পৃথিবী প্রবল বেগে নিজ অক্ষের ওপর ঘুরছে। ঘুরছে সূর্যের কেন্দ্র করেও। ধরা যাক, একদিন হঠাৎ পৃথিবী তার ঘূর্ণন থামিয়ে দিল। আমরা জানি, পৃথিবী নিজ অক্ষে ঘুরছে এবং এই ঘূর্ণনের কারণে দিন ও রাতের সৃষ্টি হয়।
কিন্তু যদি এই ঘূর্ণন বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কী ঘটবে?
যদি পৃথিবী হঠাৎ থেমে যায়, তাহলে প্রথমেই ব্যাপক বিপর্যয় ঘটবে। পৃথিবী বর্তমানে ঘণ্টায় প্রায় ১,৬৭০ কিলোমিটার প্রতি গতিতে ঘুরছে। যদি এই গতি হঠাৎ শূন্য হয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীর পৃষ্ঠের সবকিছু—মানুষ, গাছপালা, বাড়ি-ঘর—সবকিছু প্রচণ্ড গতিতে উড়ে যাবে। মনে হবে, আমরা সবাই একটি দ্রুতগামী গাড়ি থেকে ছিটকে পড়ছি।
সমুদ্রের পানি প্রচণ্ড গতিতে মহাদেশগুলির দিকে ধেয়ে আসবে এবং এটি বিশাল সুনামি তৈরি করবে।
পৃথিবী থেমে গেলে দিন ও রাত আর ২৪ ঘণ্টায় শেষ হবে না। একদিকে দিনের আলো দীর্ঘ সময় ধরে থাকবে এবং অন্যদিকে দীর্ঘ রাত। যদি পৃথিবী স্থির হয়ে যায়, তাহলে একপাশে দিন ও অন্যপাশে রাত হবে।
ফলে দিনের দিকে তাপমাত্রা এত বেড়ে যাবে যে এটি বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে যাবে। আর রাতের দিকে তাপমাত্রা এমনভাবে কমে যাবে যে সবকিছু জমে বরফ হয়ে যাবে।
পৃথিবীর আবহাওয়ার বড় অংশ নির্ভর করে তার ঘূর্ণনের ওপর। ঘূর্ণন থেমে গেলে আবহাওয়ার গতিপথও অচল হয়ে যাবে। মেঘ এবং বাতাস স্থির হয়ে যাবে, ফলে যেসব অঞ্চল পানির অভাবে শুকিয়ে যাবে আর যেসব অঞ্চলে অতিরিক্ত পানি থাকবে, সেখানে বন্যা দেখা দেবে।
এতে করে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং মানুষ ও প্রাণী উভয়ই বিপদে পড়বে।
পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে এর চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়, যা আমাদের সৌর বায়ু এবং মহাজাগতিক রশ্মি থেকে রক্ষা করে। যদি পৃথিবী থেমে যায়, তাহলে এই চৌম্বক ক্ষেত্রও ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাবে এবং পৃথিবী মহাকাশের ক্ষতিকর বিকিরণ থেকে সুরক্ষা হারাবে। ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে এবং জীববৈচিত্র বিলুপ্তির দিকে ধাবিত হবে।
পৃথিবী থেমে গেলে এর কক্ষপথেও প্রভাব পড়তে পারে। পৃথিবী আর সূর্যের চারপাশে তার নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরতে সক্ষম হবে না। এতে হয়তো পৃথিবী সূর্যের খুব কাছে চলে আসতে পারে কিংবা অনেক দূরে চলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে, আমাদের গ্রহ হয় অতিরিক্ত গরম হয়ে যাবে, নয়তো এতটাই ঠান্ডা যে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে।
দিন ও রাতের দীর্ঘ সময়ের পরিবর্তনের কারণে মানুষ অভ্যস্ত জীবনযাত্রা থেকে ছিটকে পড়বে। অধিক তাপমাত্রা ও হিমশীতল আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে চলা অসম্ভব হয়ে উঠবে। প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত হলেও পৃথিবীর সব জীব একসঙ্গে এমন পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে না। খাদ্য সংকট, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সঙ্কটও তৈরি হবে।
প্রাণীরা দিন ও রাতের চক্র অনুযায়ী খাদ্য সংগ্রহ এবং প্রজনন করে। পৃথিবী থেমে গেলে এ চক্র নষ্ট হবে এবং তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেবে। ফলে অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। এছাড়া স্থলজ, জলজ, এবং উভচর প্রাণীর বাসস্থান এবং খাদ্য শৃঙ্খলও ধ্বংসের পথে চলে যাবে।
পৃথিবী থেমে গেলে এর প্রভাব এতটাই ভয়াবহ হবে যে মানুষের টিকে থাকা কল্পনারও বাইরে। দিন, রাত, আবহাওয়া, এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের মতো বিষয়গুলোর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেলে পৃথিবী জীবনের জন্য আর উপযুক্ত থাকবে না।