
রফিক এলাকায় ঢুকেই দেখে লোডশেডিং চলছে।
সে নস্টালজিক হয়। এই লোডশেডিং তার জীবনে কত ব্রেকআপ ঘটিয়েছে তার কোন শেষ নেই।
সে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে পড়ে এবং তার জীবনের প্রথম ছাত্রী দোলা। ক্লাস টেনের মেয়েটাকে পড়াতে গিয়ে সে নিজেই দোলার প্রেমের ছাত্রতে পরিণত হয়। দোলা তাকে শিখায়।
স্যার সবসময় সন্ধ্যায় পড়াতে আসবেন। এই সময় ঘন ঘন লোডশেডিং হয়। আমরা হাতে হাতে খেলা খেলবো।
দোলা গুনগুন করে গান গায়
ছিঁড়বে না কভু এই বাঁধন, আসলে আসুক তুফান।
রফিকের কি যে ভালো লাগতো। সে মনে মনে দোয়া করতো এই লোডশেডিং এর দিন যেন কোনদিন শেষ না হয়। সে বিদ্যুৎমন্ত্রীর লম্বা আয়ুর জন্য দোয়া করতো। টিউশনির টাকা থেকে প্রতিমাসে দশ টাকা দান করতো উনার নামে।
একদিন লোডশেডিং এ সে প্রচণ্ড আবেগি কণ্ঠে বলতে থাকে
জানো দোলা স্রষ্টার যে আমার প্রতি প্রচণ্ড মায়া তাতে আমি নিশ্চিত। প্রতিদিন তোমাদের বাসায় ঢুকার আগেই প্রার্থনা করি যেন আজকে পড়ানোর সময় আর কারেন্ট না আসে। আমি পীর বংশের ছেলেতো। তাই প্রার্থনা বিফলে যায় না। আসো তোমার ঠোঁটে ফু দেই।
রফিক অবাক হয়; দোলা তার কান ধরে টানছে। মেয়েটা বায়োলজিতে দুর্বল। জানে না কি করা উচিত। খসখসে হাত। তাতে রশুন এবং আদার কি বিদঘুটে গন্ধ।
এই কান ধরে টানছও কেন? তোমার হাতে মশলার গন্ধ কেন? তুমি আমার সংসারে রাজরানী হয়ে থাকবে, তুমি কি তোমার আম্মার মতো সারাদিন বাসার কাজ করবে নাকি?
বদের হাড্ডি বদ। আমি আগেই সন্দেহ করছিলাম। এই বদ পোলা প্রতিদিন তিন ঘণ্টা আমার মেয়েকে পড়ায় তারপরেও আমার মেয়ে সব বিষয়ে ফেল করে? আজকে তোরে যদি পুঁতা দিয়ে না পিষি তাইলে আমার নাম সখিনা বেগম না। তোর ফু দেয়া আমি ছুটাচ্ছি।
রফিক কোনভাবে নিজেকে উদ্ধার করে পালায়। এই মহিলা পিষা ছাড়া আর কিছুই জানেন না। তাই উনার স্বামী চ্যাপ্টা হয়ে হাঁটে। সবাই তাকে চ্যাপ্টা খালেক ডাকে। রফিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে। দোলার সঙ্গে তার বিয়ে হলে সবাই তাকে চ্যাপ্টা খালেকের জামাই ভোঁতা রফিক ডাকতো। তার চেহারার মধ্যে ভোঁতা ভাব প্রবল।
নীলার ফোনে সে বর্তমানে ফেরত আসে।
শুনো আমি একটু শপিং এ আসছি। ছেলেকে উপর তালার ভাবীর কাছে রেখে এসেছি। উনি ওকে পড়াবেন। তোমার উপর তালায় গিয়ে ছেলেকে দেখে আসার কোন দরকার নাই।
আর শুনো আজকে আমার বাসায় আমার মামাতো বোন নিতু আসবে। ও কিন্তু প্রেমিকের কাছ থেকে সিরিয়াস ছ্যাকা খাইছে। সুইসাইড করার মতো অবস্থা। তুমি ওকে সান্ত্বনা টান্তনা দিবা। তবে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে আবার
আয় শালী বুকে আয় এমন কিছু করার চেষ্টা করবে না।
কি যা তা বলছো? তুমি জানো আজকে লিফটে কবিতা ভাবি উঠেছে দেখে আমি আর উঠেনি।
তাই নাকি? খুব ভালো। তোমার উন্নতি হয়েছে দেখি।
নীলা ফোন রেখে দিয়েছে। রফিকের ভালো লাগছে। নীলাকে খুশী করার পদ্ধতি সে রপ্ত করছে।
আসলে আজকে কবিতা ভাবী লিফটে উঠার পর আর জায়গা ছিল না। তাই তার উঠার চান্সও ছিল না। তবুও সে ফ্যালফ্যাল করে ভাবীর দিকে তাকিয়ে ছিলো।
আহা তিনি যদি লিফট থেকে নেমে বলতেন
আচ্ছা রফিক ভাই পরের লিফটে আমরা দুজন একসঙ্গে যাবো।
তিনি তা না করে বরং তার দিকে তাকিয়ে বলেছেন
ভাই হেটে নামেন। লিফটের উপর চাপ কমান।
রফিক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উপর তালায় যায় ইহানের খোঁজ নিতে। না বাসায় কেউ নেই। ছাঁদে গিয়ে দেখে ইহান সামান্থার হাত ধরে বসে আছে।
কি অবস্থা ইহান? পড়াশুনা কই?
বাবা আমরা এখন মঙ্গল গ্রহে আছি। এখানে বিদ্যুৎ নেই। সামান্থা ভয় পাচ্ছে। যেকোনো সময় এলিয়েনরা আমাদের আক্রমণ করবে। তাই আমি সামান্থার হাত ধরে বসে আছি। ওকে সাহস দিচ্ছি।
পাশের থেকে বিউটি ভাবীর হাসির আওয়াজ।
দেখেছেন এখনকার ছেলেরা কেমন স্মার্ট?
ঠিক বলেছেন ভাবী। জানেন লোডশেডিং হলেই আমার না ভয় লাগে। সেই ছোটবেলা থেকেই। মনে হয় কেউ এসে আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।
তাই নাকি? তাহলে আপনাকে সাহস দিতে হবে আমার?
বিউটি চোখ নাচায়।
রফিক ফিসফিস করে গান গায়
ছিঁড়বে না কভু এই বাঁধন, আসলে আসুক তুফান।
ঠিক সেই সময় নীলার ফোন। রফিকের দুঃখে কাঁদতে ইচ্ছে করে। তার জীবনে এমন ঘটনা বেশী ঘটে। সেদিন তার কলিগ সোনিয়া অফিস থেকে বের হয়েই তাকে ডাকছিল রফিক ভাই বৃষ্টি পরছে। চলেন আপনাকে রিক্সা করে সামনে এগিয়ে দেই। ঠিক তখনি নীলার ফোন।
শুনো আসার সময় বাবুর জন্য গ্লিসারিন সাপোজিটর নিয়ে আসবে। ওর হাগু আটকে আছে।
হাগু আটকে আছে? রফিক জোরে বলে।
রিক্সা থেকে সোনিয়া বলছে
কি বলছেন? ছ্যা ছ্যা রফিক ভাই। এই বয়সেও আপনার এই অবস্থা। এই ভাই রিক্সায়ালা তাড়াতাড়ি টানো।
রফিক আর ফোন ধরে না। নিশ্চিত নিতু বাসার গেটে এসে দরজা ধাক্কাচ্ছে। নিতুকে সে দেখেছে বহু বছর আগে। এখন মেয়েটা কেমন হয়েছে দেখতে কে জানে?
ঠিক ধরেছে সে। দরজার সামনে নিতু দাঁড়িয়ে। মেয়েটার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বোরকা পরা শুরু করেছে।
নিতু কেমন আছো। তোমার আপু আমাকে ফোন করে জানিয়েছে তুমি আসবে। কারেন্ট নেই। বিল্ডিং এর জেনারেটর নষ্ট। দাড়াও মোমবাতি খুঁজে নিয়ে আসি।
না না দুলাভাই আপনি বসেন।
নিতু আমি সব শুনেছি তোমার কথা। তুমি দুঃখ পেয়েছো। কিন্তু দেখো প্রেম ভালোবাসার কোন প্রয়োজন নেই জীবনে। এই যে সংসার জীবন কি যে প্যারাময়। তোমাকে কি বলবো? তুমি মনে করো আমি তোমার সেই প্রেমিক এবং তুমি আমার প্রেমিকা। আমাদের বিয়ে হয়েছে। আসো আমরা সংসার সংসার খেলি।
আসেন দুলাভাই।
নিতু ডার্লিং আমার জন্য চা বানাও। মাথা ব্যথা করছে। একটু টিপে দাও। পা টা মাসাজ করে দাও।
আপনি আরাম করে বসেন। আমি আপনাকে রোপ মাসাজ দেই।
এটা আবার কেমন? রফিক মনে মনে খুশী হয়। আহা কতদিন মাসাজ করানো হয়না।
নিতু তাকে ঘিরে ঘুরতে থাকে। কিছুক্ষণ পর রফিক আবিষ্কার করে সোফার মধ্যে তাকে নিতু দড়ি দিয়ে বেঁধেছে। এটাই কি রোপ মাসাজ? সে আবেশে চোখ বন্ধ করে। আড়চোখে দেখে নিতু বোরকা খুলছে।
সে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে
এই মাসাজ কি জামা কাপড় খুলতে হয় নাকি? সে চোখ বন্ধ করে রাখে।
টাকা পয়সা কই রাখছেন? নিতুর পুরুষালি কণ্ঠে রফিক চোখ খুলে। নিতু ছেলে হলো কিভাবে?
নিতু তুমি কি জেন্ডার চেঞ্জ করছো?
আমি আপনার শালী নিতু না। আমার নাম মতি চোর। আগে রাতের-বেলায় চুরি করতাম। এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিং এ এখন সন্ধ্যার সময় চুরি করি। রাত জাগার কষ্ট নাই।
কি বলতেছো?
জী স্যার। কথা বলে আমাকে ডিস্টার্ব দিয়েন না। তাহলে যাওয়ার সময় আপনার চেহারায় লিপস্টিক দিয়ে আঁকাআঁকি করে যাবো। তখন আবার ঝামেলায় পরবেন। এমনি আপনার চরিত্রে মহা সমস্যা আছে।
রফিককে যখন নীলা সে উদ্ধার করে তখন রফিকের অবস্থা গরমে কেরোসিন। এদিকে মতি চোর কি চুরি করে নিয়ে গিয়েছে আল্লাহ জানে।
একা থাকতে ভালো লাগছিলো না দেখে কি চোরকে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে এসেছো? নীলা জিজ্ঞেস করে।
তুমি না বললে তোমার কাজিন নিতু আসবে। তোমার ফোন পেয়েইতো দরজার সামনে গিয়ে দেখি নিতু বোরকা পরে দাড়িয়ে আছে।
নীলা রাগে গজগজ করতে থাকে।
আরে গাধা ফোনটাতো ধরবে। এটা বলার জন্যইতো ফোন দিয়েছিলাম যে আজকে নিতু আসবে না।