0.2 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

গানটি সবসময় আমার বাবাকে মনে করিয়ে দেয়

গানটি সবসময় আমার বাবাকে মনে করিয়ে দেয়
গানটি সবসময় আমার বাবাকে মনে করিয়ে দেয়

যার নেই সেই ভালো বোঝে, না থাকার ব্যথা।

“আমার জন্ম হয়েছে নেপালে, আমি একজন তিব্বেতান কিন্তু আমি জীবনে আমার দেশ দেখি নাই!!!”

- Advertisement -

আজকে আমাদের অফিসের AGM অর্থ্যাৎ বাৎসরিক জেনারেল মিটিং ছিল। এবং আজকেই এখানে আমার দেখতে দেখতে ১৫টি বছর কেটে গেলো। এখানে এক রকম stuck হয়েই গেছি। হয়তো এখানেই শেষ বছরগুলি কেটে যাবে।

মাত্র ৭০ জন স্টাফ থেকে এখন ৪০০ উপরে স্টাফ। ছোট একটি পরিবার থেকে বিশাল একটা এক্সটেন্ডেড পরিবার হয়েছে। হাঁ, আমি পরিবারিই বলি কারণ এখানে প্রত্যেকে প্রত্যেককে পরিবারের একজন সদস্য হিসাবে গণ্য করে। এরকম না হলে কাজ করে মনে শান্তি পাওয়া যায় না।

যাহোক, আমার এই ১৫ বছর পূর্তি এই লেখার মুখ্য উদ্দেশ নয়।
উদ্দেশ্য হলো সাথে ভিডিওটি যে ছেলেটি গান গেয়েছে তার একটি কথা নিয়ে। সে আমাদের অফিসের কোনো এক প্রোগ্রামে চাকরি করে। সুন্দর গান গায়। আমাদের প্রতি বছরের বাৎসরিক মিটিংয়ের ইতি টানা হয় ওর গান দিয়ে।

এবার সে তার পরিচয় দিতে গিয়ে তার নাম বলার পরে বলে, “আমার জন্ম হয়েছে নেপালে, আমি একজন তিব্বেতান কিন্তু আমি জীবনে আমার দেশ দেখি নাই!!”
তার পর সে গান শুরু করে। একটি বিখ্যাত গান, Ben E King এর Stand by me. গানটি সবসময় আমার বাবাকে মনে করিয়ে দেয়। এই গানের কথার মত মনে হত উনি যদি পাশে থাকেন তাহলে কোনো কিছুতে ভয় পাবো না, উনি এখন নেই তবুও ধরে নেই উনার আত্মা আছেন আসে পাশে, just standing by me .
গানটির প্রথম কলি।
“When the night has come
And the land is dark
And the moon is the only light we’ll see
No I won’t be afraid
Oh, I won’t be afraid”
Just as long as you stand, stand by me…

“যখন রাত নামে, সারা জমিনে অন্ধকার নামে, শুধুমাত্র চাঁদের আলো ছাড়া কিছুই থাকে না, তখনো আমি ভয় পাবো না, যদি তুমি থাকো আমার পাশে । ”
“I was born in Nepal, I am Tibetan but I have never seen my country” ছেলেটির এই বাক্যটি কেন যেন আমার রিদয়ে গিয়ে লাগে। আমাদের দেশ আছে তাই “তোমার দেশ কোথায়” প্রশ্নের উত্তর দিতে আমাদেরকে ভাবতে হয় না। কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন যদি আপনাকে বলতে হতো “I was born in India/Pakistan, I am a Bangladeshi but I have never seen my country”. কথাটি ভাবতেই Pathetic লাগে।

আপনারা অনেকে জানেন প্রায় ৫০/৬০ বছর আগে চাইনিজ সরকার অতর্কিত তিব্বত আক্রমণ করে এবং তিব্বতকে তাদের করে নেয়। এর পর তাদের ধর্মগুরু দালাইলামা সহ অসংখ তিব্বেতান ইন্ডিয়াতে এবং পরে নেপলা আশ্রয় নেয়।
ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট ওদের জন্ম ওখানে হলেও কোনো নাগরিকত্ব দেয় না, দেয় শুধু ট্রাভেল ডকুমেন্ট, তার মানে ওদের কোনো দেশ থাকে না।

আমার একজন প্রাক্তন প্লেসমেন্ট ছাত্রী ছিলেন তিব্বেতান। তার স্বামী ইন্ডিয়ার খুব ভালো ডাক্তার ছিল, তাদের মোটামুটি ভালো চাকরি ছিল, ওখানে আত্মীয় ছিল তারপরেও সব ছেড়ে কানাডা চলে আসে, শুধু মাত্র একটি দেশ পাওয়ার জন্য, কারণ তারা কোনোদিন ইন্ডিয়ার নাগরিক হবে না, আর তিব্বতকেতো চায়না খেয়েই ফেলেছে, সাথে সাথে ওদের শিল্প, সংস্কৃতি, ধর্ম সব খেয়ে নিয়েছে। তাই সে আমাকে বলেছিলো, “মুকুল অন্তত শেষ বয়োসে আমাদের অন্তত একটা পাসপোর্ট থাকবে এবং আমরা বলতে পারবো “আমরা কানাডিয়ান”. সে জন্যেই আসা।

মনে অনেক অভিমান বা আক্ষেপ থেকে অনেক সময় জন্ম দেশ নিয়ে কোনো আশা করতে ইচ্ছে হয় না, অনেক সময়ে যেতেও ইচ্ছা হয় না, কিন্তু যখন মনে পড়ে আমার বাপের মতো হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার কথা, হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগের কথা এবং তাদের চেষ্টা, নিদারুন কষ্ট এবং আত্মত্যাগের মাধ্যমে পাওয়া দেশটির কথা তখন গর্ব বোধ হয়।

এটা শত ভাগ নিশ্চিত করে বলা যায় যে এখন যদি আমরা পাকিস্তান অথবা ইন্ডিয়ার মধ্যে থাকতাম তাহলে আপনাদের অবস্থা কি হতো তা জানি না, তবে আমি বা আমার পরিবারের অবস্থান বর্তমান অবস্থার থেকে ঢের নিচে বা খারাপ থাকতো সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী সমস্ত মানুষদের জন্য আজীবনের শ্রদ্ধা। রাজনৈতিক কারণে একজন আর একজনকে এদিকে ওদিক ঠেলাঠেলি করেন, একজন পক্ষে, আর একজনকে বিপক্ষে বলেন, একাই সমস্ত কৃতিত্ব নিতে চান ইত্যাদি করেন কিন্তু কখনো মুক্তিযদ্ধকে এবং মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অসম্মান করবেন না, এবং এটা কখনোই ভাবেন না যে আপনি একাই যুদ্ধ করেছেন, শত শত বা হাজার হাজার প্রমান আছে যে সে সময় দলমত, জাত, ধর্ম, ছেলেমেয়ে, ছোট বড়ো সবাই যার যার অবস্থান থেকে যুদ্ধ করেছে। হয়তো কিছুসংখ্যক লোক করেননি বা বিরোধিতা করেছেন। সবারই সম্মিলিত চেষ্টা এবং আত্মত্যাগের কারণে আমাদের কে ওই ছেলেটির মত বলতে হয় না যে আমার দেশ কোনদিন দেখি নাই , বরং আমাদের একটি পাসপোর্ট আছে, আমাদের একটি দেশ আছে এবং সে দেশকে আমরা দেখতে পারি এবং দেখেছি।

টরন্টো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles