
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে আটক করা হয় মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলকে। তাঁকে প্রথমে হলের গেস্টরুমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ এবং হালকা মারধর করেন শিক্ষার্থীদের কয়েকজন। এরপর তাঁকে খাবার খেতে দেওয়া হয়। তারপর ফের গেস্টরুমে নিয়ে তাঁকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। গতকাল রাত ১২টার দিকে এসব ঘটনা ঘটে। এর আগে রাত ৮টার দিকে তাকে আটক করেন হলের শিক্ষার্থীরা।
নিহত তোফাজ্জলের বাড়ি বরিশালের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠাল তলি ইউনিয়নে। তাঁর বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। জানা গেছে, অল্প সময়ের ব্যবধানে মা, বাবা ও একমাত্র বড় ভাই হারিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তোফাজ্জল। ঘুরে বেড়াতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে হলের মাঠে শিক্ষার্থীদের মধ্যকার ক্রিকেট খেলা চলাকালীন ৬টা মোবাইল চুরি হয়ে যায়। পরবর্তীতে খেলা চলাকালীন ৮টার দিকে তোফাজ্জল হলে ঢুকলে তাঁকে আটক করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের ধারণা, তোফাজ্জলই মোবাইল চুরি করছে।
অনুসন্ধান ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, তোফাজ্জলকে সবচেয়ে বেশি মারধর করেছেন ছাত্রলীগের সদ্য পদত্যাগ করা উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল আহমেদ, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সুমন, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ফিরোজ, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের আব্দুস সামাদ, ফার্মেসি বিভাগের মোহাম্মদ ইয়ামুজ জামান এবং পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনিস্টিউটের মোত্তাকিন সাকিন। নির্যাতন করা শিক্ষার্থীদের সবাই ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থী।
হলের আবাসিক শিক্ষক, প্রক্টরিয়াল দল ও সিনিয়র শিক্ষার্থীরা বারবার অনুরোধ করলেও তোফাজ্জলকে ছাড়েনি অভিযুক্তরা। এমনকি সে মানসিক ভারসাম্যহীন জানার পরেও তাঁকে ছেড়ে দিয়ে অস্বীকৃতি জানায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা।
হলের প্রত্যক্ষদর্শী একজন শিক্ষার্থী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমি হল গ্রুপে ৮টার সময় দেখি হলে চোর ধরা পড়েছে। হলের গেস্ট রুমে, গিয়ে দেখি চোর বসা।…গেস্টরুমে তাঁকে বেশি মারা হয়নি। ওখানে হালকা মারার পরে ক্যান্টিনে নিয়ে আসে খাওয়ানোর জন্য। তারপর শুনি তাঁকে এক্সটেনশন বিল্ডিং এর গেস্ট রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ সেখানে রাতভর অমানুষিক নির্যাতন করে তোফাজ্জলকে মেরে ফেলা হয় বলে জানান ওই শিক্ষার্থী।