
রাত বারোটা বেজে কয়েক মিনিট। কিছুক্ষণ আগেই ক্যালেন্ডারের পাতায় ফুটে উঠলো একটি নতুন দিন – ১০ই এপ্রিল। রোজী আর আমি একই কামরায় পাশাপাশি। চোখ জুড়ে ঘুম ছিল অথচ ঘুমের সাথে আলিঙ্গন হচ্ছিল না। কয়েকদিন থেকে যা ধারণা করে আসছিলাম তা বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করল। ওর প্রসব বেদনা শুরু হলো। এই প্রথম নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি আমি। রাত এগুতে লাগলো… বেদনা ক্রমশ: গভীর হতে শুরু করলো অথচ বুঝে উঠতে পারছিলাম না করণীয় কী। এটাই কি প্রকৃত মুহূর্ত নাকি শুধুই অস্বস্তি ও অস্থিরতা। হঠাৎ রোজী আমার সার্টের কোণায় আচমকা টান দিল। ফ্ল্যাশব্যাক হয়ে ধরা পড়ল সিনেমার দৃশ্য। হাসপাতালের ভেঁপু বাজানো গাড়ির আগের দৃশ্য এই জামা ধরে টান দেওয়া। একবিন্দু দেরি না করে শ্বশুর শাশুড়িকে নিদ্রা ত্যাগ করালাম এবং তাদের পরামর্শে সঠিক পদক্ষেপ নিলাম। প্রসঙ্গত বলে রাখি, এক সপ্তাহ আগে রোজীকে নিয়ে শ্বশুর-শাশুড়ির বাড়িতে এসেছি। প্রথম সন্তান হয় মায়ের বাড়িতে এমন একটি রীতি মেনেই এ বাড়িতে আসা।
সিনেমা নয়, এবার ভেঁপু বাজিয়ে আমাদের এম্বুলেন্স চলল ডাক্তার সুফিয়ার ২ নম্বর রোডের ক্লিনিকের দিকে। ভোরের পথঘাট এমনিতেই ফাঁকা। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে দেখলাম বেদনা ও তীব্র ধকল লুকাতে সে ব্যর্থ হয়েছে। চোখমুখ ওর ফুলে গেছে। ডাক্তার সুফিয়া কিছুক্ষণ চেষ্টা করে বললেন ‘হবে না। স্বাভাবিক ডেলিভারি হবে না। এখুনি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আমি আকাশ থেকে পরলাম। গেল সপ্তাহেও ওনাকে দেখিয়ে গেলাম কই এমন কিছু তো বলেন নি। আবার নতুন করে এম্বুলেন্স ডাকা হলো। ডাক্তার সুফিয়া মিটফোর্ড হাসপাতালের সাথে সংশ্লিষ্ট অথচ সেখানকার গাইনী ডিপার্টমেন্টে এক পেশেন্টের টিটেনাস ধরা পড়ায় নতুন রুগী নেওয়া বন্ধ। হোলি ফ্যামিলিতে নার্সদের হরতাল। এম্বুলেন্স গিয়ে থামল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে…
অপারেশন থিয়েটারের বাইরে একটি ঘড়ি ঝুলছিল। সেটির দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম অপেক্ষা এত বেশি দীর্ঘ হয় কেন?। আমার ছোট বোনের নামও রোজী যাকে তার ভাবীর সাথে ওটির ভেতরে পাঠাতে পেরেছিলাম। কিছুক্ষণ পর চোখে পানি আর মুখে হাসি নিয়ে দৌড়ে এসে বললো, ‘দাদা ছেলে হয়েছে’। ঘড়িতে তখন দুপুর ২টা বেজে ২০ মিনিট….. (লেখাটি অনেক দীর্ঘ)।
অস্ত্রোপচার করেন – ডা. মমতাজ
সহকারী – ডা. দিল তাহের
আয়া – নাসিমা বেগম
ইউনিট – মেটারনিটি ২
ওজন – ৮ পাউন্ড
আমাদের প্রথম সন্তান জন্ম নেবার সময় হাসপাতালে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন: নব জাতকের দাদা, দাদী, নানী, রতন নানা, রোজী ফুঁপি, বড় খালা (শেফালী), মেঝ খালা (ডলি), মেঝ খালু (হাবিব), রোজী ফুঁপির শাশুড়ি ও তার বড় যা (আরিফের মা)
নবজাতকের নাম! প্রথমে রোদন, পরে এক এক করে কৃষাণ, ফসল, কিন্তু শেষপর্যন্ত – আদর।
স্কারবোরো, কানাডা