
আওয়ামী লীগের সরকারের সবচেয়ে বড় একটা দোষ ছিল দেশের মানুষকে বিভক্ত করা। যাকে তাকে রাজাকার ট্যাগ দেয়া। বিশেষ করে বিপক্ষ মতকে দমন করতে বা চুপ করিয়ে রাখতে এই কাজটি করা হতো যা দেশের অধিকাংশ মানুষ ভালভাবে নেয় নি। অথচ ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের নয় মাসে প্রকৃত রাজাকারের সংখ্যা ছিল হাতে গোণা। পিস কমিটির সদস্য যারা হয়েছিলেন তাদের অনেকেই হয়েছিলেন বাধ্য হয়ে, নিজের অথবা অন্যদের জীবন বাঁচাতে অথবা নিজেদের গ্রাম বা মহল্লা পাক বাহিনীর আগুনের হাত থেকে রক্ষা করতে।
অনেকেই ছিলেন জামাত বা মুসলিম লীগের সমর্থক হওয়া সত্তেও মুক্তিযোদ্ধাদের মাসের পর মাস তাদের বাড়ীতে আশ্রয় দিয়েছেন, খাবার দিয়েছেন, আগলে রেখেছেন। পাকবাহিনীর লোকেরা কল্পনাও করতে পারে নি যে কোন জামাত বা মুসলিম লীগের লোকের বাড়ীতে কৃষকের ছদ্মবেশে বা পইরাতের ছদ্মবেশে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে একদল চৌকষ মুক্তিবাহিনী। এসব ঘটনা অনেকেই জানেন। তবুও রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতে স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরেও দেশে দীর্ঘদিন যাবত রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা বিভেদ সৃষ্টি করে রাখা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এখন একই চিত্র দেখা যাচ্ছে কিছুটা উল্টোভাবে। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে ২০২৪ সালে পতন হলো। ২০০৯ সালে যে শিশুটির জন্ম হয়েছিল তার বয়স আজ ১৬ বছর। এই ষোলটি বছর সে শুধু আওয়ামী লীগকেই দেখেছে। সাথে ফখরুদ্দিন মইনুদ্দিনের দুই বছর যোগ করলে ১৮ বছর। ১৮ বছর দেশের মানুষের জীবনের একটা বড় সময়। এই দীর্ঘ সময়ে কিছু মানুষ চরম নিগৃহীত হয়েছে, ঘরবাড়ী ছাড়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু বিশাল একটা জনগোষ্ঠীকে এ্যাডজাষ্ট করে চলতে হয়েছে। ফলে ঢালাওভাবে মানুষকে ট্যাগিং না করে, ঢালাওভাবে কারো দিকে আওয়ামী ট্যাগ না মেরে যারা অপরাধ করেছে বা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে শুধু তাদেরকেই আইনের হাতে সোপর্দ করা উচিত।
যে কাজ পুর্ববর্তী সরকার করে নিন্দিত হয়েছে সেই একই কাজ বর্তমানে কেউ করলেও নিন্দিত হবেন, আজ না হলেও আগামীকাল। অনেকেই আছেন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানতে বাধ্য হয়েছেন। সেগুলো হৃদয় দিয়ে উপলদ্ধি করতে হবে। অনেকেই কোর্টে আত্ম সমর্পন করতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে অবৈধভাবে বর্ডার পার হতে গিয়ে আহত নিহত হচ্ছেন। কোটি কোটি টাকা ভারতীয় দুর্বৃত্তদের হাতে খোয়াচ্ছেন। এসব বন্ধ করতে হলে নিরাপদ আত্মসমর্পনের ব্যবস্হা থাকতে হবে। পুলিশকে কোন আসামী কোর্টে প্রডিউস করার আগে অবশ্যই কোর্ট এলাকা নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্হা করতে হবে। মনে রাখা দরকার ডক্টর ইউনুসের নিজস্ব কোন দল নেই, রয়েছে বিপ্লবী ছাত্র জনতার অকুন্ঠ সমর্থন। কিন্তু আদালতে কোন আসামীকে নেয়া হলেই এক শ্রেণীর লোক আসামীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে, তারা আসলে কারা? দেশ ও দেশের বাইরে এতদিন যারা বিগত সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সরব ছিলেন তারা কিন্তু দেখছেন।
দয়া করে সামান্য ভুলে বড় বড় অপরাধীদের দীর্ঘ সতের বছরের অপরাধকে আপনার সামান্য প্রতিহিংসা, রাগ বা ক্ষোভ উগরাতে গিয়ে লঘু করে দিবেন না। ড. ইউনুস সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা সফল হলে আগামীতে আইনের শাসন কায়েম হবে। যেখানে দেশের সকল নাগরিক নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারবেন। তিনি ফেইল করলে দেশ আরো খারাপের দিকে যাবে। ভারতীয় সাম্প্রদায়িক শক্তি সুযোগ নিতে পারে। বিশ্বের পরাশক্তিগুলো মুলত এন্টি মুসলিম। ভারত ইসরাইলের বন্ধু। ইসরাইল আমেরিকা বৃটেন, ফ্রান্স জার্মানির পরম বন্ধু। হিজবুল্লাহ, ইরানের সাথে যুদ্ধ শুরু হয় হয় ভাব। একবার শুরু হয়ে গেলে আমাদের অবস্হানে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার শুরু হয়ে যেতে পারে। আরো দু মাস বন্যা পরিস্হিতি নিয়ে হিমসিম খেতে হবে। সরকার সুস্ঠভাবে দম নেবার সময় পাবে না ভাল মন্দ চিন্তা করার। এদিকে কিছু রাজনৈতিক দল ক্রমেই নির্বাচনের দাবীতে অসহিষ্ণু হয়ে উঠবে। অতএব, সকলকে বলবো, ঠান্ডা মাথায় সবকিছু ভেবে দেখুন। উত্তেজিত হওয়া যাবে না। সরকারের সময় দরকার। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে সর্বোচ্চ দেশ প্রেম প্রদর্শন করে যেতে হবে।
স্কারবোরো, কানাডা