9 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

নির্মম বিদায়!

নির্মম বিদায়!
নির্মম বিদায়

গত বুধবার কর্মস্থল থাকাকালীন বেলা দেড়টার দিকে কম্পিউটার রুমে বসে কিছু কাজ করছিলাম। হঠাৎ আমার একজন বাঙালি কলিগ দূর থেকেই আমাকে ডাক দিলেন। আমি উত্তরে ইয়েস বললাম জোরে যেন উনি শুনতে পান।

ভেবেছিলাম ওনার কোনো দরকারের আমাকে ডাকছেন। কিন্তু না। বললেন, “যান কামিলার সঙ্গে দেখা করে আসেন। সে কান্না করছে।” কামিলা ছিল তার ক্লাসরুমে।

- Advertisement -

কামিলা আমার আরেকজন কলিগ। তার অরিজিন আফগানিস্তান। অসম্ভব ভালো। প্রায় সারা বছরই সে রোজা থাকে। আমাকে সে খুবই ভালোবাসে। আমার দুঃখ-বেদনায় সে আগে ছুটে এসে আমাকে আলিঙ্গন করে সমবেদনা জানায়। খুশির খবরে খুশি হয়।

হঠাৎ করে কামিলা কেন কাঁদছে? সকালেই তো কাজে এসেছিল একেবারে ভালো মুডে। আমার সঙ্গে কুশল বিনিময়ও হয়েছিল।

কম্পিউটার রুম থেকে ধীর পায়ে হেঁটে কামিলার রুম পর্যন্ত যেতে সময় লাগে thirty second এরও কম। কিন্তু সেসময় আমি গিয়েছিলাম মাত্র দুই-এক সেকেন্ডের মধ্যে অনেকটা দৌড়ে দিয়ে।
গিয়ে দেখলাম কামিলা ক্রন্দনরত অবস্থায় মূর্ছা খাচ্ছে বারবার। অন্যান্য কলিগদেরও অঝোরে ঝরছে পানি চোখ থেকে।

আমি কামিলার পাশে দাঁড়িয়ে হাতটা টেনে বুকে রেখে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। বুঝতে পেরেছিলাম খুব বড়ো ধরণের বিচ্ছেদ-বেদনা হয়েছে কামিলার জীবনে।

অন্য কলিগ ফিসফিসিয়ে বলল, “Her brother passed away may be an hour back.”

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

কামিলার আপন ছোট ভাই। তার থেকে দুই বছরের ছোট। কামিলার পরিবারের প্রায় সবাই কানাডাতেই বসবাস করে। ভাইবোনে, আত্মীয়স্বজন সবাই।

কামিলার ছোট ভাইয়ের কী হয়েছিল! হঠাৎ করে কেন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হলো?

কেউ কিছুই সেই মূহুর্তে জানত না। তার ভাই অসুস্থ ছিলেন এমনও না। তাহলে কামিলা আমাদের জানাত।

দুইজন কলিগ চোখের অশ্রু ঝরাতে ঝরাতে কামিলাকে তার বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসার জন্য উদ্যোগ নিল। কামিলার হৃদয়ে ভাইয়ের বিচ্ছেদের তীর তীব্রভাবে বিঁধেছিল। শব্দ করে কান্না করে সে বুকের যন্ত্রণার সঙ্গে বোঝাপড়া করতে চেয়েছিল।

দুইজন কলিগ যারা কামিলাকে তার বাড়িতে নামিয়ে দিতে গিয়েছিল তারাও ফিরে আসল ঘণ্টাখানিক পরে। কামিলাকে তার বড়ো ভাইয়ের বাসায় রেখে এসেছে। সেখানেই তার পরিবারের সদস্যরা জমা হচ্ছে। সবাই শোকে পাথর প্রিয়জনের বিচ্ছেদে।

কামিলার ছোট ভাই জাস্ট হার্ট-এ্যাটাক করলে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তারপর প্রস্থান। মহাকাল, মহাকাশ সবকিছু ছাড়িয়ে চলে যাওয়া। যখন মানুষের জন্ম হয় তখন তার হাতে টু-ওয়ের টিকিট কাটা থাকে। অবশ্যই রিটার্ন যেতে হবে আপন গন্তব্যে। আর জীবনের মেয়াদ শেষে চলে যেতে হয় ওয়ান-ওয়ে টিকিটে। অর্থাৎ আর ফিরে আসা যায় না।

প্রিয় মানুষকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে যায় মন। এই শোক একেক জনের কাছে একেক রকমের তীব্রতা অনুভব হয় সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু যে চলে যায়, সে শুধু চলে যায়। চাওয়া-পাওয়া, আবেগ-অনুভূতি কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। পার্থিব জগতে গোধূলি লগ্নে সবাইকে বিদায় জানিয়ে লাস্ট ট্রেনের যাত্রী হয়ে মিশে যায় এক অনন্ত যাত্রায়। সে যাত্রার শুরু বা সমাপ্তি কখন কারোরই জানা নেই।

এই যাত্রার যাত্রী হতে হবে সবাইকেই। তাই আপনি একজন মানুষকে কীভাবে দোষী করছেন, কী বলছেন সেটা ভেবে নিবেন। আপনি নামাজ না পড়লে আল্লাহর কাছে অপরাধ করবেন। আপনি ক্ষমা চাইলে আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু আপনি কাউকে অন্যায় কিছু বলে তার অন্তরে ব্যথার জন্ম দিলে আপনি যে অন্যায় করবেন, সেটার জন্য তার কাছেই আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে কাউকে ছোট করার যন্ত্রণা আপনাকে মরণের আগে-পরে বহন করতে হবে।

আল্লাহ আপনাদের সুস্থ রাখুন।

টরন্টো, কানাডা।

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles