-0 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

টিপুনামা

টিপুনামা
টিপুনামা

তার নাম টিপু। টিপু নামেই তাকে জানতাম।মেডিকেলের ছাত্র ছিলো আমার কয়েক বৎসরের নীচে।তার বড়বোন দুলাভাইকে চিনতাম। সেই সূত্রে মেডিকেলে এসে সে তার পরিচয় দেয়। মাঝে মাঝে ওয়েষ্ট ব্লকের হোষ্টেলে আসতো।তার সাথে আমার কথা হ’ত।নিজের ছোট ভাই এর মতো হয়ে গেলো সে।দিনে ক্লাস, সন্ধায় ওয়ার্ড এই নিয়ে দিনগুলি দ্রুত চলে যেতে লাগলো।কলেজে টিপুর সাথে দেখা হয় তখন কথা হয়। একদিন রাতে রুমে এলো চোখে তার অশ্রু।জানালো তার বড় বোন মারা গেছে। তার কথায় মূক হয়ে গেলাম। নিজেকে সামলে তাকে স্বান্তনা দিলাম।

সে তার হোষ্টেলে চলে গেল।প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষ পার হয়ে টিপু তখন ফার্ষ্ট প্রফেশনাল পরীক্ষার্থী। হঠাৎ একদিন রুমে এলো।চোখ মুখ ভার, মন মরা।এ সময় এমন দেখাচ্ছে কেন জানতে চাইলাম।যা বললো তা শুনে আমি অবাক। টিপু বললো তার ডান হাতে সে লিখতে পারছে না, হাত কাপছে।বা হাতেও একই অবস্থা। সে ছোটবেলায় বা হাতে লিখতো। তারপর বাবা-মা ডান হাতে কলম পেন্সিল ধরিয়ে দিতেন। এরপর থেকে সে ডান হাতে লেখে। তার উদ্বিগ্নতা তার পরীক্ষাকে ঘিরে। সে কিভাবে পরীক্ষা দেবে?তাকে কি বলবো? একটা কিছুতো আশার কথা বলতে হবে?তাকে বলালাম যতদূর জানি পরীক্ষায় রাইটার নিয়োগের ব্যবস্থা আছে জরুরী মুহুর্তে।পরামর্শ দিলাম মেডিসিনের প্রফেসরের কাছ থেকে সুপারিশ নিয়ে ডিনের অফিসে যেতে।

- Advertisement -

এর কিছুদিন পর টিপু জানালো যে তার আবেদন মঞ্জুর হয়েছে এবং সে রাইটার নিয়ে লিখিত পরীক্ষা দিতে পারবে।বললাম ২য় বর্ষের ফার্ষ্ট বয়কে নিয়ে সে যেন পরীক্ষায় বসে।তার লিখিত পরীক্ষার সময় একদিন গ্যালারীর দরজার সামনে গেলাম তার দেখা পাওয়া যায় কিনা তাই ভেবে। প্রথম সারিতে বসে টিপু আর ২য় বর্ষের ফার্ষ্ট বয় তার লিখিয়ে হয়ে লিখিত পরীক্ষা দিচ্ছে। আমাকে দেখে দুজনাই হেসে তাদের কুশল জানালো। আমি আত্মতৃপ্তি নিয়ে ফিরে এলাম।

ইয়েলোনাইফ, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles