“ হ্যা বিপর্যয়!”
“দাদা আমি সাতে পাঁচে থাকি না!
যে যা করে দেখি ভাই
সুবিধাটা নিয়ে যাই
ধুম করে প্রকাশ্যে আসি না! “
(রুদ্রনীল ঘোষ)
আমাদের চারপাশে সাতে পাঁচে না থাকার মানুষই বেশি। যখনই দেখবেন দেশে, সমাজে, চারপাশে কিংবা প্রতিবেশীর বাড়ীতেই কোনও ঘটনা/ দুর্ঘটনা, যতক্ষন না খাওনের নেমন্তন্ন না হয় ততক্ষন উঁকি দিয়ে দেখবে ঠিকই কিন্তু কোনও কিছু করবে না।
আবার কিছু আছে সমালোচনা করবে কিন্তু শুধু নিজেদের মধ্যে, চুপেচাপে, ফিসফাস করে। আসল কথা বলার বেলায় তাদের টিকিটারও দেখা পাওয়া যাবে না।
দেশের কোনও সমস্যায় এদের মুখে একটা কমন বুলি আছে। “আমি রাজনীতির সম্পর্কে আলোচনা করি না।” অথচ রাজনীতির বদৌলতে যত ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে তা নিতে সদা প্রস্তুত।
আজকে আমার মাতৃভূমি ভালো নেই। এটা সবারই জানা কথা। এমন অবস্থায় আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা ব্যাপারটা পলিটিক্যাল বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাদেরকে একটু মনে করিয়ে দিতে চাই, আমরা প্রত্যেকেই পরোক্ষভাবে পলিটিক্যাল। আপনার চাকরি, শিক্ষা, ব্যবসা, ট্যাক্স, রাস্তা, বাড়ী খেলা সবই পলিটিক্সের সাথে জড়িত।
আপনি যদি একদম নিরীহ একজন মানুষ হন, তাহলেও আপনার জীবনে রাজনীতির প্রভাব আছে। যদি চুপ করে থাকেন, যদি এড়িয়ে যান, তাহলে হয়ত একদিন দেশের প্রতিবাদী মানুষগুলোর পরিশ্রমের ফসল ভোগ করবেন কিন্তু ইতিহাসের সঠিক পক্ষে না থাকার জন্য নিজের কাছে জবাবদিহির সম্মুখীন হবেন।
দেশ ত্যাগের পরে দেশপ্রেমের কথা পাবলিকভাবে বলতে নিজেকে বিরত রাখি সবসময়। দেশ ত্যাগ করা মানুষরা যখন দেশপ্রেম নিয়ে পাবলিকলি আপ্লুত হয় তা কিছুটা কুম্ভিরাশ্রুর মত শোনায়। যদিও এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। আঁতেল ভাইয়ারা আবার ফুঁশে উঠবেন না।
কিন্তু এখন আর নিজেকে বিরত রাখতে পারছি না। যদিও দেশের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারছি না, তবে দেশের পরিস্থিতি বুঝে মনে হচ্ছে একাত্তরের চেয়ে কোনও অংশে কম না। সাধারন জনগন এবং ছাত্রদের জন্য ঘটনা হয়ত তার চেয়েও খারাপ। অন্তর্জাল বন্ধ করে অমানিশার কালো অন্ধকারে আমার মানুষগুলোর সাথে অতৃপ্ত দেবী যে কি করছেন তা কল্পনাও করতে পারছি না। এ এমন দেবী যে প্রতিদিন ১০০০ নরবলি দিলেও হয়ত তৃপ্ত হবেন না।
একজন ব্যক্তি “মানুষ” হিসেবে কত নিচে নামলে একজন নিরস্ত্র মানুষের বুকে গুলি চালাতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়। কতখানি কাপুরুষ হলে এই ঘটনা ঘটতে পারে। এই কাপুরুষ আমার দেশের প্রডাক্ট। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে। কেমন করে এই কাপুরুষেরা ছোট ছোট মানুষের উপরে গুলি চালায়। এই ছাত্ররা তো দেশপ্রধান হিসেবে একজনকে দেখেই বড় হয়েছে। তাদের নেত্রী, মা, বোন তো সেই। এখানে অন্য কারও তকমা লাগানোর তো কিছু নেই। জাতির জনক যদি একজনই হয় তাহলে কাউকে রাজাকারের সন্তান বলে আখ্যায়িত করা হয় কিভাবে? জাতির জননীর চরিত্রের প্রতি এ কেমন আঙুল তোলা?
একাউন্টেন্টদের সাথে থাকি দিনে রাতে, তাই অত্যন্ত রক্ষণশীলভাবে চিন্তা করি। নেতিবাচক চিন্তাটা আসে সবার আগে।হয়ত কঠোরহস্তে দমন করা হবে বিপ্লবীদের। দেশদ্রোহী এবং রাজাকারের তকমা লাগিয়ে ধ্বংস করা হবে। উদযাপন করা হবে আরেকটি মহান বিজয়। গনকবরে মিটিয়ে দেওয়া হবে সকল প্রমান। আমরাও ভুলে যাব। পড়ে থাকবে কিছু মায়ের আহাজারী এবং নিঃশব্দ চিৎকার।
তবে হ্যা- একটা আগুন জ্বলেছে, এই আগুন নিভবে না। ধিকিধিকি জ্বলতে থাকবে বাংলা বলা সকল মানুষের বুকে। দানবের বুকে জ্বলবে না। এই আগুনই হয়ত নিয়ে আসবে প্রাণের স্বাধীনতা। এখনই এই মুহূর্তে হয়ত না, তবে সামনে এবং শিল্পী এই আন্দোলন হয়ত হয়ে উঠবে আরেকটি ২১ শে ফেব্রুয়ারী। এর জের ধরেই আমরা হয়ত পেয়ে যাব স্বপ্নের ১৬ ই ডিসেম্বর।
টরন্টো, কানাডা