-2.6 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৩, ২০২৫

কর্পোরেট শোক

কর্পোরেট শোক
জাভেদ ইকবাল

হাসিনা সমর্থকদের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।

মনে হচ্ছে তাদের খুব কাছের কেউ ইন্তেকাল করেছেন [ইন্না-লিল্লাহ হে…]। মা-বাবা মারা গেলেও একসময় স্বজন হারানোর বেদনা কমে আসে। এদের কমেনি, কমার লক্ষ্মণও নাই। কাউকে নেতা মানা দোষের কিছু না। হাসিনা খুব ভাগ্যবতী; শত শত মানুষ হত্যার পরও সমর্থকদের প্রেম এক চুল কমেনি।
.
এদের Corporate culture খুব স্ট্রং।
নেত্রী যখন বলল, “কী করেছি আমি?”; তখন তার পূজারিরাও এক যোগে বলা শুরু করলো, “আচ্ছা, হাসিনা করেছেটা কী?”। এরা বিশ্বাস করতো হাসিনা ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। ভোট ডাকাতি করেই হোক, কিংবা খুন-খারাবি করেই হোক। তাই হাসিনা পালানোর পর তাদের দু:খ আর শোকও কর্পোরেট।
কর্পোরেট ফ্যাসিস্ট চিন্তা-ভাবনার জ্বলজ্বলে দৃষ্টান্ত।
.
এরা বাইরে বাইরে বা ফেইসবুকে যতটা না দেখাচ্ছে, আসলে তার চাইতেও হাজারগুন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। কিছু আবার নিরপেক্ষতা শো করার ব্যর্থ চেস্টা করে যাচ্ছে। তবে ঠিকই নিজেদের মধ্যে ফোন করে কান্নাকাটি করে, দেখা হলে জড়িয়ে ধরে কানতে কানতে অজ্ঞান হয়। ঘুমের ওষুধ না খেয়ে তারা ঘুমাতে পারে না। দাওয়াৎ দেয়া-নেয়া কমে গেছে, নাচ-গান-জলসা কমে গেছে। সারাক্ষন মনের মধ্যে, এখন কী হবে গো?
.
এমন কি, তাদের হিংসা-হিংসীও কর্পোরেট। এক যোগে মুখ বাঁকা করে বলে- “এ দেশ চেয়েছিলাম? এখনই এ অবস্থা, পরে কী হবে? এবার বুঝুক ঠ্যালা!” ইত্যাদি..
.
বিস্বস্ত সমর্থকদের বলতে শুনেছি- উনি নাকি ছিলেন ‘পারফেক্ট নেত্রী’! কেউ আবার কানতে কানতে বলেছে তারা এখন অভিভাবকহীন! পূর্বের কিছু উদাহরণ চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে- শাইখের কথা বলা(পাম-পট্টি) শেষ হলে জিজ্ঞেস: “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি কি এখন বসতে পারি?”। চঞ্চলের ‘মা মা’ বলে গান শুনিয়ে পা ধরে সালাম করে ধন্য হওয়া।
তাদের মা সন্তান রেখে পালালেও জননী, হাজারো খুন করলেও জননী।
.
তাদের মূল কর্পোরেট বিশ্বাস হলো দেশটা তাদের, শুধুই আওয়ামী লীগের। ক্ষমতা তাদের চাই-ই চাই। কীসের ভোট? সেজন্যই গণ-অভ্যুত্থানে দেশের মানুষের আক্রোশ, ঘৃনায় মাখামাখি হয়ে ভারতের পালিয়ে গেলেও জননীর প্রতি ভালবাসায় একচুল ফাটল ধরেনি।
.
এদের কাছে হাজারটো মৃত্যু শুধুমাত্র একটা সংখ্যা ছাড়া কিছুই নয়? সবার মাঝেই ফ্যাসিবাদের বিজ বপন করা? যেটা বড় হয়ে তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পাঁকা-পোক্ত শেঁকড়ের মতো আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে আমৃত্যু? সেখান থেকে বের হবার কোন রাস্তা খোলা নাই?
.
দেশে আসলেই লক্ষ লক্ষ মুজিব প্রেমী আছে। তারা এখনও ‘জয়’ জপতে জপতে ঘুমায়, ইন্ডিয়ার দিকে বুকভরা আশা নিয়ে চেয়ে আছে। এরা হয়তো আগামি কুড়ি বছর আর ক্ষমতায় আসবে না, তবে ঠিকই ধান্দায় আছে।
ও হ্যাঁ, তাদের আরও কিছু কর্পোরেট কষ্ট হলো- মিষ্টি গলায় ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’ ডাকতে না পারা, সবকিছুতেই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করতে না পারা, আওয়ামী বিরোধীদের কথায় কথায় রাজাকার ডাকতে না পারা..
.
তবে আপদ বিদেয় হওয়ায় সাধারণ জনগণের কর্পোরেট সুখ কিন্তু দেখার মতো! অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমাদের কর্পোরেট সমর্থন, সুন্দর কর্পোরেট ভবিষ্যতের আশা।

- Advertisement -

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles