
পঞ্চগড় সীমান্ত এলাকায় সন্দেহভাজনভাবে চলাফেরা করতে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে আটক হন সানজিদা রুনা (২৩) নামের এক তরুণী। প্রাথমিকভাবে তাকে ভারতীয় তরুণী হিসেবে ধরে নেওয়া হলেও সংবাদ প্রকাশের পর জানা গেছে সেই তরুণী ভারতীয় নয় বাংলাদেশি। তিনি রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান গাওয়াইর এলাকার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে রোগে ভুগছেন এমনটাই জানিয়েছেন তরুণীর বাবা।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বৃহস্পতিবার সকালে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ছবিসহ প্রমাণাদি নিয়ে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় আদালতে ছুটে আসেন ওই তরুণীর বাবা আলমগীর হোসেন হাওলাদার।
মেয়েকে ছাড়িয়ে নিতে দিনভর আদালতের বারান্দায় ছুটোছুটি করেন তিনি। আদালতে মেয়েকে নিজ জিম্মায় জামিন দেওয়ার আবেদন করে প্রমাণ ও তথ্য পেশ করেন। বিকেলে মামলার বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুজ্জামান কাগজপত্র ও প্রমাণাদি বিচার বিশ্লেষণ করে ওই তরুণীকে ১০ হাজার টাকার বন্ডে আইনজীবী ও তার বাবার জিম্মায় জামিন দেন। একইসঙ্গে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তিসহ আসামি হাজিরের জন্য দিন ধার্য করেন। পরে সন্ধ্যার পরে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আদালত চত্বর ছাড়েন বাবা।
এ সময় মেয়ের বাবা আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ঠিকাদারির কাজ করায় ঢাকার দক্ষিণখান এলাকার গাওয়াইর এলাকায় বসবাস করছি। গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলায়। দুই বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সানজিদা বড়। ২০১৬ সালে লালমনিরহাট এলাকার এক তরুণকে ভালোবেসে বিয়ে করে। বিয়ের ৫ বছর পরে ২০২১ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনে মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। মেয়েটির নাম রাখা হয় সিনথিয়া স্মৃতি। সন্তান প্রসবের পরপর দেখা দেয় মানসিক সমস্যা। চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় মানসিক হাসপাতালেও। চিকিৎসা চালালেও বারবার পালিয়ে যাওয়ার কারণে সম্ভব হয়নি পূর্ণ চিকিৎসা। হিন্দি সিনেমা, সিরিয়াল দেখার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার কারণে হিন্দি ভাষাও আয়ত্ত হয় তার।
গত ২৯ জুলাই রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই খোঁজাখুজি করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পেরে নিশ্চিত হই। পরে মেয়েকে ছাড়িয়ে নিতে সকল প্রকার তথ্য-প্রমাণাদি নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ছুটে আসি। দিনভর আদালতের কাজ শেষ করে বিকেলে জামিন হলে মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাতে পঞ্চগড় আদালত পুলিশের পরিদর্শক জামাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, রাতে ওই তরুণীকে নিয়ে ঢাকায় চলে গেছেন তারা বাবা আলমগীর হোসেন হাওলাদার। তার দাবি দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে ভারসাম্য হারিয়ে রোগে ভুগছেন তার মেয়ে। গত বুধবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে সে বারবার হিন্দিতে কথা বলে নিজেকে ভারতীয় হিসেবে পরিচয় দেয়। এর আগে মঙ্গলবার ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপরাধে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় ওই তরুণীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। বৃহস্পতিবার আদালতে বাংলাদেশি হিসেবে তার বাবা সব তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করলে আদালত তাকে তার বাবার জিম্মায় জামিন দেন।
এর আগে, গত মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের বামনপাড়া এলাকায় সন্দেহভাজনভাবে চলাফেরা করতে দেখে স্থানীয়রা তাকে আটক করে বিজিবিকে খবর দেয়। আটকের সময় থেকেই তাকে হিন্দি ভাষায় কথা বলার পাশাপাশি সে ভারতের মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকার বাসিন্দা বলে পরিচয় দেয়। এমন তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবি তাকে তেঁতুলিয়া মডেল থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করলে তরুণীর বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে মামলা হয়। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে বাবার সঙ্গে অর্নগল বাংলা ও ঢাকার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন রুনা।