
ফেসবুকে ঢুকে দেখি আমি হঠাৎ মধ্যযুগে পদার্পন করেছি। অনেক আগে থেকেই তো আমরা জাতি হিসেবে পশ্চাদমুখী আর এখন যেন পিছনের দিকে যাত্রার গতি বেড়েছে। হাজার বছর ধরে তিল তিল করে গড় তোলা শিল্পকলার দফা রফা করে একজন গুনি আঁকিয়ে তাঁর ক্ষমতার সর্বনিন্ম অপব্যবহারটি করেছেন। আমি পৃথিবীর এমন কোনও প্রত্যন্ত অন্চলের কথা বলছি না যেখানে সভ্যতার আলো পৌঁছেনি। এমনটিও না যে তিনি মানব সভ্যতার থেকে যোজন যোজন দূরে। তিনি আমাদেরই মত দেশত্যাগী একজন মানুষ যিনি পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একটিতে বসবাস করেন।
এখন বুঝছি, একটি বাঁদরকেও ভালোভাবে ট্রেইন করলে ছবি সে আঁকতে পারবে, তাঁই আঁকাটা খুব কৃতিত্বের ব্যাপার নয়। ব্যাপার হল ম্যাসেজ। আর নিজের হৃদয়ের সবচেয়ে অন্ধকার দিকটি তুলে ধরেছেন সেই ব্যাক্তি।
মজার ব্যাপার হল, যাকে অপমান করার চেস্টা তিনি করেছেন আমার জানামতে তিনি যে দেশে থাকেন সেই দেশের আইন ভঙ্গকারী কিছু করেন নি। আর যদি করেও থাকেন তবে এই দেশে সরকারের পা না চাটা আইন প্রয়োগকারী বাহিনী রয়েছে। তাদের খবর দিয়ে রাসেল ভাইপারের ছবি আঁকতে পারতেন। তা না করে আরেকজনকে অপমান করার চেস্টা করেছেন। ধিক আপনাকে।
তাঁর মত করে তিনি তাঁর বক্তব্য প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আমাদের আঁকিয়ে বন্ধুটি “বাক স্বাধীনতার” ব্যাপারটা ভুলে গেছেন। এটা অবশ্য স্বাভাবিক। বহু বছর তিনি হয়ত অপরপক্ষের “বাক স্বাধীনতা” চর্চা থেকে বিরত থেকেছেন আমাদের সকলেরই মত। একপাক্ষিক তোষামোদে ডুবে থেকে তিনি ভুলতে বসেছেন মানুষ থাকলে তাদের আইডিওলজি থাকবে। একে অন্যের আদর্শে বিশ্বাস না করলেও চলবে তবে প্রত্যেকেরই মত প্রকাশের অধিকার আছে। কোনো ফ্যাশিস্ট সরকার সেই অধিকার দমিয়ে রাখতে পারলেও ছিনিয়ে নিতে পারবে না। তিনি তার সাম্প্রদায়িক গোঁড়ামি নিজের মধ্যে রাখতে পারেন নি- শিল্পী হিসেবে নিজের অবমূল্যায়ন তো করেছেনই- মানুষ হিসেবেও পরিচয়ের ব্যাপারে সন্দেহের উদ্রেক করেছেন।
আরও মজার ব্যাপার হল যারা এই কযারিক্যাচারের পক্ষে রিএক্ট দিয়েছেন এবং মন্তব্য করছেন। তবে তাদের আর দোষ কি? “হীরক রাজার দেশের” যন্তর মন্তর থেকে বের হওয়া সকলেই এমন কথা বলতেন। কামরুল হাসানের হতে চাওয়া তথাকথিত শিল্পীটির প্রতি যেমন করুনা হচ্ছে তেমনি তার কাজের তীব্র নিন্দা করছি। দড়ি ধরে টান মারা হয়েছে। রাজা খান খান হয়েছেন। দোয়া করি আপনাদের উপর থেকেও যন্তর মন্তরের প্রভাব উঠে যান। আবার আমরা সকলে স্বাধীন মানুষ হয়ে উঠি।
টরন্টো, কানাডা