবার পাতে কাবাব, স্প্রিংরোল তুলে দিয়ে বললাম, শুরু করো

– তোমার গেস্ট?

– তোমারাই আজ গেস্ট

– মানে?

– গেস্ট না আসলে পোলাপানের ঘরে হাতই দেয়া যায় না। ভাগাড় বানিয়ে রাখে। বিত্ত, তোর মা তোর ঘর সাফ করতে আসলে কি পরিমানে রাগারাগি করিস! এখন দেখতো কতো সুন্দর! দখিনা, দেখ তোর ঘর কত ঝকঝক করছে! সারাদিন ঘরে বসে বসে কম্পিউটার টিপিস। শুধু দুপুর আর রাতের খাবারই না; সকাল-বিকালের নাস্তাও এখন থেকে একসাথে করবি

– আর তুমি কয়দিন পরে গোসল করলা চান্দু? তোমার বেল মাথা এখন সেই ঝিলিক মারছে!- গিন্নি মিটিমিটি হাসতে লাগলো

– আর তুমি ফকিরের মতো কি সব জামা পরে যে ঘুরো। দেখোতো, এখন কত ভদ্রলোকের মতো লাগতেছে?

– গেস্ট আসার আগে আমরা যত স্পীডে কাজ করি, অন্য সময় তার দশভাগের এক ভাগও করি মা। আসো, সেলফি তুলি!- বলে গিন্নি তার মোবাইলের ক্যামেরা পরিষ্কারে জামার হাতায় মুছে নিলো।
আমরা চারজন একসাথে জড়সড় হয়ে বললাম, চি-ই-ই-ই-ই-জ!

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles