সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ এবং ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে অতিরিক্ত দোকান তুলে দিয়ে ১১ জনকে ব্যবসা করার অনুমোদন দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি দোকান বরাদ্দ পান প্রিয়া খান। তিনি হিজড়া। প্রিয়া আপা নামে তিনি ক্যাম্পাসে পরিচিত হয়ে উঠছেন।
দোকান পেয়ে ঢাবি প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞ প্রিয়া খান। ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়ে বাকি জীবন কাটাতে চান। দোকান চালাতে নদী নামের আরেকজন হিজড়াকে সঙ্গে নিয়েছেন। দুজন কর্মচারীও রেখেছেন, যাঁরা তাঁকে চা দোকানদারিও শেখাচ্ছেন।
প্রিয়া খান বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে আমি একটি দোকানের বরাদ্দ পেতে প্রশাসনের কাছে আবেদন করে আসছিলাম। কিন্তু নানা কারণে বরাদ্দ পাইনি। এবার একজন সাংবাদিক ভাইয়ের সহযোগিতায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর দোকানের জন্য ফের আবেদন করি। প্রক্টর স্যারকে বলেছিলাম—স্যার, হাত পাততে চাই না।
হাত পাততে আমার লজ্জা লাগে। একটা দোকান পেলেই আর হাত পাতব না। ব্যবসা করে খাব।’
স্বাবলম্বী হতে নিত্য লড়াই করা প্রিয়া বলেন, ‘দুটি দোকান চেয়েছিলাম। পেয়েছি একটি।
প্রশাসন সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে ব্যবসা করার পরামর্শ দিয়েছে। ভালো খাবার খাওয়াতে বলেছে। আমার দোকানের বাঁয়ে-ডানে পাঁচটি করে দোকান থাকবে। আমার দোকান মাঝখানে। একজন হিজড়াকে স্বাবলম্বী হতে ব্যবসা করার ব্যবস্থা করে দিয়ে তার ইতিবাচক প্রভাব সমাজে ফেলতে চাইছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’
নতুন এই ব্যবসা শুরু করা নতুন জন্মের মতো উল্লেখ করে প্রিয়া খান বলেন, ‘নিজের জীবন বাঁচাতে নতুন একটি পথ বেছে নিয়েছি। তবে কাজটা একটু শিখে নিতে হবে।’
ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ঢাকা মেডিক্যালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন। মুক্তা, নদী হিজড়া, হাবিবা হিজড়া, মুগ্ধ, বৈশাখীও তাঁর সহযোদ্ধা হিসেবে লড়েছেন। তাঁরা সবাই হিজড়া। ৭৩০ ব্যাগ রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন বলে দাবি প্রিয়ার। পাশাপাশি তিন লাখ টাকা উঠিয়ে তা মরদেহ স্থানান্তর, ওষুধ কেনা, বেওয়ারিশ লাশের পেছনে নাকি ব্যয় করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান শরীফ বলেন, ‘আমি এই ইতিবাচকতাকে সাধুবাদ জানাই। সমাজের একটি প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, হিজড়া জনগোষ্ঠী হাত পেতে টাকা চাইবে। এই ধারণা পাল্টে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এগিয়ে এসেছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় তাদের টাকা ওঠানোকে অনেকে বলেন চাঁদাবাজি, অনেকে বলেন ভিক্ষাবৃত্তি। আমাদের মনে হয়েছে, তাদের যদি কোনো একটি কাজের সুযোগ করে দিতে পারি তাহলে তাদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হবে, তারাও স্বাবলম্বী হতে পারবে।