5.2 C
Toronto
রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫

কন্যার রান্না মিশন!

কন্যার রান্না মিশন! - the Bengali Times
কন্যার রান্না মিশন

রাতে মেয়েটাকে বললাম, আজকে কিন্তু তুই আমার খাবার বানাবি!
– কেন বাবা?
– প্র‍্যাক্টিস করবি না? আমি বুড়া হয়ে গেলে খাওয়াবি না?
– আমি যে পারি না?
– পারবি। যদি না বানাস, আমি রাতে না খেয়ে থাকবো
– ঠিক আছে, খায়ো না।
.
রাত সাড়ে ন’টায় গিন্নি রান্নাঘর থেকে জানতে চাইলো- চাঁন্দু, বাচ্চাদের জন্য র‍্যপ বানাচ্ছি, তোমার জন্য বানাবো?
– না। দখিনার হাতে বানানোটা খাবো।
কন্যার রান্না মিশন! - the Bengali Times
দখিনা বলল- আব্বু, আমি না বানাই?
– ওকে, এক রাত না খেলে কিচ্ছু হবে না। ডিম পোঁচ করতে পারিস?
– হ্যা
– কফি বানাতে পারিস?
– পারি
– পিনাট বাটার স্যান্ডউইচ?
– পারি!
– তুই দেখি অনেক কিছু পারিস!
– কিন্তু তুমি কী চাচ্ছো, সেটা তো জানি না
– সম্পুর্ন তোর ওপর। যা দিবি তাই খাবো
– তোমার যদি ভালো না লাগে?
– কোনো ব্যাপার না।
.
সে কিছুক্ষণ রান্নাঘরে হাঁটাহাঁটি করে এসে আমার কোলে বসে গলা জড়িয়ে ধরে আবদার কন্ঠে বলল- প্লিজ আব্বু, ওরকম করে না। তোমার খিদে লাগেনি?
– খুব লাগছে রে। তবে ব্যাপার না, বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ না খেয়ে ঘুমাতে যায়
– তুমি শিওর আমি না দিলে খাবা না?
– ১০০℅ শিওর!
– তোমার কোন প্রিফারেন্স আছে?
– না, বলছি তো..
কন্যার রান্না মিশন! - the Bengali Times
রাত সাড়ে দশটা।
টিভি দেখছিলাম। গিন্নি এসে বলল, তোমার জন্য রুটি ভাজি নিয়ে আসতেছি
– না!
– সে তো দিবে না; উপরে গিয়ে বন্ধুদের সাথ চ্যাট করছে। তোমার তো খিদে লাগছে
– লাগুক!
– আমি কিন্তু আনতেছি!
– খোদার কসম, ও না দিলে আমি খাবোই না!
আমার কথা শুনে সে কিছুক্ষণ বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকে ডাক দিয়ে বলল- এই দখিনা.. রান্নাঘরে আয়, তোর বাপের খাবার বানা। আমি হেল্প করতেছি
– তুমি হেল্প করলে, এমন কি বুদ্ধি দিলেও আমি ওই খাবার খাবো না। প্রমিজ!
– এসব কোন ধরনের ঢং তোমার? বাচ্চাটাকে শুধু শুধু টেনশনে রাখতেছো!
.
বিত্ত ফাজিলটা বত্রিশ পাটি বের করে এসে বলল- আব্বু কেক আছে, খাবা!
– না
– ইটস উইয়ার্ড আব্বু! বলে আবার এক গাল হাসি দিয়ে চলে গেল। সে মনে হয় খুব এনজয় করছে।
.
রাত প্রায় পৌনে এগারোটা।
গিন্নি একটা পাউরুটি টোস্ট করে, পিনাট বাটার মাখিয়ে সোফায় বসে পা নাচাতে নাচাতে কামড় দেবার সময় আড়চোখে আমাকে দেখছিলো আর কৌতুক মাখা হাসি মুখে টিভি দেখছিল। যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে- মশকরা করার জায়গা পায় না…
হঠাৎ মেয়েটা উপরে সিঁড়ির কাছে এসে চিৎকার দিয়ে জানতে চাইলো- মা, আব্বু খাইছে?
এখনো খাইনি শুনে নিচে নেমে কাছে এসে ‘চু চু’ শব্দে আফসোস করে, আমার গালে চুমু খেয়ে বলল- ইশ! বাবুটার কতো কষ্ট!
সে মিনিট দশেক ধরে রান্নাঘরে খুটখাট করলো। দুবার ফ্রীজ খুলল। তারপর মাইক্রোওয়েভ চালানোর আওয়াজ পেয়ে আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম।
.
সে হাতে করে একটা চিকেন স্যান্ডউইচ [চিকেন কিমা আর মেয়োনেজ দেয়া দুই পাউরুটির মধ্যে। ফ্রীজে রাখা রান্না কিমা দিয়ে বানিয়েছে] আর এক কাপ গরম দুধ এনে সামনে রেখে বলল, হবে?
– অফকোর্স!
আমি মহা আনন্দে মেয়ের হাতে বানানো জীবনের প্রথম এক বেলার খাবার খেতে থাকি।
খাওয়া শেষ হলে সে মজা করে গ্রাম্য ভাষায় ঠিক অবিকল আমার মতো করে বলল- “তোমার ফরানডা বাচঁলো”, তাই না আব্বু?
আমরা হো হো করে হেসে উঠি।

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles