
কিছু টকশো দেখলাম, কিছু সরকারী বক্তব্য বিবৃতি শুনলাম। তারমধ্যে একটি হলো ডিবিসি টিভির টকশো। সেখানে তিনজন নেতা যথাক্রমে বাংলাদেশ জাসদের নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় পার্টির সাইদুর রহমান টেপা এবং আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম বাবু এম পি অতিথি ছিলেন। তার আগে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারী নাইমুল ইসলাম খানের বক্তব্য শুনলাম তৃতীয় মাত্রায়। এছাড়া মন্ত্রীদের বক্তব্য শুনছি। জাতীয় পার্টির টেপা সাহেব বললেন তিনি নাকি এক সময় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন কিন্তু তার কথায় মনে হলো একেবারেই যা তা লেবেলের নেতা। কোন কথায় কি বলতে হয় জানে না। এতই যখন কনফিউজ থাকেন তাহলে টকশোতে যাবার দরকার কি!
তবে নাজমুল হক প্রধান একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বললেন। ২০১৮ সালে যখন কোটা আন্দোলন শুরু হয় তখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মোঃ নাসিম চৌদ্দ দলের বৈঠক ডাকেন সচিবালয়ে। সেখানে নাসিম সাহেব বলেন, কোটা আন্দোলন নিয়ে কি করা যায় তার পরামর্শ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে উপস্হিত ফজলে হোসেন বাদশা এবং হাসানুল হক ইনু বলেন, ছাত্রদের পিটিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে! এই ঘটনাটা বললেন আজকের টকশোতে জনাব নাজমুল হক প্রধান। তাই ভাবি, সেদিন দেশে কার্ফু দেয়া এবং আর্মি নামানোর আগে গণভবনে চৌদ্দ দলের জরুরী বৈঠক ডাকা হয়। টিভিতে দেখলাম, ভাঙাচুরা দীলিপ বড়ুয়া, হাসানুল হক ইনু এবং রাশেদ খান মেনন গণভবন থেকে বের হয়ে কার্ফু জারির পক্ষে সাফাই গেয়ে কেটে পড়লেন। এসব দৃশ্য ৭১ এর সময়কার কিছু দৃশ্যের কথা মনে করিয়ে দেয়।
আরো একজন হার্ডলাইনার সাবেক বিচারপতি মানিকের টকশো বক্তব্য মানুষের ঘরে ঘরে চলছে। তিনি নিজে দেখেছেন নিহত আবু সাইদের হাতে অস্ত্র ছিল আর সে অস্ত্র হলো লাঠিসোটা! কি বিচিত্র।
ডিবি অফিসে আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের খাওয়া দাওয়ার দৃশ্য দেখিয়ে বলা হলো তারা তাদের সকল কর্মসুচী প্রত্যাহার করেছে। এই যে কথাগুলো বলা হলো তা কেন ডিবি অফিস থেকে বলানো হলো? কোন ধরনের বৈঠক বা সমঝোতা যদি হতেই হয় এবং সেটা যদি বিশ্বাসযোগ্য করতে হয় তাহলেতো সেই আলোচনাটা হতে হবে রাজনৈতিকভাবে, পুলিশের মাধ্যমে নয়। তাদের বৈঠক হওয়া উচিত ছিল কোন দায়িত্বশীল ও গ্রহণযোগ্য মন্ত্রীর বাসায় অথবা গণভবনে। পুলিশের কাছে বসে দেশের ইতিহাসের এত বড় একটা গণ আন্দোলন প্রত্যাহার করার বিবৃতি দেশের কত পার্সেন্ট লোক বিশ্বাস করে?
অর্থাৎ এই ঘটনাটা যে দেশের কতবড় একটা ভুমিকম্প ছিল তা উপলদ্ধি করার মত কোন সরকারী দায়িত্বশীল কারো কাজকর্মে মনে হচ্ছে না। কেউ কেউতো এই আন্দোলনে যে গণসম্পৃক্ততা আছে সেটাই মানতে নারাজ।
আসলে কে যে কার ভাল চায় আর কার মনে কি উদ্দেশ্য আছে বুঝা সহজ হলেও বলা মুশকিল। সারাজীবন গণআন্দোলন ও রাজপথ থেকে উঠে আসা অনেকেই কখন যে গণবিরোধী হয়ে উঠলেন সেটা ভেবেই আশ্চর্য হই।
স্কারবোরো, কানাডা