
ছয়জন সমন্বয়কের উদ্ধৃতি দিয়ে ডিবি অফিস থেকে বলানো হলো ছাত্রদের সমস্ত কর্মসুচী প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু সেই আহবানে ছাত্ররা সাড়া দিয়েছে বলে সারাদিনের চিত্রেতো মনে হলো না। বিষয়টা নিয়ে আসুন একটু ভাবি। ছাত্রদের এই আন্দোলনের নাম কী? কোটা আন্দোলন? কোটা সংস্কার আন্দোলন? নাকি, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন? আমরা সকলেই জানি এবারের আন্দোলনের নাম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
অর্থাৎ কোটার দাবী হয়তো পূরণ হয়েছে কিন্তু বৈষম্য কি দুর হয়েছে? নিশ্চিত করে বলা যায়, বৈষম্যের গা’য়ে একটু আঁচড়ও এখনো লাগে নি। যে বা যারাই এই নামটি দিয়েছে, আমার মনে হয়, খুব সুচিন্তিতভাবেই নামটি দিয়েছে। এটার সুদুরপ্রসারি তাৎপর্য রয়েছে। কাজেই এ ধরনের বিচ্ছিন্ন লোক হাসানো পদক্ষেপ নিয়ে এই ধরনের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে বলে মনে হয় না।
একটা কথা ক্ষমতাসীন মহল বুঝতে ভুল করছেন তা হলো এটা কোন একটা ছাত্র সংগঠনের সাথে অপর ছাত্র সংগঠনের বিরোধ নয়। গোটা দেশের ছাত্র সমাজের আন্দোলন, যেখানে সরকারী দলের অনেকেও অংশ নিয়েছে। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি মাদ্রাসার ছাত্ররাও অংশ নিয়েছে।
আর এইসব ছাত্রদের এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে তাদের অভিভাবকেরা, রিক্সাওয়ালা, শিক্ষক সমাজ সহ সমাজের নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। এবারই প্রথম দেখলাম মানুষ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের বিষয়টা মোটেই গুরুত্ব দিল না। সরকারী প্রচারণায় দুইশতের অধিক প্রাণহানীর চেয়ে মেট্রো রেলস্টেশন পুড়ানোকে বেশী হাইলাইট করার চেষ্টাকে মানুষ ভালভাবে নেয় নি। দেশের গোটা ছাত্র সমাজের আন্দোলনটাকে প্রতিপক্ষ বানানোর মত অর্বাচীন উপদেশ সরকারকে কারা দিল, সেটা ভেবে অবাক হই। আবু সাঈদ সহ ছয়জন ছাত্রের নিহতের ঘটনা থেকে এ পর্যন্ত নেয়া অধিকাংশ সিদ্ধান্ত ভুল বলে প্রতীয়মান হয়।
মুলত সমাজের বৈষম্য এত বেড়ে গেছে যা মানুষের কল্পনার বাইরে। সমাজের একটা শ্রেণীর মানুষ ভিভিআইপি আর বাকীরা সবাই পইরাত বা বহিরাগত, এরকম একটা বিষয় অধিকাংশ মানুষ আজ উপলদ্ধি করে। ফলে চাপা ক্ষোভ আজ সর্বত্র। তবে মানুষ কোনভাবেই ফুটন্ত কড়াই থেকে লাফ দিয়ে জ্বলন্ত চুলায় পড়তে চায় না। মানুষ আসলে মুক্তি চায়। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, লাঞ্চনা, বৈষম্য থেকে মুক্তি চায়। বর্তমান ও ভবিষ্যত শাসকগোষ্ঠী এ কথাগুলো যত ভালভাবে বুঝতে পারবে ততই মঙ্গল।
স্কারবোরো, কানাডা