
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময় প্রধান বিরোধী দল ছিল জাসদ, ন্যাপ, কমিউনিষ্ট পার্টি, সর্বহারা ইত্যাদি। আজকের বিএনপি জামাতের অনেকেই তখন এসব দলের সদস্য ছিলেন। তখনকার পত্র পত্রিকা খুললে দেখা যায় সেইসব বিরোধীদলগুলো বঙ্গবন্ধুর সরকারকে স্বৈরাচার সরকার আখ্যায়িত করতো।
বঙ্গবন্ধু এবং জিয়াউর রহমান সরকারের সময় বিরোধী দলগুলো প্রকাশ্যেই তাদের ভাষায় ‘স্বৈরাচার সরকারের’ বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে জেল জুলুম নির্যাতন, হত্যা গুমের শিকার হয়েছে। এরশাদ, খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনার সরকারকেও বিরোধী দলগুলো একই নামে অভিহিত করেছে এবং রক্তক্ষয়ী আন্দোলন করেছে। দুর্নীতি হত্যা দখলবাজী সকল সরকারের সময় একটা বড় অভিযোগ ছিল এবং সরকার পরিবর্তনের পর শুধু লুটেরাদের চেহারা পরিবর্তন হয়েছে, পুরনো পত্রিকা খুললে পরিস্কার হয়ে যাবে।
তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়াল? মুজিব, জিয়া, এরশাদ, খালেদা হাসিনা, এমন কোন সরকার দেশে ছিল না যাঁদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয় নাই, যাদের বিরুদ্ধে হত্যা দুর্নীতির অভিযোগ ছিল না, যাদেরকে স্বৈরাচার আখ্যা দেয়া হয় নাই। একটা পার্থক্য ছিল সেটা হলো রাজনৈতিক সুবিধা, ক্ষমতার হালুয়া রুটি ভাগাভাগির স্বার্থে বিরোধী দলগুলোর স্হান পরিবর্তন হয়েছে। যে ইনু মেনন ৯০ এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে হিরো ছিলেন তারা আজ ২০২৪ এ এসে রাজাকার উপাধি পেয়েছেন। যারা একসময় সত্যিকার রাজাকার ছিলেন তারা আজ অনেকেই ২৪ এর হিরো হয়ে গেছেন। মুজিব সরকার থেকে শেখ হাসিনা সরকার পর্যন্ত ১৯৭২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বিরোধী দলগুলোর চরিত্র, বক্তব্য, স্হান পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
১৯৯০/৯১ সালে যে এরশাদ ছিল অপাংতেয়, যাকে ৯১ এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দিতেই অনেকের আপত্তি ছিল, অন্য সকলকে সুযোগ দিলেও যাদেরকে রেডিও টিভিতে নির্বাচনী বক্তব্য দিতে সুযোগ দেয়া হয় নি, সেই এরশাদকে ৯৬ সালে সরকার গঠনের সময় বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ দলে টানতে কী কী প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছিল তা আমরা দেখেছি।
এমনকি জেলখানায় পাঠিয়ে এরশাদকে যে সব প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তা মওদুদ আহমেদ এবং আরো অনেক লেখকের বইতে পরিস্কার উল্লেখ আছে। পরবর্তীতে এরশাদকে কখনো চারদলীয় জোটে, কখনো মহাজোটে নিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে এরশাদকে নিয়ে তার শাসনামলে বিরোধীদলগুলো যা যা বলেছে সবই ছিল রাজনীতির চাওয়া পাওয়ার হিসাব নিকাশের খেলা।
২০২৪ সালে হাজারো ছাত্র জনতার বুকের তাজা রক্তে সত্যিকার গণ-অভ্যুত্থানের পরও দেখছি অনেকের রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ ও স্বার্থের খেলার কোন পরিবর্তন হয় নাই।
এত বড় একটা পরিবর্তনের পর সরকারে কোন রাজনৈতিক দল আসে নাই, ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতায়, মাত্র একমাসেই হাট ঘাট, টার্মিনালে চাঁদাবাজদের এই যে হাত বদল হয়ে গেল তারা কারা? তারপরও একশ্রেণীর দলবাজ, দলান্ধ মানুষ নিজের গুহ্যদেশের গন্ধ লুকিয়ে অন্যের পশ্চাৎদেশের গন্ধ শুঁকে বেড়ান যা সত্যিই কোন ভাল ভবিষ্যতের ইংগিত দেয় না!
স্কারবোরো, কানাডা