5.6 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

মীজান রহমানের লেখা থেকে-

মীজান রহমানের লেখা থেকে-
মীজান রহমানের লেখা থেকে

1. ‘যে বাংলাদেশের প্রাণের ভেতরে পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের মত মধ্যযুগীয় দেশগুলি ঠাঁই করে নিতে সক্ষম হয়েছে সে-বাংলাদেশ আমার নয়। যে-বাংলাদেশ আরবের তেল আর তংকার মোহে নিজেদের বাঙালিত্ব বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হয়েছে সে-বাংলাদেশকে আমি চিনি না। আমি একদিকে যেমন ওয়াশিংটন-মস্কো বা বেইজিংপন্থী হতে চাই না তেমনি আমি বেঁচে থাকতে কখনো কাবুল-ইসলামাবাদ বা রিয়াদপন্থী হব না। একমাত্র নামাজের সময় ছাড়া অন্য কোন কারণে মক্কামুখী হবার বাসনা পোষণ করব না। সারাজীবন আমি ঢাকাপন্থী ছিলাম, বাকি জীবনটাও যেন তাই থেকে যাই, বিধাতার কাছে শুধু এই প্রার্থনা’

নেতার অপেক্ষায় পৃঃ ৯৬ / লাল নদী / মীজান রহমান

- Advertisement -

2. ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্যে আমি লজ্জাবোধ করি না, তাঁর জনবাহুল্য আমাকে বিব্রত করে না, তাঁর উচ্ছৃঙ্খল রাজনীতি আমার মনকে তিক্ততায় ভরে দেয় না। বাংলাদেশ শুধু একটি বিপন্ন ভূখণ্ড নয় আমার কাছে, বাংলাদেশ একটি নিরাপদ আশ্র্যয়শিবির আমার প্রাণের আশ্রয়। যার মাটিকে ঘ্রাণ করে আমি শিশুর মত কাঁদতে পারি, বোকার মত হাসতে পারি। যার ছোঁয়া পেলে এই বৃদ্ধ বয়সেও আমার বুক কাঁপে ভীরু প্রেমিকের মত। বাংলাদেশ একটি জীবন্ত উষ্ণ শরীর।

নেতার অপেক্ষায় পৃঃ ৯৬ / লাল নদী / মীজান রহমান

3. আমি আওয়ামীলীগ করি না, বিএনপি করি না, জাপা করি না। জামাতের নাম শুনলেই আমার গায়রে লোম দাঁড়িয়ে যায়। আমার রাজনীতি, দলের রাজনীতি নয়। আমার রাজনীতি দেশের রাজনীতি। আমি দলের নেতাকে মানি না। আমি চাই দেশের নেতা। দেশের নেতাকে আমি কোথাও খুঁজে পেলাম না। যখন পাব তখন আমি সানন্দে তাঁর চরণ স্পর্শ করব।

4. “পেছনের সমস্ত সেতু পুড়িয়ে দিয়ে ঘুঁটি গাড়লাম এক বিদঘুটে শহরে যেখানে চাঁদের জোছনা নেই, নেই ধানের ক্ষেত, নেই বৈশাখ, নেই ভাদ্রের শূন্য হৃদয়। স্ত্রীপুত্রকন্যা নিয়ে নীড় বাঁধলাম যেখানে শুনি না ঝিঁঝিঁর কান্না, শুনি না পাখীর কাকলি, যেখানে গাঁয়ের বঁধুরা উলু দেয়না, তুলসীপাতার রক্তে ষোড়শীর হাত হয়না স্ফুলিঙ্গ, কৃষ্ণচূড়ার নীরব চিৎকারে ফাটে না চৈত্রের আকাশ। স্বর্ণ, বিত্ত আর মহা সাফল্যের মোহপাশে আবদ্ধ হয়ে আমি বিসর্জন দিলাম দেশকে। চিত্তকে দিলাম বলি। আমার কি কোন অধিকার আছে বাংলাদেশকে নিজের দেশ বলে ঘোষণা করার? আমার কি কোন অধিকার আছে ক্যানাডাকে নিজের দেশ বলে মনে করার? জীবনের শেষার্ধে দাঁড়িয়ে আজ আমার জবাব প্রস্তুত হয়ে গেছে দুটি প্রশ্নেরই – না, নেই। আপনার আছে কি? ভেবে দেখুন?”

আমি বাংলাদেশী না ক্যানাডিয়ান / মাসিক বাংলাদেশ (Ist year 7th issue, August 1991) মীজান রহমান (তখন লিখতেন মীজানুর রহমান)

5. “আজ বহু বছর পর আমার মনে আর সংশয় নেই। দ্বিধা আছে, দ্বন্দ্ব আছে, কিন্তু সন্দেহ নেই। আমার আর সন্দেহ নেই যে আমার মতো অগুনতি মেধাবী পথেঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে পৃথিবীর সর্বত্র। সন্দেহ নেই যে আমি দেবার নাম করে পাবার উল্লাসে চষে বেড়িয়েছি সারা দেশ। সন্দেহ নেই যে দেশ আমাকে হারায়নি, আমি হারিয়েছি দেশকে। প্রতীতি এসেছে মনে যে দেশ আমার দরিদ্র ছিল না কোনদিন, দরিদ্র ছিলাম আমি- ছিন্নবস্ত্রে নয়, স্বল্প আহার্যে নয়, দরিদ্র ছিলাম আমার ক্ষুদ্রমনে। মাঝে মাঝে মনে হয় যে দেশের পরম ভাগ্য যে আমি ফিরে যাইনি”।

আমি বাংলাদেশী না ক্যানাডিয়ান / মাসিক বাংলাদেশ (Ist year 7th issue, August 1991) মীজান রহমান (তখন লিখতেন মীজানুর রহমান)

6. আমরা ভাঙ্গতে ভালোবাসি। আমরা দালান বানাই বাসের জন্য নয় নয়, আমরা দালান বানাই আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিতে কেমন লাগে সেটা দেখার জন্য। আমরা দুর্গ বানাই শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য নয়, আমরা দুর্গ বানাই সুড়ংপথে কেমন করে পালানো যায় সেই মজা উপভোগ করার জন্য। আত্মরক্ষার কলাকৌশলে আমরা দক্ষ। আত্মসংক্রান্ত যে – কোন শিল্পে আমরা পরম পারদর্শী।

একুশের শপথ / মাসিক বাংলাদেশ February 1996 / মীজান রহমান

7. পৃথিবীতে কি আর কোন বস্তু আছে যা এমন করে প্রার্থনার বাণী নিয়ে যায় প্রভুর কাছে যেমন করে নেয় গানের সুর। এমন কি আরাধনা আছে কোন, যা অন্তর্যামীর অন্তরকে ছোঁবার চেষ্টা করে এত সজল কাতরতায়। সংসারের আর সব জিনিসের মতো গান আর বাদ্যও বিধাতারই সৃষ্টি। বরং বলব তাঁর সূক্ষ্মতম নান্দনিক সৃষ্টিগুলোর অন্যতম। সঙ্গীত এক জিনিস যার প্রতি মানুষ আর পশু দু’টোই প্রায় সমানভাবে আকৃষ্ট হয়। অথচ এই সঙ্গীতের প্রতি আমাদের ধর্মীয় সম্প্রদায়টির কেন যে এত অনীহা আর উপেক্ষা সেটা আমি কোনদিনই বুঝতে পারিনি।

কই গো তুমি / মীজান রহমান ২৩ আগস্ট ২০০২

8. “কানাডায় এসে যখন নতুন গাড়ি চালাতে শিখলাম তখন রাস্তায় কোন বুড়ো লোককে গাড়ি চালাতে দেখলে বিরক্ত হতাম। ঠাট্টা করে বলতাম, ‘দাদু, মোটরগাড়ি না কিনে গরুর গাড়ি কিনলে না কেন’। ভাবতাম, পঁয়ষট্টি বছরের পর কারও লাইসেন্স থাকা উচিৎ নয়। এখন অবশ্য তেমনটি ভাবি না। এখন বুঝতে পারি বুড়োরা কেন আস্তে গাড়ি চালায়। শেষ দিনটি যতই ঘনিয়ে আসে ততই মানুষ ইতস্তত করে এগুতে, পাছে না পরবর্তী পদক্ষেপটাই হয়ে দাঁড়ায় শেষ পদক্ষেপ”।

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles