4.1 C
Toronto
সোমবার, মার্চ ১৭, ২০২৫

গুলিতে নিহত স্বামী, হাসপাতালে এক রাতের বিল ৭০ হাজার

গুলিতে নিহত স্বামী, হাসপাতালে এক রাতের বিল ৭০ হাজার
মেয়েদের সঙ্গে আকলিমা বেগম

মাত্র এক মাস আগে ছোট মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ওই সময় হাতে টাকা-পয়সা না থাকায় মেয়েকে তার স্বামীর ঘরে তুলে দিতে পারিনি। শুধু বিয়ে পড়িয়ে রাখা হয়েছিল। আমার স্বামী নবীনুরের ইচ্ছা ছিল বড় অনুষ্ঠান করে মেয়েকে স্বামীর ঘরে তুলে দেবেন। কিন্তু তা আর হলো কই! আমার সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমার কী হবে? এখন আমি কিভাবে চলব?—এ কথা বলেই বিলাপ করছেন আকলিমা বেগম। তার কান্না কোনোভাবেই থামছে না। একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ঢাকার সাভারে গুলিতে নিহত হন খুলনার পাইকগাছার নবীনুর। গত ২০ জুলাই নিহত হওয়ার পরদিন লাশ বাড়িতে এনে দাফন করা হয়। গেল এক সপ্তাহ ধরে শোকাহত দুই মেয়েসহ পাগলপ্রায় নবীনুরের স্ত্রী আকলিমা বেগম। সহায়সম্বলহীন নবীনুরের স্ত্রী ও মেয়ে এখন উঠেছেন বড় জামাইয়ের বাড়িতে।

- Advertisement -

আকলিমার স্বামী নবীনুর মোড়ল (৫০) একজন মাছ ব্যবসায়ী। বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী ইউনিয়নের শ্রিকণ্ঠপুর গ্রামে। গত ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে নবীনুর পরিবার নিয়ে থাকতেন সাভারের বনপুকুর এলাকায়। ২০ জুলাই বিকালে বাড়ির পাশের সড়কে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তার পেটে গুলি লেগে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। সড়কে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পাশের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ও পরে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ২১ জুলাই সকালে মারা যান নবীনুর। দুপুরে অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় শ্রিকণ্ঠপুর গ্রামে। সেখানে রাতে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। গুলিতে মারা গেলেও লাশের কোনো ময়নাতদন্ত হয়নি।

শ্রীকণ্ঠপুরে নবীনুরের বাড়ি হলেও সেখানে তার নিজস্ব কোনো ঘর নেই। এ কারণে স্বামীর লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করার পর আকলিমা বেগম ছোট মেয়েকে নিয়ে উঠেছেন বড় মেয়ের বাড়িতে। বর্তমানে তার কোনো থাকার জায়গা নেই। কোথায় থাকবেন সে চিন্তাও ভর করেছে এখন তার মাথায়।

সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে আকলিমা বেগম বলেন, ওইদিন বিকালে বাড়ির পাশের বাজারে পাওনা টাকা আদায় করতে যাচ্ছিলেন তার স্বামী। বাড়ি থেকে বাজারের দূরত্ব মাত্র তিন মিনিটের পথ। পথেই গুলিতে গুরুতর আহত হন নবীনুর। আকলিমা বলেন, বাড়ি থেকে বের হওয়ার ২০-২৫ মিনিট পরই নবীনুরের ফোন থেকে ফোন আসে। অপর প্রান্ত থেকে এক ছেলে জানান, নবীনুর গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরে তারা ওই ক্লিনিকে ছুটে যান। পরে সেখান থেকে নবীনুরকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সারারাত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। পরে সকালের দিকে জানানো হয় নবীনুর মারা গেছেন। এক রাতে ওই হাসপাতালে ৭০ হাজার টাকার মতো বিল হয়েছিল। পরিচিতদের কাছ থেকে টাকা চেয়ে বিল পরিশোধ করেন। নবীনুরের দুই মেয়ে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন বেশ আগেই। এবার কুরবানি ঈদে বাড়ি এসে ছোট মেয়েকে বিয়ে দেন। তবে মেয়েকে স্বামীর ঘরে তুলে দেননি।

এলাকাবাসী জানায়, নবীনুর এলাকায় অন্যের জমি ইজারা নিয়ে ঘের করতেন। প্রথমদিকে ভালো রোজগার হলেও শেষে লোকসান হতে থাকে। দেনায় জর্জরিত হয়ে এলাকা ছাড়েন তিনি। সাভারে গিয়ে মাছ ব্যবসা শুরু করেন। মাঝেমধ্যে বাড়ি আসতেন।

রাড়ুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, নবীনুর খুব গরিব। শুনেছি ঢাকার সাভারে মাছের ব্যবসা করতেন। গত ২১ জুলাই লাশ বাড়ি নিয়ে আসার পর তার মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। রাতেই লাশ দাফন করা হয়। লাশের ময়নাতদন্ত হয়নি বলে তিনি জানান।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles