7.9 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

এটা একটা মহা মুক্তিযুদ্ধ!

এটা একটা মহা মুক্তিযুদ্ধ!
এটা একটা মহা মুক্তিযুদ্ধ

আমি এতটা ব্যথাতুর আগে খুব কম হয়েছি যতটা হয়েছি সাঈদকে চারটা বু**লে**ট ছুড়ে দিবালোকে সবার সামনে মে**রে ফেলার দৃশ্য দেখে। জানেন, এই ঘটনার পর ঐ ভিডিওটা পুরোটা দেখার পর আমার গলায় যেন একটা বিশাল পাথর আটকে গিয়েছিল। সাঈদকে মা**রা হলো যে দিন, তার একদিন পরে আমি ফোন হাতে বসে ছিলাম গভীর রাত অবধি। বাড়ি সুদ্ধ মানুষ ঘুমাচ্ছে। আমি হেড ফোন কানে দিয়ে নিউজ ফিডে দেশের পরিস্থিতির অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছিলাম। কী আশ্চর্য জানেন, চিৎকার করে কাঁদতে হচ্ছে না, অঝোরে ঝরে যাচ্ছিল আমার চোখ বেয়ে পানি। ইচ্ছে হচ্ছিল চিৎকার করে কাঁদার। পরে ফোন চেপে বন্ধ করে বালিশে মাথা রেখে ছাদ মুখো মুখ করে শুয়ে থাকলাম। দুই চোখের কোণা দিয়ে পানি ঝরছে। কিছুটা মুষলধারার বৃষ্টি মতো। ঢুকরে উঠলাম। আহ্! আমার husband মনে করেছেন দুঃস্বপ্ন দেখে শব্দ করেছি। উনি বলে উঠলেন “কী হলো”

আমি ক্লান্ত হয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতে পারি নি। এখনো প্রতিটি মুহূর্তে যখনই এই মর্মভেদী ভিডিওটা চোখের সামনে ভেসে উঠে, তখনই কোদাল দিয়ে মনের আঙ্গিনায় খনন শুরু হয়ে যায়। চিৎকার করে কাঁদতে মন চায়। আহ্! কী বেদনা! কী বেদনা! এখনো আমার চোখের বেড়া ভেঙ্গে নেমে পড়ছে পানি সোজা গলদেশে। চোখ ঝাপসা হয়ে অস্পষ্ট দেখাচ্ছে সবই। বাকি ছেলেগুলোর ছবিও যখনই ভেসে আসছে চোখের সামনে বেদনার জলস্রোতের হারাচ্ছে মন। একেকটা রত্ন!

- Advertisement -

১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তখন আমার জন্ম হয় নি। আমরা মোট দশ জন ভাইবোন। আমার ওপরের কয়েকজন বোনেরও জন্ম হয় নি সে সময়। তবে বড়ো ভাইবোনেরা এসবের একেবারে প্রত্যক্ষভাবে সাক্ষী। ওনাদের চোখের সামনে ঘটেছে সবকিছু । আমি যদিও যুদ্ধ দেখি নি সত্যি, তারপরেও এবার যা ঘটেছে সেটা সেই যুদ্ধের চেয়েও কম না বলে মনে হয়েছে। মহা যুদ্ধ মনে হচ্ছে। সে সময়ও ছাত্ররা নেমেছিল এ সময়েও তাই। সে সময় দেশ স্বাধীন, ভাষাকে বাংলা করা এসব আদায়ের লক্ষ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধ হয়েছিল পাক-বাহিনীর সঙ্গে। আর এখন হয়েছে ছাত্রদের চাকরির ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে। যুদ্ধ হচ্ছে নিজের দেশের মানুষের সঙ্গে। সে সময় পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধার নাম ইতিহাসের পাতায় আছে। এবার গু**লি করে শহীদ করা হয়েছে এমন পাঁচজন তরতাজা, সুদর্শন , বুকের ধন, অসম্ভব মেধাবীকে। এই পাঁচজনের নাম মুখে মুখে। তাছাড়া বিভিন্ন খবরে পরিসংখ্যান মতে শহীদের সংখ্যা অসংখ্য। সে সময় চোখের সামনে গু**লি করেছে, এ সময়ও তাই হয়েছে। পার্থক্যটা কোথায়? তবে পার্থক্য আছে। সে সময় পাকের সঙ্গে হয়েছিল, এবার নিজ জাতির সঙ্গে।

আমার বিভিন্ন পোস্ট কেউ কেউ কমেন্ট করে বলছেন “এটা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে মেলাবেন না। এটা অন্য জিনিস।”

একজন ফলোয়ার লিখেছেন

“এ মুক্তি যুদ্ধ নয়,এ এক ভিন্ন জিনিস,মুক্তিযুদ্ধের সাথে একে গুলিয়ে ফেলবেন না,আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি তাই লিখলাম,আপনি অনেক ভালো লিখেন,ভালো থাকবেন”

আরো দুই-একজন একই কথা বলেছেন। আমার কথা হলো এটা তাহলে কী জিনিস? ভিন্ন জিনিস বলতে আপনারা কী বোঝাচ্ছেন?

এখন আসি আমার নিজের আপন বড়ো ভাইয়ের মন্তব্যে। তিনি একজন অত্যন্ত মেধাবী মানুষ। ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বুয়েট থেকে পাশ করেছেন। ফেসবুকে হঠাৎ করে ওনার একটা পোস্টে আমার চোখ আটকালো। উনি সাঈদকে সরাসরি হ**ত*া করার ভিডিওটা শেয়ার করেছেন তার ফেসবুকের ওয়ালে। আর পোস্টে যেটা লিখেছেন সেটা আমি কপি-পেস্ট করলাম দেখুন।
“১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় আমার সামনে পাকিস্তানি বাহিনী সাত জন মুক্তিযোদ্ধাকে চোখ বেঁধে পরপর গুলি করে হত্যা করেছিল। আমি ৫০-৬০ ফুট দূর থেকে নিজে দেখেছিলাম। গত ১৫ ই জুলাই 2024 বাংলাদেশের পুলিশ ২০-২৫ ফুট দূর থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে অন রেকর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে চারটি গুলি করে শহীদ করেছে। পার্থক্যটা কোথায়? মানুষ এখন দ্রুত পরিবর্তন চায়।” এটা আমার বড়ো ভাইয়ের নিজের অভিজ্ঞতার কথা।

অনেকেই আমার এসব পোস্টে বিরূপ মন্তব্য করছেন। আপনারা যদি আন্দোলন বিরোধী হন আর এসব পোস্ট ভালো না লাগে তাহলে আমাকে আনফলো করে চলে যেতে পারেন। এসব নিয়ে আমি এতটা চিন্তিত না।

আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন। সুস্থ রাখুন।

টরন্টো, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles