2.9 C
Toronto
রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫

রাত বিরাতে

রাত বিরাতে - the Bengali Times
রাত বিরাতে

৫ অক্টোবর ২০২৪ সাল। আমাদের বরেণ্য কবি আমার প্রিয়জন আসাদ চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। কেন যেন আমার প্রায় মনে হয়না তিনি নেই! মনে হয় টরন্টোর মেইনস্ট্রিট সাবওয়ে স্টেশান কোণে ভাই ভাই হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকা আকাশ ছোয়া গুচ্ছ বিল্ডিং টাওয়ার গুলোর একটার সাত তলায় উঠে কবিকন্যা প্রিয় শাওলীর ঘরে ঢুকলেইতো কবি আসাদ চৌধুরী তার পাকাপোক্ত আসন রিভোলভিং চেয়ারে বসে আছেন দেখবো। কিংবা আর কিছুটা দূরে ৪১৬ হাইওয়ে ধরে হুহু করে বাতাস কেটে পূবে ওশোয়া সিটি গেলে কবিপুত্র আসিফের বাড়িতে বিছানায় পিঠে ক’টা বালিশ দিয়ে বসে আছেন দেখবো আসাদ ভাইকে। দেখলেই ওনার ভূবন ভাসানো উজ্জ্বল হাসি মেখে বলবেন – আরে ইকবাল!

এনারা হলেন জাগ্রত প্রাণ,এনাদের মৃত্যুতে শেষ নেই। শুধু জাগতিক জামাটি খুলে মহাজগতে পদার্পন হয় মৃত্যুতে। যেমন ঢাকায় এখনো শ্যামলী মোড় ক্রস করতে গেলে মনে হয় –একটু ডানের রাস্তায় ঢুকে পড়ি। কবি শামসুর রাহমানের বাড়ির দরজায় গিয়ে বেল বাজাই। দরজা খুলতেই দেখবো কবি রাহমান ভাই চোখে ড্রপ দেয়ার চেষ্টা করছেন। দেখললেই বলবেন –আরে ইকবাল, ড্রপটা একটু দিয়ে দাওতো। ঢাকার লেডিস ক্লাবের কাছে ডানের গলিতে ঢুকে পড়লেই ‘ট্রাম্প’ নামে ফ্ল্যাট বাড়িতে গিয়ে উপরে উঠে দরজায় টোকা দিলেই শুনবো আমার গুরুদেব রাহাত খানের কন্ঠ – এতোদিনে মনে পড়লো ইকবাল! এনারা মহাজগতের প্রাণ আমাদের মত সাধারণ মনুষের মত মৃত্যুতেই সব শেষ নয় তাদের।

- Advertisement -

বাংলা ভিশন টিভি চ্যানেলের ‘রাাত বিরাতে’ অনুষ্ঠানটি প্রায় দেড়যুগ পুরোনো। আগে উপস্থাপক ছিলেন কন্ঠশিল্পী শাহেদ। পিঠে খাপে পোরা গীটার আর বিশেষ সব অতিথিদের নিয়ে রাত বিরেতে ঢাকার পথে হেঁটে হেঁটে কথা বলা। শাহেদও আমাকে অতিথি হিসেবে ডেকে ছিলো। আসাদ ভাই রাত বিরাতের উপস্থাপনা এক বড় ব্যাপার। তার অতিথিরাও হবেন সব হয়তো আকাশ ছোয়া মানুষজন। লোভ হচ্ছিলো আহারে আমাকে যদি ডাকতেন তাহলে স্মৃতি থাকতো আসাদ ভাইয়ের সাথে ঘোরাঘুরি। কি অবাক কান্ড বাংলা ভিশনের প্রযোজক প্রিয় কাওনাইন সৌরভের ফোন পেয়ে-ইকবাল ভাই  দেশে আছেন? কবি আসাদ চৌধুরী আপনাকে ‘রাত বিরাতে’ চান। আর একটি অবাক ব্যাপার ৭০ দশকের শুরুতে বাংলা একাডেমিতে আসাদ ভাইয়ের সাথে আলাপ। তিনি পরের দুই দশক তুমি করেই ডাকতেন। কানাডার মাটিতে দেখা হতে দেখি আমাকে আপনি করে বলতে শুরু করলেন। কেন কে জানে।

২০০৭ নাকি ২০০৮ এলেন তিনি প্রথম এলেন টরন্টোতে। এখানকার বাংলাদেশী কমিউনিটিতে উৎসব শুরু হলো। এত বড় মাপের কবি সর্বস্তরে জনপ্রিয় এমন কোনো ব্যক্তিত্ব এর আগে তারা শহরে সহবাসী হিসেবে পায়নি। সবে তখন টরন্টোর ডেনফফোর্থে ‘বাংলাদেশ সেন্টার’ হয়েছে। সেখানেই তাঁর নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হলো। তখনো এই খাইসটা ডিজিটাল ব্যাকড্রপ ব্যানারের যুগ আসেনি। আমি বড় সাদা কাগজে মোটা কালো মার্কারে কবি আসাদ চৌধুরীর মুখ এঁকে দিলাম।। সব অতিথি সই করলো তাতে। কবিপুত্র আসিফ বড় যত্নে রেখে ছিলো সেটি। এতোই যত্নে যে একবার বাড়িতে ভয়াবহ আগুন লাগায় ঝুকি নিয়ে সে সবার আগে ছবির ফ্রেমটি দেয়াল থেকে ছিটকে নিয়ে বেরিয়ে এসে ছিলো। ধ্যাৎ! আমার এই এক বদ অভ্য্যাস প্যাঁচাল শুরু করলে শেষ হবার নাম নাাই। আগামীকাল ৬ অক্টোবর আবার সেই টরন্টোর বাংলাদেশ সেন্টারে আসাদ ভাইয়ের স্মরণসভা আছে কবিপুত্রী আমার প্রিয় শাওলি বাবা নিয়ে কিছু বলতে অনুরোধ করেছে। সব কথা শেষ হয়ে গেলেতো মুস্কিল!

 

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles