
স্বপ্ন দেখেছিলেন বলেই শরণার্থী থেকে অলিম্পিয়ান হতে পেরেছেন উইসরা মারদিনি। তবে এই যাত্রাটা অন্য খেলোয়াড়দের মতো সহজ ছিল না তার। অলিম্পিয়ান হওয়ার আগে দুঃসহ এক জীবন পেরিয়ে এসেছেন সিরিয়ায় জন্ম নেওয়া এই শরণার্থী সাতারু।
ছোটবেলায় পাইলট হতে চেয়েছিলেন উইসরা।
২০০৪ এথেন্স অলিম্পিকে তার স্বপ্ন বদলে যায়। সাঁতারে কিংবদন্তি মাইকেল ফেলেপসকে পিছিয়ে পড়েও স্বর্ণ জিততে দেখে সাঁতারু হওয়ার নেশা পেয়ে যায় তাকে। আর খেলাটা রক্তেও ছিল তার। বাবা ইজ্জাত মারদানি সিরিয়ার মিলিটারিতে যোগ দেওয়ার আগে জাতীয় সাঁতারু ছিলেন।
পরে জাতীয় দলের কোচ হন।
বাবা ইজ্জাতের কাছে তালিম নেওয়া শুরু করেন বড় বোন সারাহ মারদানির সঙ্গে উইসরা। সিরিয়ার যুব পর্যায়েও খেলার সুযোগ হয় তাদের। আরও বড় স্বপ্ন নিয়ে যখন অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন তারা তখনই সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ তাদের স্বাভাবিক জীবনকে অস্বাভাবিক করে দেয়।
২০১৫ সালে মৃত্যুপুরী থেকে বাঁচতে তাই বাধ্য হয়ে কিশোর বয়সে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন দুই বোন। জার্মানিতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়ার আগে চোরাপথে পাড়ি দিতে হয়ে দুর্গমপথ। যে যাত্রার পথে পথে মৃত্যু ছিল তাদের সঙ্গী। অথচ, ১৬ বছর বয়সে মুক্ত পাখির মতো জীবন উপভোগ করার কথা ছিল উইসরার।
শুরুটা হয়েছিল ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার মধ্যে দিয়ে।
১০ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল ৪৫ মিনিটে। কিন্তু ২০ মিনিট যাওয়ার পরেই সাগরের মাঝপথে নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। ১০ জনের নৌকায় ২০ জন ঠাঁই নেওয়ায় ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। নৌকার ভারসাম্য বজায় রাখতে তাই অন্য দুই তিন জন শরণার্থীর সঙ্গে পানিতে নেমে পড়েন দুই বোন। অলৌকিকভাবে কিছুক্ষণ পর নৌকার ইঞ্জিন চালু হলেও টানা তিন ঘণ্টা সাঁতার কেটে পরে তীরে পৌঁছান তারা।
এরপর লেবানন, তুরস্কের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে জার্মানিতে পৌঁছান উইসরা ও সারাহ। জার্মানিতে আশ্রয় নেওয়ার পর নতুন করে স্বপ্ন বুনতে থাকেন দুই বোন। সেখানকার এক ক্লাবে অনুশীলন শুরু করে দেন তারা। তাদের সাঁতারের কৌশল দেখে মুগ্ধ হয়ে ক্লাবের ট্রেইনার সভেন স্প্যানেক্রেবস স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করেন দুই বোনকে। সেই স্বপ্ন পূরণ হয় ২০১৬ রিও ডি জেনেরোয়। শরণার্থী হিসেবে অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান উইসরা। সেবারই প্রথমবার অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান শরণার্থীরা।
১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে সবার শেষে শেষ করেন উইসরা। রিও ডি জেনেরো অলিম্পিকে তিনিসহ মোট ১০ জন শরণার্থী অংশ নেন। ২০২০ টোকিও অলিম্পিকেও শরণার্থী দলের প্রতিনিধি ছিলেন। এবার ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো প্যারিস অলিম্পিকে নামবেন। তার সঙ্গে অংশ নেবেন আরও ৩৬ শরণার্থী। বিশ্বের সকল শরণার্থীর কাছে এখন উজ্জ্বল এক নক্ষত্র তিনি। ধৈর্য্য এবং অসীম সাহসীকতার জন্য জার্মান মিডিয়ার সম্মানজনক পুরস্কার বাম্বি অ্যাওয়ার্ডস পেয়েছেন দুই বোন। ইউএনএইচসিআরের শুভেচ্ছাদূতও হয়েছেন উইসার।