
গত ১৩ জুলাই গিয়েছিলাম টরন্টো থেকে উত্তরে ক্যাম্পিংয়ে, ছিলাম ৩/৪দিন। সময় আলহামদুলিল্লাহ ভালোই কেটেছিল। ওই সময় কোনো ধরণের যোগাযোগ মাধ্যমে থেকে একেবারেই দূরে ছিলাম। তারপর টরন্টো ফিরেই বৃষ্টিতে টরোন্টোর দুরবস্থা এবং পরবর্তি সোশ্যাল মিডিয়া খুলতেই দেখতে পাই দেশের খবর !!
মন মেজেজ স্বাভাবিকভাবেই ভালো ছিল না সে জন্য সেই অবকাশের কোনো কিছু আর পোস্ট করতে মন চাইনি। আমার FB পেইজে জন্মদেশের রাজনৈতিক বা এক্সট্রিম ধর্মীয় বা দর্শন নিয়ে কিছু পোস্ট করা থেকে বিরত থাকি, কিন্তু সাম্প্রতিক দেশের ঘটনায় ২/৪টি কথা না বলে পারি নাই। এদিকে আবার দেশের সাথে কোনো ধরণের যোগাযোগ করতে পারছি না, কি এক যন্ত্রনা, তবে হাঁ এই যন্ত্রনা প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণার সামনে কিছুই না।
যাহোক, অবশেষে ঠিক গত শনিবারে বন্ধু এবং ছোট ভাই রাফি এবং টোকন ভাইয়ের পরিবার এর সাথে টরন্টো থেকে একটু উত্তর-পূর্বের একটু শহরের একটি প্রভিন্সিয়াল পার্কে কিছু সময় কাটিয়ে আসি। বেশ ভালো লেগেছে।
পার্ক থেকে রাত ৮তার কিছু আগে টরোন্টর পথে HWY ১২ South ধরে রওয়ানা হই। গ্রামের রাস্তা দিয়ে ড্রাইভ করতে করতে হটাৎ দূরে কাশবনের মাথার উপর দিয়ে লাল টকটকে সূর্য দেখতে পাই। খুবই সুন্দর লাগছিলো। সাথে সাথে গাড়ি থামিয়ে আমি আর আমার ভাগ্নে বেশ কিছক্ষন সেই অপূর্ব দৃশ্য অবলোকন করি এবং আমাদের সেল ফোন দিয়ে কিছু ছবি তুলি।
বাসায় ফিরে রাতে যখন FB চেক করি তখন দেখি দেশে ছাত্ররা তাদের পেইজে লাল রং দিয়েছে। তাই মনে মনে ভাবলাম এটা কাকতালীয় কি না, ওই রক্তিম লাল সূর্য এবং ছাত্রদের লাল রঙের প্রতিবাদ !!!
যাহোক, অন্যায়কে অন্যায় বলা এবং সেটি আপনার একান্ত প্রিয়জনও যদি করে তাকেও সেটি স্মরণ করিয়ে দেওয়া শুধুমাত্র নৈতিক কাজই না, বরং অনেক Courageous এবং মহত্বের লক্ষণ যা সবাই হয়তো পারেন না, কিন্তু যারা পারেন তাদেরকে সালাম, ঠিক তেমনি একজন লোক হচ্ছে আমার ছোট ভাইয়ের মতো, বন্ধুও বলতে পারেন, ড. Mahmudul Mannan। দেশের সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবাদে উনি উনার FB লাল রং করছেন, সেটি দেখে উনারই পরিচিত এক বড়ো ভাই কমেন্ট করছেন, “তুমিও কি সুশীল হয়ে গেলে” সেই কমেন্টের উত্তরে মাহমুদুলের যে উত্তর সেটি আমি মনে করি যারা সত্যিকারে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভালোবাসেন বা তার দলকে সাপোর্ট করেন অথবা যেই দল বা আদর্শই অনুসরণ করনে না কেন তাদের ভালো করে জানা উচিৎ, এবং সত্যিকারের আদর্শের সৈনিক উনার মতো মানুষই হওয়া দরকার।
আমার সাথে মাহমুদুলের অনেক অনেক দিনের পরিচয় না হলেও আমি তাকে, তার ব্যাক্তিত্বকে খুব ভালোকরে জানি। আমি নিচে তার সেই কমেন্ট তুলে ধরলাম।
Thanks a lot Mahmudul Mannan for having such a genuine spine!!!!
অনুগ্রহ করে, কমেন্ট করেন করেন তবে কোনো ধরণের গালিগালাজ, বাজে ভাষা বাজে, বাজে কথা অথবা কোনো ধরণের লিংক শেয়ার করবেন না।
আসুন সবাই মিলে দোয়া করি যেন আল্লাহ্তালা দ্রুত দেশের এই করুন পরিস্থিতির সমাপ্তি ঘটিয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেন এবং সত্যিকারের খুনিদের বিচারের ব্যবস্থা করেন।
“ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার বিচারে আমি সুশীল হতেই পারি, কিন্তু এটা আমার একধরনের প্রতিবাদ। নিরোহ ছাত্রদের উপর গুলি চালানো থেকে শুরু করে কোটা আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপ আমাদের সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমার কাছে সরকার পরিচালনার জন্য আওয়ামীলীগ এর বিকল্প বিএনপি জামাত চৌদ্দদলের অন্যান্য শরীক দল হতে পারেনা কখনোই। কিন্তু এই আওয়ামীলীগ ২০০৮ এর আওয়ানীলীগ কখনোই হতে পারেনা যে আওয়ামীলীগ কে এই তরুন আর ছাত্রসমাজ ল্যান্ডস্লাইড ভিক্টোরির মাধ্যমে ক্ষমতায় এনেছিল।
আর কেউ না জানলে ও আপনি অন্তত জানেন আমরা কি পরিমান আওয়ামী আদর্শে বিশ্বাসী। দলের খারাপ সময়ে যেমন দলের পাশে দাড়াবো, তেমনি দলের ভুল পদক্ষেপে দলের সমালোচনা করা, প্রতিবাদ করাটা ও আমার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যো পরে। আমাদের আওয়ামীলীগ সরকাক ছাত্রদের দমন করার চেষ্টা করেছে পুলিশের লাঠির মাধ্যমে। তারা কি একবার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন চেয়েছিল? আওয়ামী সরকারের কি একজন ও নাই যারা তাদের কথা শুনতে পারত? আওয়ামীলীগ গনমানুষের দল ছিল, তরুনদের দল ছিল, আজ কি আপনার মনে হয়না তারা জনবিচ্ছিন্ন একটা দল।
এর উওর আমি চাই কেন? কারন এই দলটার পিছনে আমার সময়, শ্রম, ঘাম অনেক কিছু দিয়ে ভালবাসসি। আজকে যে আওয়ামীলীগ এর নেতাকর্মীদের রাস্তাঘাটে মার খেল তার দায়ভাড় কার ভাইয়া? আমাকে জবাব দিতে হবে না? বাংলার শহীদ তাজউদ্দিনের ছেলে সোহেল তাজের কথাগুলো আমি জানি আপনি শুনেছেন। আমার কথাগুলোও শুনলেন। আমি যদি সুশীল হই সোহেল তাজও সুশীল।
আপনি আমার বড়ভাই এবং অভিভাবকের মত। আমাকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার শতভাগ অধিকার আপনার আছে। আমার দল সঠিক কাজটি করার জন্য যদি বিরোধী দলে ও যেতে হয়, আমার আফসোস থাকবেনা। সে সময় আর কাউকে না পেলেও দেখবেন দূর থেকে আপনার ছোট ভাইটা এসে আপনার পাশে দাড়িয়ে গেছে। আমার কথায় দু:খ পেয়ে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। পরিশেষে একটা কথাই বলব, এই আওয়ামীলীগ কখনো দেখতে হবে আশা করি নাই।”
টরন্টো, কানাডা